হলুদ দেওয়া দুধ। উত্তর থেকে দক্ষিণ, ভারতের সর্বপ্রান্তেই এই পানীয়ের সুখ্যাতি রয়েছে। প্রতি ঋতু পরিবর্তনেই স্বাস্থ্যের নানাবিধ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই টোটকা প্রাচীনকাল থেকে প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু কখন, কী ভাবে এই দুধ পান করা উচিত জানেন?
উৎসবের মরসুম এখনও শেষ হয়নি। তার উপরে কালীপুজো আর দিন কয়েক মাত্র বাকি। তার আগে ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে ওজন কমানো, অথবা শরীরে শক্তি বৃদ্ধির জন্য এই টোটকায় ভরসা রাখতে পারেন।
কাশি হোক বা সর্দি, জ্বর হোক বা পেট খারাপ কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতেও হলুদ দেওয়া দুধ পান করতে পারেন। ভারতে মায়েরা তাঁদের সন্তানকে এক কাপ হালকা গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে খাওয়ান। তবে কেবল শিশুদের জন্য নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও এই টোটকা খুবই কার্যকর।
হলুদ এবং দুধের সহজাত আয়ুর্বেদিক গুণাবলির কারণেই এই হলুদ-দুধ কোনও ‘সুপারফুড’-এর থেকে কম নয়। ভারতীয় রান্নাঘরে হলুদ অপরিহার্য বলেই মনে করা হয়। কেবল রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নয়, সুস্বাস্থ্যের জন্যেও এই পানীয় খুব উপকারী।
শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগের উপশম, ক্ষত নিরাময় এবং পুরুষদের শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খুবই দরকার এই হলুদ-দুধ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যানুসারে, ২০১৬ সালে ১.৬ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ডায়াবেটিসে।
কিন্তু ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগও এই হলুদ-দুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। ওষুধ ছাড়াও ঘরোয়া নিয়মে। সুশৃঙ্খল ডায়েট, নিয়মিত পরীক্ষানিরীক্ষা এবং ব্যায়াম করলেই বিপদমুক্ত হতে পারেন ডায়াবেটিকরা।
হলুদের মধ্যে গুণের যে সম্ভার রয়েছে, তা অন্য সমস্ত মশলাকে দশ গোল দিতে পারে। কারণ এর মধ্যে ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে।
তা ছাড়াও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে হলুদে। যা শরীরে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে। রক্ত পরিষ্কার করে, ত্বককে উজ্জ্বল করতেও হলুদ কার্যকরী। ত্বকের সংক্রমণ এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধ করতেও সক্ষম।
আমেরিকান জার্নাল অফ জ়েরিয়াট্রিক সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, হলুদ স্মৃতিশক্তি এবং মেজাজ উন্নত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারি স্মল বলেন, ‘‘কারকিউমিন কী ভাবে প্রভাব ফেলে, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। কিন্তু যেহেতু মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ কমানোর ক্ষমতা রাখে, তাই যা স্মৃতিভ্রমের মতো রোগ এবং অবসাদ থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রতিদিন হলুদ মেশানো দুধ খেলে রাতে ভাল ঘুম হয়।’’
দুধ ক্যালসিয়ামের একটি প্রাকৃতিক উৎস এবং হলুদের সঙ্গে মেশানো হলে গোটা শরীরেরই উপকার হয়। যাদের গাঁটে এবং হাড়ের ব্যথার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য এই দুধ উপকারী। এমনকি তাৎক্ষণিক উপশমও পেতে পারেন।
কেবল প্রতি দিন এক গ্লাস গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে খেতে হবে। গাঁটে ব্যথা, আর্থ্রাইটিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
হলুদ, যখন স্কিমড মিল্ক বা কম চর্বিযুক্ত দুধের সঙ্গে মেশানো হয়, এটি গ্লুকোজ়, লিভারের চর্বি, কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে ফ্যাট টিস্যুর ঘনত্ব কমিয়ে দেয়।
সেই ধরনের কোষের বিকাশকের গতিও কমিয়ে দিতে পারে। শরীরের চর্বি গলানোর প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে। ফলে হলুদ-দুধ ওজন কমাতেও সাহায্য করে কারণ এতে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।