এ বার ভাইফোঁটা। আক্ষরিকভাবেই ভাইদের সামনে এক প্লেট মিষ্টির সঙ্গে নোনতা খাবার সাজিয়ে ফোঁটা দেয় তাদের প্রিয় বোনেরা। আর সেই খাদ্য তালিকায় কচুরি বেশ দমদার।
আজকালকার আধুনিক ভাই-বোনেরা বার্গার, পিৎজা, স্যান্ডুইচ, মোমো, প্যাটিস, পেস্ট্রি যতই সাঁটাক না কেন, কচুরির প্রতি কদর অম্লান। ভাই ফোঁটার আগে কলকাতা জুড়ে এমনই সেরা ১৫টা কচুরি দোকানের সন্ধান এই লেখায়।
আগে কেবল মিষ্টির দোকানে কচুরি বিক্রি হত। এখন কচুরি 'স্ট্রিট ফুড' ওরফে রাস্তার উপর মেলা খাদ্য তালিকায় ঢুকে গিয়েছে। এমনকি পকেটে টান চলা অবস্থাতেও পেটে ছুঁচোর ডাক দিলে ৮-১০ টাকায় এক জোড়া কচুরি আর তরকারি অনেক মানুষের কাছে এখনও 'লাইফ সেভার' অর্থাৎ এক জীবনদায়ী খাবার!
শোনা যায়, দ্রাবিড়ীয় ভাষায় 'কচ্ছপুরি' থেকে কচুরি শব্দের উৎপত্তি। কচুরি মানেই তার ভিতর পুর থাকবে। সে জন্য নাকি কচুরির পূর্বপুরুষ 'পুরি' নামে পরিচিত। ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন পুর ভরে ভাজা হয় কচুরি। নামও ভিন্ন। ছোলার ডালের পুরের কচুরি হল ডালপুরি।
হিং-পেঁয়াজ-শুকনো লঙ্কা ভাজার পুরের কচুরিকে অনেক জায়গায় বলে কচৌরি। মাছের পুর ভরা কচুরিকে যেমন মাছের কচুরি বলা হয়, ছোলার ডালের মিষ্টি মিষ্টি পুর ভরা কচুরির নাম আবার রাধাবল্লভভি। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা, শহর জোড়া এই দোকানগুলির অনেক ক'টায় প্রায় সব ধরনের কচুরি পাওয়া যায় সকাল-বিকেল।
১. পটলার দোকান - উত্তর কলকাতার ১০০ বছরের পুরনো কচুরির দোকান। এখানে শাল পাতায় কচুরি আর খোসা শুদ্ধু আলুর তরকারি খেতে যেন অমৃত লাগে। কোথায় - বাগবাজার স্ট্রিটে ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের বিপরীতে। দোকান খোলা - সকাল ৬-১১টা ও বিকেল ৫-১০টা। দাম - এক পিস ৪ টাকা থেকে শুরু।
২. হরিদাস মোদকের দোকান - এখানে স্রেফ সাদা লুচি বিক্রি হয়ে আসছে গত আড়াইশো বছর ধরে! এদের লুচি-ছোলার ভাল একবার খেলে বারবার ছুটে আসে সাত থেকে সত্তর সবাই। কোথায় - শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে। দোকান খোলা - সকাল ৬-১০টা ও বিকেল ৪-৮টা। দাম - এক পিস ৫ টাকা থেকে শুরু।
৩. গদার কচুরি - এদের দোকানের গরম গরম ফুলকো কচুরির সঙ্গে কুমড়ো, আলু ইত্যাদি সব সবজির খোসা শুদ্ধু যে একখানা তরকারি দেওয়া হয়, তাতে যে কী অমৃত লুকিয়ে আছে ভগবানই জানেন! কোথায়- হাতিবাগান- শোভাবাজারের মধ্যবর্তী গোয়াবাগানে। দোকান খোলা - সকাল ১০টা-রাত ৯টা। দাম - এক পিস ৬ টাকা।
৪. গীতিকা - এই দোকানে একটু ছোট ছোট কচুরি, ভিতরে ঝুরঝুরে ডালের পুর ভরা, লোকজনেরা নিমেষে উধাও করে দেয় খেয়ে। সঙ্গে এখানে বিশেষত্ব ঝোল ঝোল আলুর তরকারি। কোথায় - মানিকতলায় সুকিয়া স্ট্রিটে ঢুকে বাঁদিকে। দোকান খোলা - সকাল ১০টা-রাত ৯টা। দাম - এক পিস ৪-৫ টাকা।
৫. নন্দলাল সুইটস - 'গীতিকা'র উল্টোদিকের এই মিষ্টির দোকানের কচুরির সঙ্গে কড়া সিংয়ের গন্ধের এক ধরনের বিশেষ তরকারি থাকে, যা দিয়ে কচুরি খেতে আরও দুর্দান্ত লাগে। কোথায় - মানিকতলায় সুকিয়া স্ট্রিটে। দোকান খোলা - সকাল ৯টা-রাত ৯টা। দাম - এক পিস ৬ টাকা থেকে শুরু।
৬. শ্রীহরি মিষ্টান্ন ভান্ডার - এদের বিখ্যাত কচুরি দু'রকমের হয়। সকালের দিকে যে কচুরি বিক্রি হয়, তার নাম এদের দেওয়া 'গুটকে কচুরি'। ভেতরে ঠাসা কচুরি এক প্লেটে ৫ পিস থাকে। এত জনপ্রিয় যে, সকাল ৮টার পর অবশিষ্ট থাকে না। তার পর দিনের বাকি সময় সাধারণ সাইজের ডালের পুর ভরা কচুরি বিক্রি হয়। সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি ছোলার ডাল। কোথায় - দক্ষিণ কলকাতায় ভবানীপুর থানার বিপরীতে। দোকান খোলা - সকাল ৬-২টো ও বিকেল ৪-৯টা। দাম - এক পিস ৫-৮ টাকা।
৭. মহারানি - এখানে বছরের যে সময়ে, যেদিন আসুন না কেন, লাইনে দাঁড়িয়ে কচুরি খেতে হবে, এমনটাই ভিড় লেগে থাকে! হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে, বহু বুভুক্ষু মানুষ যেন এক সঙ্গে কচুরি আর জিলিপি খাচ্ছে! কোথায় - দেশপ্রিয় পার্কের থেকে সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের দিকে গেলে শরৎ বোস রোডে। দোকান খোলা - ভোর ৬টা-রাত ৯টা। দাম - এক পিস ১০ টাকা।
৮. মহারাজ - 'মহারানি' থেকে কয়েক পা দূরত্বে। হিংয়ের কচুরির বিখ্যাত দোকান। শোনা যায়, একই পরিবার থেকে রাস্তার দু'ধারে দু'টি কচুরির দোকান খোলা হয়েছিল 'মহারানি' আর 'মহারাজ'। কাল ক্রমে দুটি দোকান রাস্তার একদিকের ফুটপাথেই এখন। কোথায় - দেশপ্রিয় পার্কের উল্টোদিকে শরৎ বোস রোডে। দোকান খোলা - সকাল ৬টা-রাত ৯টা। দাম - এক পিস ৮-১০ টাকা।
৯. নাখোদা মসজিদের কচুরি - এই দোকানে কচুরির সঙ্গে বিখ্যাত 'নিহারি' দেওয়া হয়। কচুরির মধ্যে আদা-লঙ্কা কুঁচি দিয়ে ঝাল ঝাল স্বাদের হয়। খেতে এমনকি ভোর চারটে থেকে লোক আসে এখানে। কোথায় - রবীন্দ্র সরণিতে নাখোদা মসজিদের কাছে। দোকান খোলা - ভোর ৪টে-যতক্ষণ কচুরি মজুত থাকে। দাম - ৫ টাকা থেকে শুরু।
১০. টেস্টি কর্নার - এদের বিখ্যাত হিংয়ের কচুরি ছাড়াও এখানকার কড়াইশুটির কচুরি ও পনির কচুরিরও খুব চাহিদা। আশপাশের স্কুলগুলির পড়ুয়াদের ও তাদের অভিভাবকদের ভিড় লেগেই থাকে সকাল থেকে বিকেল। কোথায় - গড়িয়াহাটার কাছে একডালিয়ায়। দোকান খোলা - সকাল ৮টা-রাত ৯টা। দাম - এক পিস ৬-১৫ টাকা।
১১. মোহন ভাণ্ডার - কলকাতার এমন ব্যস্ততম অঞ্চলে এই দোকান যে, এদের বিশেষ আলুর তরকারি ও লঙ্কার চাটনির সঙ্গে রোজ কয়েক হাজার কচুরি উধাও হয়ে যায় অসংখ্য ক্রেতাদের জঠরে! কোথায় - ধর্মতলায় এস.এন.ব্যানার্জি রোডে। দোকান খোলা - সকাল ৮টা-রাত ৮টা। দাম - এক পিস ৬ টাকা থেকে শুরু।
১২. পুঁটিরাম - কলেজ স্ট্রিটের কচুরির কিংবদন্তি দোকান। প্রাতঃরাশ থেকে সান্ধ্য আড্ডা, যেকোনও সময়ে এই প্রাচীন মিষ্টির দোকানে গরম গরম খাস্তা কচুরি পাওয়া যায়। সঙ্গে ছোলার ডাল বা আলুর তরকারি, যেটা চাইবেন। কোথায় - কলেজ স্ট্রিটের লাগোয়া সূর্য সেন স্ট্রিটে। দোকান খোলা - সকাল ৮টা-রাত ৯টা। দাম - এক পিস ৭-৯ টাকা।
১৩. বদ্রি কী কচুরি - মারোয়ারি দোকানের হিংয়ের কচুরির স্বাদ নিতে হলে অবশ্যই আস্তে হবে এখানে। কোথায় - বড়বাজারের কাছে জোড়াসাঁকোয়। দোকান খোলা - সকাল ৬টা-রাত ১০টা। দাম - এক পিস ৮ টাকা।
১৪. কানহাইয়া ভুজিয়া শপ - গুটকে কচুরির জন্য দারুণ জনপ্রিয়। কোথায় - জোড়াসাঁকোয় রাজাকাটরার কাছে। দোকান খোলা - সকাল ৭টা-১১.৩০ ও বিকেল ৪টে-৮.৩০। দাম - এক পিস ৭-৮ টাকা।
১৫. ছাঙ্গানি ভুজিয়া ভান্ডার - মারোয়ারি রান্নার দারুণ সুস্বাদু খাস্তা কচুরি পাওয়া যায় এখানে। কোথায় - বড়বাজারের কাছে জোড়াসাঁকোয়। দোকান খোলা - সকাল ৭টা-রাত ৮.৩০। দাম - এক পিস ৬-১০ টাকা। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।