জীবনযাপনের মতোই ফ্যাশন দুনিয়াতেও যারা স্রোতের বিপরীতে হাঁটেন, আর নিজের শর্তে নিজের বাঁচতে পছন্দ করেন, তাঁদের গল্পই হয় সব থেকে নজর কাড়া। তেমনই ছ’জন আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি।
তাঁদের নিজেদের হাসি ঠাট্টা, খুনসুটি, আলাপচারিতা আর আলোচনার মধ্যে সবাই মিলে ভাগ করে নিলেন নিজেদের সুখ দুঃখের গল্প, নিজেদের জীবনের বদলে যাওয়া সংজ্ঞা, আরও কত কী! সঙ্গে তাঁদের সাজগোজও ছিল ছকভাঙা, একদম অন্য রকম।কারও কারও মধ্যে গড়ে উঠছে বন্ধুত্ব, কারও বা চোখে প্রেমের ইশারা। নিজেদের মতো করে নিজেদের খেয়াল-খুশিতে থাকেন তাঁরা। তাঁদের সাজ থেকে পছন্দ-অপছন্দ সব কিছু নিয়েই তাঁরা খোলামেলা।
শান চৌধুরী ও দেবাংশী বিশ্বাস, গত বেশ কয়েকমাস ধরেই প্রেমের সম্পর্কে বাঁধা পড়েছেন একে অপরের সঙ্গে।
রূপান্তরকামী মানুষদের জীবনের পথে প্রতিটি বাধা বিপত্তি আর সংজ্ঞা নিয়ে সোচ্চার দেবাংশী ও তাঁর লাজুক সঙ্গী শান, দু’জনেই ভাগ করে নিলেন নিজেদের জীবনের অনেক গল্প।
পুজোর সাজ হিসেবে শান বেছে নিলেন সবুজের সঙ্গে ধূসর, লাল আর কালো কারুকাজের লম্বা কুর্তা, সামনে প্যাচ ওয়ার্কের পকেট।দেবাংশীর পছন্দ লাল টকটকে শাড়ি।জুটিতে দারুণ মানিয়েছে পুজোর সাজে।
শুধু তারাই নন, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন উজান পাল, ঋষি ঘোষ, কিজু সাহা এবং শক্তি বন্দ্যোপাধ্যায়। সবাই সেজেছিলেন অন্য রকম সাজে। সুতির পোশাকে উজ্জ্বল মোটিফ, প্রত্যেকের সাজ যেন বলে দিচ্ছে তাঁদের কাহিনি।
পোশাক শিল্পী নিলয় সেনগুপ্ত জানালেন, এই পোশাক তৈরির ভাবনা চিন্তা লুকিয়ে রয়েছে আদিশক্তির সংজ্ঞার মধ্যেই। তিনি ব্যবহার করেছেন হ্যান্ডলুম কাপড়ের সঙ্গে গামছাক, বাঁধনি আরও নানা কারুকাজ ও প্রাদেশিক কাপড়। মানুষ নারী হোক, কী পুরুষ, তাঁদের মধ্যে যে শক্তি সঞ্চিত রয়েছে, তাতেই শত অন্ধকার দূর হয়ে আসতে পারে আলোর ছটা। তাই সবার পোশাকেই রয়েছে কালো ও উজ্জ্বল রঙের সুনিপুণ ব্যবহার।
কেউ পরেছেন অন্য রকমের কেতার ড্রেস, কারও বা গায়ে উজ্জ্বল শ্রাগ। শাড়ি থেকে সাদামাঠা ধুতি প্যান্ট, তাঁদের সাজ এই বছর নতুন এক ধারা সৃষ্টি করতে পারে রূপান্তরকামীদের পুজোর অভিজ্ঞতায়।
শক্তি বন্দ্যোপাধ্যায়। নামের মতোই তাঁর ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা অন্য মাত্রায়। নিজের মন বা শরীরকে বুঝতে তিনি পিছিয়ে থাকতে চাননি, এগিয়ে এসেছেন নিজের আসল সত্ত্বাকে আপন করে নিতে। তিনি প্রতিবাদী।
তাঁর পোশাকও তাই সেই রকমই ছকভাঙা। কালো পোশাকের সঙ্গে অন্য প্রিন্টের রংবেরঙের কাফতান হাতা, আর গলায় ঝলমলে রঙের হার। তাঁর পুজোর সাজ উজ্জ্বল, চটকদার।
এই দিনেই উপস্থিত ছিলেন ঋষি ঘোষ। রূপান্তরকামী মানুষদের তরফ থেকে তিনি গর্বিত বক্তা। লাজুক হেসে জানালেন বিয়ে করেছেন এর মধ্যেই। পুজোর সাজের জন্য তিনি বেছে নিলেন কালো টিশার্ট, শার্টের আদলে বানানো উজ্জ্বল ও রংবেরঙের শ্রাগ। সঙ্গে লাল-হলুদের বাঁধনি কাজের ধুতি প্যান্ট, তাতে সাম্নের দিকে স্টেটমেন্ট ডেনিম পকেট।
কিজু সাহাও নিজের সাজ নিয়ে বেশ সচেতন। পুজোর দিনে চাই অন্য রকম সাজ, তাই শুধু শাড়ি নয়, শাড়ি পরার ধরনেও থাকতে হবে অন্য ধারা। নীল ও কালো রঙের শাড়ি তাই তিনি পরেছেন ধুতির মতো করে।
শার্টের মতো ধূসর, সবুজ আর লালের মিশেলে কুর্তা পরেছেন শান। তাঁর জীবনেও রয়েছে অনেক অপ্রিয় সম্পর্কের অভিজ্ঞতা, কিন্তু সেই সব পেরিয়ে আজ তিনি পুজোর আমেজে অন্য মুডে।
উজান পছন্দ করেন ছিমছাম পুজোর সাজ, বেশি জমকালো তাঁর না-পসন্দ। তাই কালো টিশার্টের সঙ্গে তাঁর পরনে রয়েছে উজ্জ্বল সবুজ-হলুদ রঙের ধুতি প্যান্ট। মিষ্টি হাসিতেই মাত তাঁর পুজোর সাজ।
স্পষ্টবক্তা দেবাংশীর পুজোর সাজের পছন্দ আগুন লাল সুতির শাড়িতে হলুদ প্রিন্ট, তাঁর সঙ্গে তিনি পরেছিলেন কালো ব্লাউজ়।তাতেই নজর কাড়া তাঁর সাজ!
আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে এক ঘরে, এক সঙ্গে আজ তাঁরা আলোচনায়। এই গোলটেবিলে যেমন ছিল তাঁদের কাজের আলোচনা, তেমনই তাঁদের সাজ নিয়েও ছিল কত ভাবনা চিন্তা। তাঁদের পুজোর সাজ অনেক বাঁধ ভাঙবে বলেই তাঁদের বিশ্বাস।