পুজোর আর অল্প ক’দিন দেরি। এই দিকে কাজের চাপে কেনাকাটা প্রায় হয়নি বললেই চলে, গড়িয়াহাট নিউমার্কেটে গলদঘর্ম ভিড় ঠেলে কী কিনবেন আর কী কিনবেন না ঠিক করে উঠতে পারছেন না?
এক নজরে দেখে নিন হাল ফ্যাশনের ছকভাঙা সাজগোজের জন্য কী ভাবে সাজবেন আর কী কী পরবেন! জানালেন পোশাক শিল্পী অনুশ্রী মলহোত্রা এবং সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়।
পোশাক শিল্পী অনুশ্রী মলহোত্রার পুজোর সাজের ভাবনাতে প্রথমেই আসছে পঞ্চমীর দিনের জন্য সুতির হ্যান্ডলুম শাড়ি। তাঁর মতে পুজোতে নরম খোলের শাড়ি পরলেই বেশি আরামদায়ক। গোলাপি শাড়ির সঙ্গে কালো ব্লাউজ-এ অন্য রকম সাজতে উনি স্টাইল করিয়েছেন ডেনিমের সঙ্গে। শাড়ির গা জুড়ে রয়েছে হলুদ ট্যাক্সির প্রিন্ট, আর আঁচলে রয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আদল। তা সে ঠাকুর দেখতে বেরনোই হোক বা শহরের অলিগলি ঘুরে বন্ধুদের আড্ডা- সবেতেই আপনি নজর কাড়বেন। তাঁর নকশা করা শাড়িতে সেজেছেন সঙ্গীত শিল্পী পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর মতে, ‘‘অনেক মহিলাই তাড়াহুড়োয় শাড়ি পরতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাঁদের জন্য এক্কেবারে অন্য রকম এই সাজ উপযুক্ত। আর সঙ্গে যদি থাকে মুখের হালকা সাজ আর হাত ভরা চুড়ি, তা হলেই আপনি অনন্যা।’’
তবে শুধু মহিলাদের সাজই কেন, পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যান্ড সেজেছে কলমকারি বা প্রিন্টেড কাপড়ের কুর্তা আর ধুতি প্যান্টের আধুনিক বাঙালি সাজে।
ষষ্ঠীর সাজের জন্য অনুশ্রী মলহোত্রা ঠিক করেছেন এক্কেবারে সাদা সাজ। মহাষষ্ঠীর দিনের বেলায় সাদা জামদানি শাড়িতে পার্শি কারুকাজের ছোঁয়ায় খুব সাধারণ শাড়িতেই হয়ে উঠতে পারেন অসামান্যা।
হালকা কাজলটানা চোখের সাজের সঙ্গে কপালে ছোট্ট টিপ। বাঙালিয়ানা চুইয়ে পড়া সাজের আসল আকর্ষণ হল মিষ্টি হাসি। হাতে বড় আংটি, হালকা ঢেউ খেলানো চুলে পৌষালী নিজের খেয়ালে।
সঙ্গে রয়েছে ভারী আফগানি কাজের হার আর স্টাইলিং করা চুল, পুজোর সাজ সম্পূর্ণ।
আপনিও এই রকম সাজ বেছে নিতে পারেন ষষ্ঠী উপলক্ষে। এই দিন পুরুষদের সাজে বিশেষ চমক বলতে একটু অন্য ভাবে পরা শার্ট বা ফতুয়া। কেউ আবার সঙ্গে নিতে পারেন কাঁথায় প্যাচওয়ার্ক করা স্টোল।
সপ্তমীর দিন সুতির সাজ ছেড়ে বেছে নিতে পারেন সিল্কের মখমলি মেজেন্টা বা বেগুনি রঙের শাড়ি। পোশাক শিল্পী সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘আমি মূলত কাঁথার কারুকাজ নিয়েই পুজোর পোশাক ভেবেছি।’’ যেমন সাদা সুতোর কল্কা নকশা করা মেজেন্টা শাড়িতেই আপনার সপ্তমীর সাজ জমে যাবে একদম।
অনুশ্রী মলহোত্রার কাছে অষ্টমীর সাজ মানেই সাদা আর লালে বিশুদ্ধ বাঙালি নারী। সঙ্গে পুরুষদের জন্যও তাঁর ভাবনা জমকালো ধুতি পাঞ্জাবি। ঘিয়ে থেকে কালো, সব রকম রঙের বাহারে সেজে উঠুন অষ্টমীতে।
মা দুর্গা যেমন সপরিবারে আসেন, তেমনি ধুতি পাঞ্জাবিতে সেজে ওঠা দলের সঙ্গে, লাল জামদানিতে মধ্যমণি পৌষালী। হাসি ঠাট্টাতেই কেটে যায় পুজোর ক’টা দিন।
পৌষালীর পরনে বাংলায় তৈরি হওয়া লাল টুকটুকে জামদানি, সঙ্গে লাল পাড় বসানো ঘিয়ে ব্লাউজ। তার সঙ্গে রয়েছে সোনালি গয়না।
খোঁপায় তাজা ফুল! অষ্টমীর সাজে হয়ে উঠুন মোহময়ী।
দিনের সাজ যতই লালা সাদাতে সাবেকি হোক না কেন, রাতের সাজ হতে হবে আরও জমকালো। তাই সবুজ তসর শাড়িতে দুই রকম রঙের ডাই করে বানানো জাঁকালো শাড়ি পরাই পোশাক শিল্পী সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দ। অষ্টমীর শাড়ি বলে কথা, তাই পাড় ও আঁচলে ভারী কাঁথার কাজ থাকলেও পাশাপাশি শাড়ির সারা গা জুড়ে রয়েছে কাঁথার বুটি।
সঙ্গে রাতের সাজে পুরুষদের জন্য রয়েছে ঘিয়ে পাঞ্জাবি আর সাদা জামদানি পিন্টের পাড়ের ধুতি। পাঞ্জাবির হাতায় ও বুকে রয়েছে কল্কা নকশায় কাঁথার কারুকাজ।
নবমীর দিনের সাজ হবে একটু আধুনিক ধাঁচের। সেই মতো সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় সাজিয়েছেন, বাদামী ও নীল রঙের অ্যাসিড ব্লক প্রিন্টের প্যানেল করা বিষ্ণুপুর সিল্কের শাড়িতে। সাবেকি ঘরোয়া সাজের বাইরে একটু আধুনিকা শাড়ির সাজ এটি। মুঘল স্থাপত্যের জাল কাজ করা জানলার মতো কারুকাজ ফুটিয়ে তুলেছেন এই শাড়িতে।
দশমীর শাড়ির ভারিক্কি মেজাজ আসুক গায়ে লেপ্টে থাকা সুতির শাড়িতে। এই শাড়ির পাড়ে রয়েছে জামদানি প্রিন্ট, আর আঁচলে রয়েছে অ্যাপ্লিক করা টিপ! ঠিক যেন দেবীর বিদায় মুহুর্তের জন্যই বানানো এই শাড়ি। দশমীর সাজ জমে ক্ষীর।