লক্ষ্মী দেবীর আর এক নাম শ্রী। পরাশর-সংহিতায় যে তিনটি শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তা হল-শ্রী, ভূ (ভূমি) এবং লীলা।
জয়াখ্য-সংহিতায় লক্ষ্মী কীর্তি, জয়া ও মায়া এই চার দেবীর উল্লেখ আছে। এ ছাড়াও লক্ষ্মী দেবীর সৃষ্টি নিয়ে নানা মত রয়েছে পুরাণে।
বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত, মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থ অনুসারে লক্ষ্মী দেবীর উৎপত্তি হয়েছে সমুদ্র থেকে। দুর্বাসা মুনির শাপে স্বর্গ একদা শ্রীহীন বা লক্ষ্মী-ছাড়া হয়ে পড়েছিল। কী হল তখন?
সেই সময় বিষ্ণুর পরামর্শে স্বর্গের ঐশ্বর্য ফিরে পাওয়ার জন্য দেবতারা অসুরদের সঙ্গে সমুদ্র-মন্থন শুরু করেন। সেই ক্ষীর-সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে আসল নানা রত্ন, মণি-মাণিক্য, অমৃতসুধা আরও কত কী।
এ সব ছাড়াও সমুদ্র-মন্থনের ফলে উঠে আসেন লক্ষ্মী দেবী। ঠাঁই পান বিষ্ণুর বক্ষে। সমুদ্র থেকে দেবীর উদ্ভব বলে দেবীকে বলা হয় সমুদ্রোদ্ভবা।
সমুদ্রকে অপার ধন-রত্নের আধার মনে করা হয়। ধনরত্নে পরিপূর্ণ বলে সমুদ্রকে রত্নাকরও বলা হয়। যেহেতু লক্ষ্মী দেবী হলেন ধন-সম্পদের দেবী সেহেতু সমুদ্র থেকে দেবী লক্ষ্মীর উৎপত্তির কাহিনী কল্পিত হওয়া বিচিত্র কিছু নয়।
এ দিকে বিষ্ণুকে বলা হয় জগতের প্রতিপালক। প্রজাদের লালন-পালন করতে ধন-রত্নের প্রয়োজন রয়েছে আর সেজন্যই বিষ্ণু ধন-ঐশ্বর্যের লক্ষ্মী দেবীকে বুকে স্থান দিলেন।
পদ্মের উপর বসে থাকেন অর্থাৎ পদ্মের সঙ্গে দেবীর একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। পদ্ম হল সূর্যের প্রতীক।
এ দিকে সূর্যকে বিষ্ণুর অংশ বলছে ভাগবত পুরাণ। বিষ্ণুর হাতেও পদ্ম রয়েছে। তাই বিষ্ণুশক্তি হিসেবে লক্ষ্মীর হাতে পদ্ম থাকাটা স্বাভাবিক। এ দিকে পদ্ম ভক্তিরও প্রতীক। দেবী ভক্তদের ভক্তি প্রদান করেন তাই ভক্তিপদ্ম তার হস্তে।
কোনও কোনও পুরাণ মতে লক্ষ্মী দেবী (শ্রী) হলেন মহর্ষি ভৃগুর কন্যা। ভাগবত পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও ব্রহ্মাপুরাণে বলা হয়েছে, ভৃগুর পত্নী খ্যাতির গর্ভে শ্রী দেবীর জন্ম।
অন্য পুরাণে বলা হয়েছে, শ্রী দেবী প্রজাপতি (ব্রহ্মা) হতে সৃষ্টি হয়েছেন এবং তিনি ধন, সৌন্দর্য ও সৌভাগ্য প্রদান করেন।
ভৃগুকন্যা লক্ষ্মী কীভাবে বিষ্ণু-পত্নী হলেন? স্কন্দ পুরাণে এ প্রশ্নের উত্তরের আভাস রয়েছে।
খ্যাতির গর্ভে জাতা লক্ষ্মী দেবী নারায়ণ অর্থাৎ বিষ্ণুকে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করে বহুকাল কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন হলেন।
সেই সময় ইন্দ্র-সহ অন্য দেবতারা বিষ্ণুর ছদ্মবেশে লক্ষ্মীর নিকট উপস্থিত হলে লক্ষ্মী দেবী তাঁদেরকে বিশ্বরূপ দেখাতে বলেন। কারণ লক্ষ্মী দেবী জানতেন, একমাত্র বিষ্ণুই বিশ্বরূপ দেখাতে সক্ষম।
অন্য দেবতারা বিশ্বরূপ দেখাতে না পেরে লজ্জিত হয়ে চলে যান। তারপর লক্ষ্মীর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু নিজে লক্ষ্মীর নিকট উপস্থিত হন এবং তাঁর ইচ্ছায় বিশ্বরূপ দেখান। তারপর মহর্ষি ভৃগু তাঁর কন্যা লক্ষ্মীকে বিষ্ণুর হস্তে সমর্পণ করেন। এভাবে লক্ষ্মী দেবী বিষ্ণুপত্নী হলেন।
যদিও বাঙালির কাছে ঘরের মেয়ে উমার কন্যা লক্ষ্মী। তাঁরই আরাধনায় কোজাগরী পূর্ণিমায় মেতে উঠবে বাংলার মানুষ। ঈশ্বরী পাটনির মতোই প্রত্যেকেরই প্রার্থনা একটাই, এ পৃথিবীর কোনও মানুষ যেন অনাহারে না থাকে।