এ যেন সত্যিই ঈশ্বর এক হওয়ার গল্প। হুগলির হরিপালের শ্রীপতিপুরের অধিকারী পরিবারের এই কালী পুজোয় মিলেমিশে গিয়েছেন কৃষ্ণ ও কালী। তাই দেবী এখানে পূজিতা হন কৃষ্ণকালী রূপেই। তবে দেবীর এই রূপের পিছনেও আছে কাহিনি।
শাস্ত্রে আছে, এক বার শ্রীকৃষ্ণ ও রাধা লীলা খেলায় মত্ত ছিলেন। সেই খবর পৌঁছে যায় রাধার স্বামী আয়ান ঘোষের কাছে। তিনি তৎক্ষণাৎ সেই স্থানে এসে উপস্থিত হন।
কিন্তু আয়ান ঘোষ দেখেন, রাধা সেখানে কালী উপাসনা করছেন। আসলে নিজের প্রেয়সীকে অপমানের হাত থেকে বাঁচাতেই শ্রীকৃষ্ণ কালী রূপ ধারণ করেন। এবং তার থেকেই উৎপত্তি দেবী রটন্তী কালীর।
শ্রীপতিপুরের অধিকারী পরিবারে এই পুজো শুরু করেন বটকৃষ্ণ অধিকারী। আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে তিনি দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
গ্রামের দরিদ্র বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম বটকৃষ্ণের। জন্মসূত্রেই পেয়েছিলেন বৈষ্ণব সুলভ আচরণ। ম্যাট্রিক পাশ করে যান ভিনদেশে চাকরি করতে।
তবে সবার ভাগ্য তো আর এক রকম হয় না! ক’দিন পর ফিরে এলেন গ্রামে। সংসার ধর্ম পালন করলেও টান ছিল তন্ত্র সাধনার উপরে। তাই শ্মশানে বসে শুরু করলেন তন্ত্র সাধনা। সেখানেই লাভ করেন সিদ্ধি।
দেবীর আদেশেই বটকৃষ্ণ প্রতিষ্ঠা করেন মায়ের মন্দির। তবে ব্যাপারটা মোটেও এত সহজ ছিল না।
সেই সময়ে বৈষ্ণব বাড়িতে কালীর উপাসনা ছিল নিদারুণ অপরাধ। সমাজের মাথাদের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন কালীর ঘট। পরে আবার দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েই প্রতিষ্ঠা করেন প্রতিমা। কালী ও কৃষ্ণের আদেশেই রটন্তী কালী পুজোর দিনে প্রতিষ্ঠা হয় দেবীর।
দেবীর গায়ের রং সবুজ। গলায় কণ্ঠীর মালা ও বৈষ্ণব তিলক আঁকা। দেবী এখানে বৈষ্ণব ধর্মালম্বী। বলি নয় বরং মা খুশি হন বাঁশির মিঠে সুরেই।