এক সময়ে আদি গঙ্গার পারে কালীর আরাধনা শুরু করেছিলেন তান্ত্রিকেরা। শ্মশান লাগোয়া এই জায়গায় চলত তন্ত্র সাধনাও। গঙ্গার ধারে জঙ্গলের পাশে এই নির্জন শ্মশান ছিল তন্ত্র সাধনার রীতিমতো উপযোগী।
বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের সাতঘরা ঠাকুরঝি গ্রামে যজ্ঞবাটি মহাশশ্মান। এখানেই রয়েছে তিন চূড়া বিশিষ্ট মন্দির। যেখানে কয়েকশো বছর ধরে পূজিতা মা যজ্ঞেশ্বরী।
শোনা যায়, এই স্থানে পায়ের ধুলো পড়েছিল স্বয়ং চৈতন্য দেবের। এক সময়ে ছত্রভোগ হয়ে নীলাচলে যাওয়ার পথে এই শ্মশানেই নাকি বিশ্রাম নিয়েছিলেন তিনি। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, এই ঘটনার কোনও প্রমাণ নেই।
আগে এই শ্মশানে সমাধি দেওয়া হত বৈষ্ণব ও বৈরাগী সম্প্রদায়ের মানুষদের। অনেকে বলেন বৈরাগীরা এই সমাধিস্থলকে বলতো যজ্ঞবাড়ি। সেই থেকেই এলাকার নাম হয়ে ওঠে যজ্ঞবাটি।
পরবর্তীকালে অপঘাতে মৃত শিশুদের সমাধিস্থ করা হত এই শ্মশানে। এই জায়গা হয়ে ওঠে সুন্দরবন অঞ্চলের তান্ত্রিকদের সাধনা স্থল।
জনশ্রুতি আছে, প্রথম এখানে সাধনা করতে আসেন তান্ত্রিক শিবানন্দ ব্রহ্মচারী। ১০৮টি নরমুণ্ড দিয়ে তন্ত্র মতে শুরু করেন মায়ের আরাধনা। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে মায়ের মন্দির।
তান্ত্রিক শিবানন্দ ব্রহ্মচারীর মৃত্যুর পরে মায়ের সেবার দায়িত্ব নেন এক মহিলা সাধু। তবে তাঁর মৃত্যুর পরে সেই দায়ভার কাঁধে তুলে নেন গ্রামবাসীরাই।
এই স্থান নিয়ে রয়েছে পৌরাণিক গল্প। কথিত, ভগীরথ গঙ্গা আনয়নের সময়ে বিশ্রাম নিয়েছিলেন এখানেই। যজ্ঞও করেন তিনি। সেই সূত্রেই এই স্থানের নাম হয় যজ্ঞবাটি। তবে তা নিয়েও রয়েছে মতানৈক্য।
দেবী এখানে পুজিত হন তন্ত্র মতেই। নৈবেদ্যে দেওয়া হয় মদ, মাংস, কাঁচা ছোলা। তবে কোনও রকম বলি হয় না।
মা যজ্ঞেশ্বরী বেশ জাগ্রত বলেই বিশ্বাস স্থানীয় মানুষের। তাই কালীপুজোর দিনে পুজো হয় মহা আড়ম্বরে। বিশাল জনসমাগমও হয় এলাকায়। তথ্য সহায়ক – সৈকত ঘোষ।