প্রতি বছরই আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠে কালীপুজোর রাত। আলোর উৎসবের এই উদযাপন ছুঁয়ে যায় সকল স্তরের মানুষকে।
তবে প্রদীপের নীচে যেমন থাকে কালিমা আর অন্ধকার, তেমনই এই বাঁধভাঙা আলোর পিছনেই থাকে নানা নিষ্ঠুর নিয়ম কানুনের বেড়াজাল।
আর নিয়মের মুখোশের আড়ালে থাকে যুগের পর যুগ ধরে হয়ে আসা কিছু রীতি, যার পরিবর্তন প্রয়োজন আর বদল আসছেও। যেমন, বলি প্রথা!
কালীপুজো মানেই আগে ছিল ধরাবাঁধা পশুবলি। দেবীকে তুষ্ট করতে উৎসর্গ করা ছাগল, মোষের মতো অবলা, নিরীহ প্রাণ। তাতেই আশীর্বাদ মেলে দেবীর?
দক্ষিণেশ্বর মন্দির কমিটির সেক্রেটারি ও ট্রাস্টি কুশল চৌধুরী জানিয়েছেন কী ভাবে জীবহত্যা না করেও একই নিয়ম-রীতি সব মেনে দেবীর পুজো সমান ভক্তি নিয়ে করা যায়। অবলা জীবকে তেল-সিঁদুর মাখিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে দেবতার নামে বলি দেওয়ার কঠোর বিপক্ষে তিনি।বলির আগেই ভক্তদের মধ্যে বলির অংশ ভাগাভাগি নিয়ে 'দৃষ্টি ভক্ষণ' -এর যে চল, তা মেনে নিতে পারেন না তিনি!
তাই দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের বিখ্যাত কালীপুজোয় আজ প্রায় দুই দশক ধরে পশুবলির বদলে হয় ‘প্রতীকী বলি’। যেখানে কুমড়ো, আখ বা নারকেল বলি দেওয়া হয়। রীতি অনুযায়ী পুজোর বাকি সব নিয়ম থাকে একই। সমাজের বহু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও এই সিদ্ধান্তে আজও অনড় কুশল বাবু।
একই ভাবে পশুবলির প্রথা বর্জন করেছে আরও অনেক কালী মন্দির। কলকাতার বিখ্যাত ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির পুজোতেই যেমন পশুবলি নিষিদ্ধ বহু বছর হল। বদলে চল আছে প্রতীকী বলি দ্বারা পুজো সম্পন্ন করার।
আদ্যাপীঠের কালীপুজোয় দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন বহু মানুষ। সেখানে পূজিতা হন আদ্যামা, সঙ্গে থাকেন রামকৃষ্ণদেব, ও রাধাকৃষ্ণ। এখানেও বলির প্রচলন নেই। মায়ের ভোগ সম্পূর্ণ নিরামিষ, এবং ভক্তেরাও নিরামিষ ভোজন করেন।
হুগলির হরিপালের শ্রীপতিপুরের অধিকারীবাড়ির পুজোও খুবই বিখ্যাত। এখানেও হয় না পশুবলি। এ বাড়িতে দেবী বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী, তাঁর রূপও অন্য রকম। বলি নয়, বাঁশির মিঠে সুর তাঁর পছন্দ।
এমনকি, উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বিখ্যাত বয়রা কালী মন্দিরেও গত বছর থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে ছাগল ও পায়রা বলি। প্রতীকী বলিতে মত দিয়েছেন সেবায়েতরা সবাই। পা মিলিয়েছেন এক সুস্থ ও নির্মল ভবিষ্যতের পথে।