পশ্চিমবঙ্গের জগদ্ধাত্রী পুজোর জগৎজোড়া নাম। দূরদুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন এই পুজোর আনন্দে গা ভাসাতে। চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো সবচেয়ে বিখ্যাত।
কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়। বাঙালির ধর্মবিশ্বাসে প্রথমেই আসেন রাজসিক দেবী দুর্গা, তার পরে তামসিক দেবী কালী এবং তার পিছু পিছু সত্ত্বগুণের দেবী জগদ্ধাত্রী।
দেবী দুর্গার আর এক রূপ দেবী জগদ্ধাত্রী, জগৎকে ধারণ করেন যিনি। সিংহবাহিনী দেবী সালঙ্কারা এবং নানা অস্ত্রে সজ্জিতা।
জগদ্ধাত্রীর বাঁ হাতে থাকে শঙ্খ ও শাঙ্গরধনু। ডান হাতে থাকে চক্র ও পঞ্চবাণ। পরিধানে রক্তবস্ত্র। সাধারণত তাঁর রূপ হয় সোনালি বা রক্তবর্ণা।
পুরাণে বলা হয়, মহিষাসুরকে বধ করার পরে উল্লসিত দেবতারা এই জয়কে নিজেদের জয় বলে গণ্য করেছিলেন। কারণ, তাঁদের মতে দেবী দুর্গার সৃষ্টি হয়েছিল তাঁদেরই যুগ্ম শক্তিতে।
কথিত, দেবতারা ভেবেছিলেন ব্রহ্মার বরের সম্মানরক্ষার জন্য নারীর প্রয়োজন ছিল। তাঁদের এই গর্ব দেখে দেবী জগদ্ধাত্রী একটি তৃণখণ্ড নিক্ষেপ করেন দেবতাদের দিকে।
জগদ্ধাত্রী দেবতাদের শক্তি পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন এ ভাবে। কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্র পর্যন্ত তাঁর বজ্র দ্বারা সেই তৃণখণ্ডটি ধ্বংস করতে ব্যর্থ হন। অগ্নি দেব কিংবা বরুণ দেব কেউই পারেননি সেই তৃণ দহন করতে।
তখন দেবতাদের সামনে উপস্থিত হলেন এক চতুর্ভুজা দেবীমুর্তি- দেবী জগদ্ধাত্রী। তাঁর উপস্থিতি দেবতাদের জানান দিল, তিনিই জগতের ধারিণী শক্তি। আবার শ্রীশ্রীচণ্ডীতেও উল্লেখ পাওয়া যায় যে, মহিষাসুরের সঙ্গে তীব্র যুদ্ধের সময়ে অসুর নানা রূপ ধারণ করে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন দেবীকে। তখন হস্তী ছিল তাঁর এক রূপ।
সেই হস্তী দেবীকে যখন বধ করার চেষ্টা করে, তখন দেবী চতুর্ভুজা হয়ে আবির্ভূত হন এবং চক্র দিয়ে হত্যা করেন হস্তীরূপী মহিষাসুরকে। এই দেবীই ছিলেন জগদ্ধাত্রী।
আবার মূর্তিতত্ত্বে দেবী জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ দাঁড়িয়ে আছে হস্তীর মৃত শরীরের উপরে। সংস্কৃতে এই হস্তীর নাম করী, আর তাই তাঁর নাম করীন্দ্রাসুর। এবং জগদ্ধাত্রী দেবীর আর এক নাম হয় করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।