দেবী দুর্গা সৃষ্টিকালে সৃষ্টিরূপা। পালন কালে তিনি স্থিতিরূপা আর প্রলয় কালে সংহৃতিরূপা। এই ত্রিবিধ শক্তিরূপে দেবী জগৎ সংসারে আত্মপ্রকাশ করেছেন। দেবতাদের তেজে সৃষ্ট দেবীর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিভিন্ন দেবতাদের জ্যোতিতে সৃষ্টি। যেমন শম্ভুর তেজে দেবীর মুখমণ্ডল, বিষ্ণুর তেজে বাহু, ব্রহ্মার তেজে পদদ্বয়, যমের তেজে কেশ ইত্যাদি।
এরপর দেবতারা নিজেদের অস্ত্রাদি এবং নানাবিধ অলঙ্কার দ্বারা দেবীকে সুসজ্জিত করেন। মহিষাসুরকে বধ করার জন্য তিনি দশভূজা রূপ ধারণ করেছিলেন। আর এই দশ হাতের জন্য দেবতাগণ তাঁদের নিজ নিজ অস্ত্র প্রদান করেছিলেন। কে কোন অস্ত্র প্রদান করেছিলেন?
ত্রিশূল: ত্রিশূলধারী শিব স্বকীয় শূল থেকে দেবীকে ত্রিশূল সমর্পণ করলেন।
চক্র: বিষ্ণু নিজ চক্র হতে চক্র উৎপাদন করে দেবীকে অর্পণ করলেন। আসলে এই সংসারই বিষ্ণুর চক্র।
শঙ্খ: দেবতাপ্রধান শিব ও বিষ্ণুর স্বকীয় শক্তি দেবীচরণে সমর্পণের পর অন্যান্য দেবতারাও তাঁদের পথ অনুসরণ করলেন। জলাধিপতি বরুণ শঙ্খ অর্পণ করলেন।
অগ্নি: হুতাশনের শক্তি হল দাহ। এই শক্তিও মাতৃশক্তি মাত্র। অগ্নি ছাড়া কোথাও কিছু নাই। সমগ্র বিশ্বের এই অগ্নিময় সত্তাটি দেবী মহামায়ারই সত্তা। এই শক্তিই দেবীকে অর্পণ করলেন অগ্নিদেব।
ধনু, শর: বায়ু দেবতা ধনু ও শরপূর্ণ তুণীর দিলেন দেবীকে। এই ধনু ও শর প্রকৃত অর্থে প্রবাহ শক্তির পরিচায়ক। প্রবাহ শক্তির দুইমুখী প্রকাশ- অর্ন্তমুখী এবং বহির্মুখী।
বজ্র: ইন্দ্র হলেন দেবতাদের অধিপতি। তিনি দিলেন বজ্র। এ ছাড়া ইন্দ্রদেব ঐরাবত থেকে ঘণ্টাও দেবীকে অর্পণ করেছিলেন।
কালদণ্ড: যমরাজ মৃত্যু অধিপতি। কালদণ্ড যমের প্রধান অস্ত্র। যমরাজ নিজের কালদণ্ড দিলেন দেবীকে।
পাশ: জলাধিপতি বরুণদেবের শঙ্খ অর্পণের কথা বলা হয়েছে। তাঁর প্রধান অস্ত্র পাশ-ও দেবীকে অর্পণ করলেন বরুণদেব।
অক্ষমালা: প্রজাপতির প্রধান অস্ত্র অক্ষমালা। এই অক্ষমালা হল পঞ্চাশৎ মাতৃতাবর্ণ মালা। প্রজাপতি তা দিলেন দেবীকে।
কমণ্ডলু: ব্রহ্মার প্রধান শক্তি কমণ্ডলু। ব্রহ্মা তা দিলেন দেবীকে।
খড়্গ চর্ম: কালের প্রধান অস্ত্র খড়্গ ও চর্ম। এখানে কাল হল কালাত্মক চৈতন্য। কালই হলেন জগতের আধার। তিনি দেবীকে জল, খড়গ ও নির্ন্মল চর্ম দেবীকে অর্পণ করেছিলেন।
পরশু: বিশ্বকর্মা দেবীকে অতি নির্মল পরশু, নানাবিধ অস্ত্রসমূহ এবং অভেদ্য বর্ম অর্পণ করেন।