আমার স্ত্রীর নাম মৌমিতা। বিয়ের আগে ও ছিল মৌমিতা পুরকায়েত। বুঝতেই পারছেন হিন্দু মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি। মৌমিতা ঈদের সময় এক মাস নিয়মিত রোজা পালন করে। দেখুন, ও যদি রোজা করতে পারে, তা হলে পুজোয় আমার অঞ্জলি দিতে অসুবিধে কীসের? আমি ব্যাপারটা এভাবেই দেখি।
আসলে আমার কাছে বরাবর সবচেয়ে বড় ধর্ম হল মনুষ্যধর্ম। একজন হিন্দুর মসজিদে যাওয়া, আবার একজন মুসলমানের মন্দিরে আসার ভিতর কোনও ভেদাভেদ নেই আমার চোখে! দুর্গাপুজোতে খুব আনন্দ করি। আমার পরিবার, বউ, দুই ছেলে, বন্ধুবান্ধব নিয়ে। খাওয়াদাওয়া হয়। মজা-হইহুল্লোড় হয়।
আগে থাকতাম নিউ গড়িয়ায়। এখন থাকি নিউটাউনে। আমার পুজো বলতে আবাসনের পুজো। চারদিন ধরে দেদার খাওয়াদাওয়া চলে। খিচুড়ির পাশাপাশি বন্ধুরা বিরিয়ানি খেতে চাইলে সেটাও রান্না করা হয়। বিরিয়ানিটা মৌমিতা বানায়। পুজোমন্ডপে খিচুড়ি।
আমার আদি বাড়ি বারুইপুর লাইনে মল্লিকপুরে। মৌমিতার বাপের বাড়ি তার কয়েকটা স্টেশন পরে। আমাদের প্রেম করে বিয়ে। তবে বিয়ের আগে পুজোয় প্রেম করা, হাত ধরাধরি করে ঠাকুর দেখা কখনও হয়ে ওঠেনি আমাদের। আসলে সেই সুযোগ ছিল না। বিয়ের পর অবশ্য পুজোয় দু’জনে মিলে ঠাকুর দেখেছি। এখনও বাচ্চাদের নিয়ে দেখি।
ফুটবল খেলতাম তো! ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, ভারতীয় দলে অনেক বছর টানা খেলেছি। তাই কোনও দিন বেশি রাত করে ঘুমানোর অভ্যেস নেই। এখনও তাই। সে জন্য ঠাকুর দেখতে গেলে কিংবা আমাদের আবাসনের পুজোয় আড্ডা দিলে ওই বড় জোর রাত ১টা পর্যন্ত। এবারও তেমন ভেবে রেখেছি।
কিন্তু তার আগে দেখতে হবে পুজোর সময় আইএসএল-এ আমার টিভি কমেন্ট্রি আছে কিনা! গত কয়েক বছর পুজোর সময় আইএসএল শুরু হয়ে যাচ্ছিল। তার জন্য শেষ কয়েকটা পুজোয় সে ভাবে থাকা হয়নি আমার। এবার অবশ্য আমাদের আবাসনের পুজোয় থাকার খুব ইচ্ছে আছে। দেখা যাক!
পুজোয় আমার বাবা-মা'ও সেভাবে আমাদের কাছে আসতে পারেন না। ওঁদের বয়স হয়ে গিয়েছে। ঈদ-এর মতোই দুর্গাপুজোতেও বাচ্চাদের জন্য আমি নতুন জামা কিনি, বউকেই শুধু নয়, আমার শালীকেও নতুন শাড়ি উপহার দিই।
এবারের পুজোয় শ্বশুরমশাই নেই। কয়েক মাস হল মারা গিয়েছেন। কিন্তু প্রতি বার পুজোয় আমার শ্বশুর-শাশুড়িকেও নতুন কাপড়জামা কিনে দিয়েছি। এবারও শাশুড়ির জন্য নতুন শাড়ি কিনব। ঈদের মতো পুজোতেও পাড়ার গরিব বাচ্চাদের নতুন জামা কিনে দিই।
আমার কাছে সব ধর্ম সমান। আমার ফুটবল খেলা শেখা যাঁর কাছে তিনিই হিন্দু ব্রাহ্মণ। অভি দত্ত রায়। আমার ফুটবলার হিসেবে বেড়ে ওঠার জীবনের বেশিরভাগটা কেটেছে ঢাকুরিয়ায়। ওঁর কাছে।
আমি আমার দুই ছেলেকেও এমন ভাবে বড় করছি যাতে ওরা অন্য ধর্মের মানুষদের ভালবাসে। শ্রদ্ধা করে। আমার বড় ছেলের নাম জিদান, ছোট ছেলের নাম আরিয়ান। আসলে জিদান আমার ছোট বেলা থেকে আদর্শ ফুটবলার। তাই ছেলের নাম জিদান দিয়েছি। আর আমি শাহরুখ খানের ভক্ত। তাই ছোট ছেলের নাম আরিয়ান, শারুখের ছেলের নামে। তবে শাহরুখের ভক্ত হলেও আমি সাধারণত ওঁর অর্থবহ সিনেমা দেখতে পছন্ত করি। যেমন, ‘স্বদেশ’। তবে কী, আমার না, হল-এ গিয়ে সিনেমা দেখা হয়ে ওঠে না। ওটিটি প্ল্যাটফর্মেই দেখি। সেখানে শাহরুখ ছাড়া অন্যদের ফিল্মও দেখি। আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়েটস’ আমার যেমন খুব প্রিয় ছবি।
আমি আনন্দ করে থাকতে ভালবাসি। খুব ভুল করে রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছিলাম। পরে বুঝেছি ওটা আমার জায়গা নয়। এখন আমি একদম রাজনীতি থেকে দূরে।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।