কালীপুজোর দিন আমাদের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো হয়। আমি নিজেই সব আয়োজন করি। সকাল থেকে উপোস করি। রঙ্গোলি ও প্রদীপ দেওয়া হয় বাড়িতে। সুন্দর করে বাড়ি সাজাই। বিকেলে ঠাকুরমশাই পুজো করে দিয়ে যাওয়ার পর নিরামিষ খাওয়াদাওয়া হয়। রোজকার মতো এ দিনও আমি নিজেই রান্না করি। আমার বাড়িতে কোনও রান্নার লোক নেই। এ দিন বন্ধুরা অনেকেই আসে। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া হয়।
সারা শহর আলোয় আলোময় হয়ে থাকে এ সময়। বাজির আলো দেখতে অবশ্যই ভাল লাগে। তবে এ সময় বাতাসে যে পরিমাণে বারুদের গন্ধ ছড়ায়, ধোঁয়া ছড়ায় আর শব্দে শব্দে কান ঝালাপালা করে, সেটা মোটেও ভাল লাগে না। আর তা ছাড়া কুকুর-বিড়ালদের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায় শব্দ আর আলোর ফুলকিতে। এ সময় অসুস্থ মানুষ, বয়স্ক এবং শিশুদের খুবই সমস্যা হয়। শিশুরা শব্দ শুনে ভয় পায়, বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়েন। সত্যি বলতে কি, সাধারণ সুস্থ মানুষরাও নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হন। তাই এই সময় সবাইকে অনুরোধ করব, সবাই যেন অতিরিক্ত বাজি ফাটানো এবং নিষিদ্ধ শব্দবাজি সম্পর্কে সতর্ক থাকেন। পশুদের কথাও যেন মাথায় রাখেন। সচেতন থেকে অবশ্যই সবাই আনন্দ করুন।
কালীপুজোর পরেই চলে আসে ভাইফোঁটা। আরও এক উৎসব। আমার দাদা আছে, তাঁকে ফোঁটা দিতে যাই। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে শাড়িটাড়ি পরে হাওড়ায় যাই। আমার দাদা সেখানে থাকেন। আসলে আমাদের ফ্যামিলিতে সবাই ছেলে। আমি আর আমার এক দিদি, মানে আমার জ্যাঠার মেয়ে, আমরা এই দু’জন শুধু মেয়ে। বাদবাকি আমাদের দাদা-ভাই মিলিয়ে দশ জন। বেশির ভাগের থেকেই আমি ছোট। সে জন্য আমি ভীষণই আদরের। যেহেতু বেসিক্যালি সবাই দাদা, তাই আমার গিফট দেওয়ার চাপ খুব একটা নেই। আমার শুধু দু’জন ভাই আছে। তাদের আমি গিফট দিই। সবার থেকে আমিই গিফট পাই প্রতি বছর। ফোঁটা দিয়েই গিফট পাই। ক্যাটবেরি তো পাই-ই, পোশাক, ক্যাশ, ব্যাগ, পারফিউম... অনেক কিছুই পাই। এ বছরও অনেক কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আরও পড়ুন: বাড়িতে লন্ডনে তৈরি আড়াইশো বছরের পুরনো কালীর পুজো হয়: হানি বাফনা
আমার ব্যস্ততার জন্য সারা বছর কারও সঙ্গে দেখা হয় না। যখন কোনও পারিবারিক অনুষ্ঠান থাকে তখন দেখা হয় সবার সঙ্গে। ভাইফোঁটাও সে রকমই একটা দিন। যখনই দেখা হয় তখনই চুটিয়ে আড্ডা, খাওয়া দাওয়া... মানে বিশাল ব্যাপার।
আরও পড়ুন: কালীপুজোয় হয় লক্ষ্মীপুজো, চালের গুঁড়োর মূর্তি করেন মা: বিশ্বজিৎ
জ্যাঠার বাড়িতে সবাই আসে। সেখানেই জেঠিমা রান্নাবান্না করেন, সবাই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া হয় ভাইফোঁটায়। এ দিন শুধুমাত্র ভাইবোন নয়, পুরো ফ্যামিলির গেট টুগেদার হয়। জেঠিমার রান্নাঘরে তখন পিসিমা, কাকিমা সবাই রান্নাবান্না করে। সে একটা দেখার মতো ব্যাপার হয়। ফ্রাইড রাইস হয়, চিকেন হয় বা মটন বিরিয়ানি হল। বাড়িতেই এগুলো রান্না করেন সবাই মিলে।
সে দিন রান্নাঘরে আমাদের ঢোকার প্রশ্নই নেই। এ দিন ভাইবোনরা মিলে জোরদার আড্ডা, হাসাহাসি, গল্প চলতে থাকে।