Shiboprosad Mukherjee puja plan

‘মায়ের ধারণা ক’বছরের মধ্যে চাঁদের মাটিতে দুর্গা পুজো হবে’ বলছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

পুজোয় বাসি লুচি দিয়ে বেগুন ভাজা খেতে চান কার পরামর্শে! জানালেন তিনি।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:০৬
Share:

অভিনেতা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

করনো থেকে মুক্তির পর এ বছরই বলতে গেলে প্রথম পুজো। ঠিক করেছি এই পুজোতে খুব আনন্দ করব। কাছের মানুষদের সঙ্গে পুজো কাটাব। আমার মা, শ্বশুর, শাশুড়ি। সেই সঙ্গে অবশ্যই আমার স্ত্রী জিনিয়া। এই দলে থাকবেন আমার সকল কাজের সাথী নন্দিতাদি। আর আমার সেই সব সহকর্মী, যাদের সঙ্গে আমি সারা বছর কাজ করি। মূলত আড্ডা, হই হুল্লোড়, খাওয়াদাওয়া এই নিয়েই আমার পুজো।

Advertisement

ঠাকুর দেখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু এত ভিড়ের মধ্যে যেতে পারব না। একটা সময় মেসোমশাই বেঁচে থাকতে ঋতুদের (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ির পুজোয় দু’তিন বছর গিয়েছি। খুব আনন্দ করেছি। অঞ্জলি দিয়েছি। এ বছর ঋতুর সঙ্গে যদি পুজোর সময় বেরোনো যেত, বেশ হত।

এ বার পুজোটা আমার আর নন্দিতাদির কাছে খুব ‘বিশেষ’। কারণ পুজোয় আমাদের প্রোডাকশন হাউজ় উইনডোজ়-এর থেকে ১৯ অক্টোবর পঞ্চমীর দিন মুক্তি পাচ্ছে, আমাদের নতুন ছবি 'রক্তবীজ'। ২০১১ থেকে আমরা এক সঙ্গে ছবি করছি। কোনও দিন আমাদের পরিচালনার ছবি পুজোয় রিলিজ করেনি।

Advertisement

একটা কথা বলতে পারি। 'রক্তবীজ' ছবিটি করার কথা ২০১৪ সাল থেকে ভেবে রেখেছি। ওই বছর থেকেই অপেক্ষা করে আছি। এ হল এক রাষ্ট্রনায়কের জীবনী নিয়ে গল্প। ছবিতে অভিনয় করছেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়, অনসূয়া মজুমদার ও মিমি চক্রবর্তী। সিনেমা রিলিজ করলেও মন কিন্তু পুজোর সময় কাছের মানুষদের পাশে থাকার দিকেই থাকবে। তবে আমার মায়ের কথা হল, ‘চাঁদে চন্দ্রযান পৌঁছে গিয়েছে। এ বার না হলেও ক’বছর পরেই চাঁদের মাটিতে দুর্গা পুজো হবে। তোরা কে কে যাবি, সেই পুজো দেখতে, ঠিক কর।’

এখনও পর্যন্ত ১৯ জনের একটা তালিকা বানিয়েছি। পুরো হুজুক যাকে বলে! এই হুজুগের আনন্দটাই আসলে পুজো। ছোট বেলায় আমি থাকতাম বরাহনগরে। পড়তাম বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশনে। পুজোর ছুটির আগে স্কুলে একটা নাটক হত। সেই নাটকে আমি অভিনয় করতাম। খুব উত্তেজনা ছিল নাটক নিয়ে। মনে পড়ে, স্কুলে আমরা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'ভাড়াটে চাই' করেছি। রবীন্দ্রনাথের হাস্যকৌতুকের নাটকও করেছি। মাস দুয়েক আগে থেকে রিহার্সাল শুরু হত।

এক দিকে নাটকের রিহার্সাল, অন্য দিকে থাকত ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষার জন্য সিলেবাস শেষ করার চাপ। দুই-এ মিলে আশ্চর্য ভাবে পুজো আসত, যেত। ছেলেবেলায় রিকশা করে দাদা দিদির সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যেতাম। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকে দাদা আর দাদার বন্ধুদের সঙ্গে বরাহনগর থেকে বেরিয়ে বাগবাজার, আহিরীটোলা, কুমোরটুলি, মহম্মদ আলি পার্কের ঠাকুর দেখতাম। তারপর বাসে করে চলে আসতাম দক্ষিণ কলকাতায়। তখন একডালিয়া পার্ক, সিংহী পার্ক, ম্যাডক্স স্কোয়্যারের ঠাকুর দেখার পালা।

এক বছর ম্যাডাক্স স্কোয়্যারে একটি মেয়েকে দেখে খুব ভাল লেগেছিল। পরের বছর ম্যাডক্স স্কোয়্যারে গিয়ে আবারও তাকে দেখেছিলাম। কিন্তু তার পরের বছর আর তাকে খুঁজে পাইনি। এই হয়! পুজোর প্রেম বা ভাল লাগা পুজোতেই ছেড়ে আসতে হয়। তার রেশ ধরে রেখে লাভ নেই।

বরং বলা যাক জিনিয়ার কথা। জিনিয়ার সঙ্গে যখন প্রেমপর্ব চলেছে, তখন একবার পুজোয় আমরা সপ্তমীর দিন বেরিয়ে ছিলাম এক স‌ঙ্গে। চির কাল মনে থাকবে সেই সে দিনটার কথা।

একটা ব্যাপার বলি। পুজো এলে যেমন আনন্দ হয় তেমন একটা চিন্তাও কেমন পেয়ে বসে। বাড়ির যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তা হলে ভিড় পেরিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারবে তো! গত কয়েক বছর নানা জনের জন্য পুজোর সময় হাসপাতালে যাতায়াত করেছি। দেখেছি হাসপাতাল রোগী আছে, কিন্তু ডাক্তার তেমন নেই। মনে মনে কামনা করি, পুজোয় যেন কারও হাসপাতাল, ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্সের দরকার না পড়ে। সবাই যেন আনন্দে থেকে সুস্থ ভাবে পুজো কাটান।

এ বার পুজোয় আমার একটা বিশেষ সাধ আছে। ভিক্টরদা (বন্দ্যোপাধ্যায়) বলেছেন, বাসি লুচি দিয়ে বেগুন ভাজা খেতে নাকি দারুণ সুস্বাদু লাগে। এই স্বাদটা নেওয়া জরুরি। বাড়িতে ষষ্ঠীর দিন তো লুচি হবেই। ঠিক করেছি দু' চারটে লুচি বাঁচিয়ে রাখব। সপ্তমীর দিন সকালে বাসি লুচি আর বেগুন ভাজা খাব। খেতেই হবে।

অনুলিখনে: সংযুক্তা বসু

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement