‘‘এ বারও শাড়ি পরে, সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে মাকে বরণ করব। ওমের সঙ্গে সিঁদুর খেলব।’’
বিয়ের পর প্রথম দুর্গাপুজো। কত ভাবনা, কত পরিকল্পনা! প্রত্যেক বছর কলকাতাতেই থাকি। কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটাই। একটু-আধটু ঠাকুরও দেখি। কিন্তু এ বার ইচ্ছে করছে দূরে কোথাও যেতে। শহরের কোলাহল থেকে দূরে কোনও এক পাহাড়ি গ্রামে যদি শুধু ওমের সঙ্গে কাটানো যায় ওই চারটি দিন! আমরা দু’জনেই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ভোরবেলা বেরিয়ে যাই। রাতে যখন বাড়ি ফিরি, তখন আর কথাটুকুও বলার সময় থাকে না। খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়তে হয়। পরদিন আবার ভোর থেকে কাজের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। তাই সুযোগ পেলেই ওর সঙ্গে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। কিন্তু জানি না আদৌ সেই ইচ্ছে পূরণ হবে কি না। করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে অনেক কিছুই শুনছি। তাই এখনও টিকিটও কাটিনি। বসে আলোচনা করার মতো অবসরটকুও তো নেই!
বিয়ের আগের সঙ্গে বিয়ের পরের পুজোর যদিও বিশেষ কোনও তফাত নেই। তখনও ওম এবং আমার পরিবারের সকলের সঙ্গে সময় কাটাতাম। বেড়াতে না গেলে এখনও তা-ই করব। বিয়ের পর প্রচুর শাড়ি কিনেছি। কিন্তু কবে কী পরব, কী ভাবে সাজব, এখনও সেটাই ভেবে উঠতে পারিনি। তবে এ বার ভাবতে শুরু করব। পুজোর চারটি দিন মনের মতো করে সাজিয়ে তুলব নিজেকে।
পুজো মানেই বেশির ভাগের কাছে ঠাকুর দেখা আর খাওয়াদাওয়া। আমি প্রথমটা খুব একটা না করলেও দ্বিতীয়টা কিন্তু খুব মন দিয়ে করি। আমাদের পরিবারে সকলেই খুব ভোজনরসিক। কিন্তু তাঁরা পুজোর সময়ে রেস্তরাঁয় ওই লম্বা লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে একে বারেই রাজি নন। পুজোর চারটি দিন তাই নিজেরাই রান্না করি। বিরিয়ানি, চিকেন চাপ, তন্দুরি— কী থাকে না খাবারের তালিকায়! এ বারও কলকাতায় থাকলে হয়তো সেটাই হবে।
আমার কাছে পুজোর সবচেয়ে প্রিয় সময়টি হল সিঁদুর খেলা। আগাগোড়াই আমি সিঁদুর খেলতে খুব ভালবাসি। বিয়ের আগে শাড়ি পরে ঠাকুর বরণ করতাম। দশমীর ওই মুহূর্তটুকুর অপেক্ষা করতাম সারা বছর। বেড়াতে গেলে হয়তো বরণ করতে পারব না। কিন্তু সেটা না করতে পারলেও তো মন খারাপ হবে! এ বারও শাড়ি পরে, সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে মাকে বরণ করব। ওমের সঙ্গে সিঁদুর খেলব। বাইরে গেলেও তাই যে কোনও ভাবে দশমীর আগে ফিরে আসবই।