পুজো মানেই কলকাতা, স্মৃতিচারণায় সাহেব
আদ্যোপান্ত বাঙালি। অনুগামীদের ভিড়, লাইমলাইট তাঁর রোজনামচা। তিনি, টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য। যাঁর মিষ্টি হাসিতেই মাতোয়ারা অসংখ্য অনুগামী। এ বছর পুজোর প্ল্যান কী অভিনেতার? তার হদিস নিয়ে হাজির আনন্দ উৎসব।
কলকাতার পুজোর সঙ্গে কোনও ভাবেই আপস করতে রাজি নন অভিনেতা– “পুজোর সময়ে কলকাতার বাইরে কখনওই যাই না। আমার কাছে দুর্গা পুজো মানে কলকাতা। এ বছরও কলকাতাতেই থাকছি। পরিবার, আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি বাইরে থেকে বন্ধুরাও এই সময়টায় ছুটি নিয়ে আসে। তাই আমার কাছে পুজো মানেই রিইউনিয়ন।”
ছোটবেলার পুজোর কথা উঠলে আজও অভিনেতার চোখে ভাসে পাড়ার মণ্ডপ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে পুজোর অঞ্জলি কিংবা কৈশোরের প্রেম। সাহেবের কথায়, “তখনও থিম পুজোর চল ছিল না সে ভাবে। ডাকের সাজের প্রতিমা, একেবারে সাধারণ মণ্ডপ, মূলত সাবেকিয়ানায় মোড়া দুর্গাপুজো।” তিনি জানান, ছোটবেলার পুজোয় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল পাড়ার অনুষ্ঠান। “বিভিন্ন গায়ক-শিল্পীরা আসতেন অনুষ্ঠানে। পছন্দের শিল্পী থাকলে তাঁর অটোগ্রাফ নিতে যাওয়া- তখন তো আর সেলফি ছিল না! আর ছিল পাড়ার নাটকে হইচই করে অংশ নেওয়া। বড় দাদাদের হাতে হাতে কাজ, ভল্যান্টিয়ার হওয়া, বিসর্জনে ট্রাকের পিছনে নাচতে নাচতে যাওয়া– সবটার মধ্যেই জড়িয়ে ছিল এক অনাবিল আনন্দ। আসলে তখন জীবনটা খুব সরল ছিল। আর সেই যাপনের মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ,” স্মৃতিমেদুর অভিনেতা।
আর পুজোর প্রেম নিয়ে কী বলছেন অসংখ্য বাঙালি কন্যের হার্টথ্রব? সাহেবের কথায়, “প্রতি বছর পুজোয় নতুন নতুন প্রেম করলে তাকে আর প্রেম বলে ব্যাখ্যা করা যায় না। পুজোর মাহাত্ম্য এতটাই যে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধব নিয়ে মেতে উঠি। পুজো বলেই যে নতুন প্রেম করতে হবে, এমন তো নয়। প্রেম বছরের যে কোনও সময়েই হতে পারে। হ্যাঁ, কিশোর বয়সে পুজোয় এমন হত যে হয়তো কাউকে দেখে ভাল লেগে গেল। সে অন্য পাড়া থেকে আসছে। একসঙ্গে অঞ্জলি দিচ্ছি। আমরা কয়েক জন বন্ধু অপেক্ষা করছি, সে এল, মণ্ডপে ঢুকল। তার পরে হয়তো আমরা ঢুকলাম। তারও সঙ্গে বন্ধুরা। দুই বন্ধুদের দলে কথা চালাচালি হচ্ছে, কার কাকে ভাল লাগে! এই সব আর কি। কোনও রকম জটিলতা ছিল না তাতে।” অভিনেতার সংযোজন, “পুজোর প্রেমটা শুরু হত পাড়ার অনুষ্ঠানেই। ব্যাকগ্রাউন্ডে ভূমি বা নচিকেতার গান। সেই সঙ্গে কারও প্রতি ভাল লাগা, প্রেমে পড়ে যাওয়া। একসঙ্গে রোল, চাউমিন বা একটা আইসক্রিম, এটাই ছিল তখনকার প্রেম!”
তবে পুজোর স্মৃতিতে ভাললাগার সঙ্গে কিছু বেদনাও জড়িয়ে রয়েছে অভিনেতার। তাঁর কথায়, “গল্ফগ্রিনে থাকতাম তখন। এক বার আগুন লেগে গেল মণ্ডপে। নিমেষে সব পুড়ে ছাই। খুব কেঁদেছিলাম সে বছর, মনে আছে আমার। পাড়ার দাদারাও বিমর্ষ। সবারই খুব মনখারাপে কেটেছিল সে বারের পুজো।”
মা দুর্গার কাছে যদি চাওয়া যায় তিন বর, কী চাইবেন অভিনেতা? সাহেবের উত্তর, “আমাদের রাজ্য ও দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিপন্ন। আমি চাই তার উন্নতি হোক। দ্বিতীয়ত, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি খুবই বিপর্যস্ত জায়গায় রয়েছে। চাইব মানুষ আবার যেন আগের মতো হলমুখী হয়, সিনেমা দেখতে আগ্রহী হয়, সিনেমা ঘিরে উত্তেজনা যেন ফিরে আসে। আর তৃতীয় বর যেটা আমি সব সময় মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করি, তা হল আমার পরিবারের সুস্বাস্থ্য। আমার মা, বোন, ভাই, জামাইবাবু সুনীল ছেত্রী এবং আমাদের বাড়ির পরিচারিকা- সবাই যেন ভাল থাকে।”
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের অংশ।