ছবি- ফেসবুক
কখনও ছবির রিভিউ করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, তো কখনও মজার ভিডিয়ো করে অনুগামীদের মনে জায়গা করে নেন! সোশ্যাল মিডিয়া থেকে যাত্রা শুরু হলেও এখন টলি পাড়ায় কান পাতলে ‘বং গাই’ নামটা শোনা যাবেই। আপাতত বাংলার জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটারদের তালিকায় একেবারে উপর দিকেই নাম ‘বং গাই’ ওরফে কিরণ দত্তের। পুজো যখন একেবারেই দোরগোড়ায়, তখন তাঁর প্ল্যান কী? কাজের ব্যস্ততা নাকি দেদার মজা? ‘বং গাই’-এর ঝুলি খুলল আনন্দ উৎসবের কাছে।
পুজো মানে প্রতি বছরই বন্ধুদের সঙ্গে টইটই কিংবা বেড়াতে যাওয়া। বছরভর কাজ করলেও পুজোর সময়টায় এক্কেবারে ‘নো- কাজ’-এর মেজাজে থাকেন কিরণ। তাঁর মতে, বাঙালি হয়ে পুজোর সময়ে কাজ করা মানে কেরিয়ার খুব বাজে গ্রাফে যাচ্ছে। উৎসবের দিনগুলো একেবারেই নিজের পরিবার এবং বন্ধুদের জন্যই রাখতে চান ‘বং গাই’।
এ বছর এখনও পর্যন্ত বেড়াতে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা হয়ে ওঠেনি কিরণের। কারণ, বন্ধুরা প্রত্যেকেই কর্মসূত্রে ব্যস্ত। তবে শেষ মুহূর্তেও সুযোগ এলে ঠিক বেরিয়ে পড়বেন সবাই মিলে। ২০১৮-র পরে আর রাত জেগে ঠাকুর দেখা হয় না। কারণ বন্ধুদের অভিযোগ, ‘বং গাই’ পুজোতে তাঁদের সঙ্গে বেরোলেও ব্যস্ত থাকেন অনুগামীদের সময় দিতেই। উৎসবের ক’টা দিন না বেরোলে সময় কাটে আবাসনের পুজোয়। বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া এবং আশপাশের কিছু ঠাকুর দেখা, ব্যস! বাড়িতে সপ্তমী-অষ্টমী যতই নিরামিষ হোক না কেন, পুজোর ক’দিন বাইরের রোল, চাউমিন, বিরিয়ানি চাই-ই চাই!
নিজের বাড়ি নদিয়ার পুজোই এখনও বেশি টানে কলকাতার জাঁকজমকে ঠাসা পুজোর থেকে। ধুবুলিয়ার সেই পুজোই এখনও কিরণের মনের মতো। ছোটবেলায় ষষ্ঠীর দিন বাড়ি থেকে ২০০ টাকা দেওয়া হত। সেটাই গোটা পুজোর পকেট মানি। সে টাকা খরচও হয়ে যেত নিমেষে। বড় রিমোট দেওয়া গাড়ি কিনতে! আর তার পর সারা পুজো কাটত নয় দাদা, কিংবা তার বন্ধুদের ভরসায়।
ছবি- ফেসবুক
ছোটবেলায় অষ্টমীতে যত বার মণ্ডপে অঞ্জলি হত, তত বারই কিরণ ও তাঁর বন্ধুরা অঞ্জলি দিতেন। পারলে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে। কারণ একটাই। ছেলেদের স্কুলে পড়াশোনা করায় মেয়েদের কাছ থেকে দেখার এই তো সুযোগ! ধুবুলিয়ার সবথেকে বড় পুজোয় অষ্টমীর দিন বিভিন্ন পাড়া থেকে মেয়েরা শাড়ি পরে আসত অঞ্জলি দিতে। কিরণের যে সব বড় দিদিদের প্রতি ভাল লাগা ছিল, তাঁরাও আসতেন অঞ্জলি দিতে। সকাল ন’টায় অঞ্জলি শুরুর কথা থাকলে তাই ভোর ছ’টা থেকেই মণ্ডপে হাপিত্যেশ বসে থাকা। টুকরো হাসি, টুকরো কথা। ধুবুলিয়ার সেই দিনগুলো, দশমীর বিসর্জন এখনও স্মৃতিমধুর হয়ে আছে কিরণের কাছে।
ক্লাস ইলেভেন বা কলেজে ওঠার পরে ভালবাসা এসেছিল বটে, তবে সে সম্পর্ক টেকেনি। ছোটবেলার যে কিরণের অষ্টমী কাটত প্রেমের খোঁজে, বড় হয়ে সেই ‘বং গাই’-ই পুজোয় প্রেম থেকে ঢের দূরে। বরং ওই ক’টা দিন বন্ধুদের নিয়ে থাকতেই বেশি ভালবাসেন।
একান্তই নিজের জন্য তিনটি বর কী চাইবেন?
“তিনটে বর কেন, তিনটে বউ বল!”- নিমেষে উত্তর! কিরণের প্রথম চাওয়াই অবশ্য জীবনে এক জন বিশেষ মানুষ। নতুন করে আর প্রেম নয়, বরং একেবারে স্থায়ী কেউ জীবন সঙ্গিনী হোক, যিনি থাকবেন তাঁর সবটুকু ঘিরে। রাগ-অভিমান, নয় ভালবাসায় জীবন কাটবে- এমন কারও সঙ্গেই ঘর বাঁধতে চান ‘বং গাই’।
পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বাস্তবেও, মানুষ যাতে আর একটু সহিষ্ণু হয়- মা দুর্গার কাছে সেই প্রার্থনাই জানাবেন ‘বং গাই’। তাঁর মতে, আগে মানুষ বন্ধুত্ব করবে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসত। এখন সেই নেট পাড়াই ক্ষোভ উগরে দেওয়ার জায়গায় পরিণত হয়েছে। এটা বন্ধ হোক, চান তিনি।
তিন নম্বর বরে কিরণের একটা আবদার রয়েছে মা দুর্গার কাছে। তিনি চান, অনেক দিনের ইচ্ছা পূরণ করে এ বার যেন পছন্দের গাড়িটা কিনে ফেলতে পারেন!
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের অংশ।