''হাজার কাজ থাকলেও গ্রামের বাড়ির পুজো ছেড়ে আমি কোথাও যাব না''- বিশ্বনাথ বসু
আমার কাছে পুজো মানে একটাই, আমার দেশের বাড়ির পুজো। এখন আমার ৪৩ বছর বয়স। বসিরহাটের আড়বেলিয়া গ্রামের পুজো ছাড়া অন্য কোথাও পুজোর সময় যাব, ভাবতেই পারি না এখনও। জীবনের অনেকটা সময় ওখানে কাটিয়েছি। ছোটবেলার অনেক স্মৃতির মধ্যে বাড়ির পুজো অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে। হাজার কাজ থাকলেও গ্রামের বাড়ির পুজো ছেড়ে আমি কোথাও যাব না।
মাত্র এক বার দুর্গা পুজোয় গ্রামের বাড়িতে যেতে পারিনি। এ ছাড়া আর কোনও পুজো মিস করিনি। ষষ্ঠীর দিন গ্রামের বা়ড়িতে চলে যাই দশমী পর্যন্ত ওখানে থাকি। ষষ্ঠী থেকে দশমীর সকাল আমার কাছে দিনের মতো উজ্জ্বল আর পুজোর রাত মানে দশমীর রাত।
ছোট বেলার পুজোর কথা মনে পড়লেই আলো ঝলমলে গ্রামের ছবিটাই এখনও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমাদের গ্রামটা বেশ প্রত্যন্ত ছিল। তখন সারাদিন গ্রামে আলো থাকত না। শুধু পুজোর সময় আলো নিভত না।
ষষ্ঠীর দিন জেঠা, কাকারা আসতেন। বাড়ি জমজমাট হয়ে উঠতো।
পুজোর শপিং-এ বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া হত না। বাবা নিজেই সবার
জন্য জামাকাপড় কিনে আনতেন। বাবা যা কিনে আনতেন তাই আমরা খুশি হয়ে পরতাম।
একটু বড় হতেই পুজোর ভাললাগাটা অন্যরকম হয়ে গিয়েছিল। সামনের বাড়ির জানলা, সেখানে চেনা একটা মুখ। পুজোর সময়েই ওকে দেখা যেত। মাঝে মাঝে ওই জানলায় এসে দাঁড়াত। আমার চোখও বোধহয় ওই ক’দিন ওই মুখ টাকেই খুঁজে বেড়াত।
গ্রামের পরিবেশটাই তো অন্যরকম। সেখানে দু’জনে এক সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগই ছিল না। দশমীর দিন সেই মুখও মিলিয়ে যেত। পুজোর প্রেমের বয়স ওই চারদিন। কখনও গভীরে যায় নি।
এর পর কলকাতায় চলে এলাম। তখন অভিনয়ের টান। অভিনয় তখন প্রেম। কলেজে থাকা কালীন প্রেমে পড়েছি, কিন্তু কোনও প্রেমই দীর্ঘায়িত হয় নি। কলকাতায় থাকাকালীনও কোনও প্রেমই পুজোর সময় আমাকে আটকে রাখতে পারেনি। ওই চারদিন আমি ছুটে চলে যেতাম গ্রামের বাড়িতে। শুনলে অবাক লাগবে ওই চারদিন ছেলেমেয়েদের খবরও আমি রাখি না।
বাবা এখন নেই। জেঠা, পিসি দের অনেকেই আজ আর নেই। একটা মিষ্টি তেলের গন্ধ আজও আমাকে টেনে নিয়ে যায় গ্রামের বাড়িতে পুজোর সময় ওখানে গিয়ে আমি এখনও সেই তেলের গন্ধ পাই। বাবা মাখতেন ওই তেল। পুজো এলেই সেই গন্ধ পাই আমি।
মা দুর্গার কাছে আমার একটাই প্রার্থনা আমার মনোবল যেন তিনি বাড়িয়ে দেন। মনের দিক থেকে আমি যেন আরও শক্ত হতে পারি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় বলতে পারি, ‘মনেরে আজ কহো যে/ ভালো মন্দ যাহাই আসুক /সত্যেরে লও সহজে’।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের অংশ।