Durga Puja 2020

ভয় উড়িয়ে বাড়ির পুজোতেই ডবল মজা!

এ বারে আরও একটা জিনিস নতুন। ষষ্ঠী পর্যন্ত ‘জীবন সাথী’র শ্যুট থাকবে। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত ছুটি পাব।

Advertisement

ইন্দ্রাণী দত্ত

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২০ ১২:২৮
Share:

এ বছরের পুজো সত্যিই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বারোয়ারি পুজোকর্তাদের কপালে। নির্দিষ্ট মাপে প্রতিমা হতে হবে। তিন দিক খোলা মণ্ডপ হবে। নানা নিষেধ। আমার কিন্তু দারুণ মজা। বাড়িতেই পুজো। এ বছর যতই নিয়মের বেড়াজালে আটকাক সব কিছু, বাড়ির পুজোতে সব ছাড়। প্রতি বছরের মতোই মা আসবেন। আকাশে-বাতাসে যতটা খুশির ছোঁয়া, মনে তার ডবল।

Advertisement

বড় জোর মাস্ক পরব

প্রতি বছরের মতো এ বছরেও চারটে দিন বাড়িতেই। পুজো ছোট হল না বড়? তাই নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। করোনা ভুলে উৎসবে মাতব। শুধু একটাই জিনিস মানব কড়া ভাবে, বাড়িতে যখন আমন্ত্রিতরা আসবেন, মুখ ঢাকব মাস্কে।

Advertisement

এ বারে আরও একটা জিনিস নতুন। ষষ্ঠী পর্যন্ত ‘জীবন সাথী’র শ্যুট থাকবে। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত ছুটি পাব। অন্য বারে পুজো উদ্বোধন থাকে। এ বছর সম্ভবত কমই থাকবে। দু’একজন কথা বলেছেন। দেখা যাক। এটাই তো আমাদের পুজো বোনাস!

বিল্ডিংয়ের পুজো বাড়িতে

বাড়িতে পুজো। আমার শ্বশুর বাড়িতে কিন্তু আজীবন পুজো হয় না। আমরা যে বিল্ডিংয়ে থাকি সেখানে ধুমধাম করে পুজো হত। বিশেষ কারণে বিল্ডিংয়ে সেই পুজো বন্ধ হয়ে গেলে মা চলে আসেন আমার বাড়িতে। আমার ছাদে যেহেতু অনেকটা জায়গা তাই সেখানেই পুজোর ব্যবস্থা হয়েছে। তবে বিল্ডিংয়ের বেশ কিছু মানুষ নিজে থেকেই এই পুজোয় প্রতি বছর যোগ দেন। কাজ করেন। চারটে দিন কাটিয়ে যান একসঙ্গে।

পুজো মানেই চারটে দিন শুধুই আনন্দ।

সারা বছর কাজে ব্যস্ত। ষষ্ঠীর বোধন থেকে আমি পুজোয় ব্যস্ত। সাজানোর দায়িত্ব প্রতি বছরই আমার। ছোট থেকেই শুধু ঠাকুর না, খুঁটিয়ে ঝাড়বাতিও দেখতাম। তখন থেকেই মনে হত- পুজো মানে শুধু প্রতিমা নয়; মণ্ডপ, তার সজ্জা, আবহ-সবটা নিয়েই। তাই নিজে প্রতিমার মুখ পছন্দ করে অর্ডার দিয়ে আসি পটুয়া পাড়ায়। সবার পোশাকের ডিজাইনারও আমিই। প্রতি বছর তার সঙ্গে নাচের শো-এর রিহার্সাল থাকে। এ বছর সেটা নেই।

আরও পড়ুন: সিদ্ধি না খেলে পুজোই মাটি, এ বছর ট্রাই করব?

ভোগ থেকে খানাপিনা

সাজানোর পাশাপাশি এই দায়িত্বও আমারই। ষষ্ঠী থেকে তাই দম ফেলতে পারি না। ঢাকি, রাঁধুনির এই ক’দিনের ঠিকানা আমার বাড়ি। এ বছরেও ঢাকিরা থাকবেন। ওঁদের অংশ আমার মূল বাড়ি থেকে কিছুটা আলাদা। ফলে কারওরই সংক্রমণের ভয় নেই। তবে রাঁধুনি যাতায়াত করবেন। আর নিমন্ত্রিতরা তো থাকবেনই। এ বছর ভাগ করে দেব তাঁদের আসা-যাওয়া। যাতে বাড়িতে ভিড় না হয়।

ভোগের রান্না আমার রান্নাঘরে হয়। ব্রাহ্মণ এসে রান্না করেন। অতিথিদের রান্নাবান্নার জায়গা আলাদা। পুজোয় আমরা কত কী খাই। মা খাবেন না নাকি! তাই চার দিনে লুচি, পোলাও, রাইস, খিচুড়ি থাকেই। মায়ের ভোগের মেনু ঠিক করার দায়িত্বে আমার স্বামী আর এক মাসিমা। এবার আসি অতিথিদের খাওয়াদাওয়ায়। সপ্তমীতে খিচুড়ির সঙ্গে থাকে লাবড়া, বেগুনি, নারকেল ভাজা, চাটনি, মিষ্টি। অষ্টমীরে ভাত, শুক্তো, ডাল, ভাজা, পনীর-ছানা বা ধোঁকার ডালনা, আলু-ফুলকপির তরকারি। নবমীতে ঢালাও মাছ-মাংস। শুধু ষষ্ঠীর দিন বাইরের কেউ খান না এ বাড়িতে। মেনুর সঙ্গে মানানসই রকমারি চাটনিও হয়। যেমন, একদিন টমেটো, আমসত্ত্ব চাটনি। আর এক দিন কাঁচা আম দিয়ে। এই চাটনিটা আমার ভীষণ পছন্দের। মিষ্টি তো মাস্ট!

দুপুরে খাওয়া হল মানেই কিন্তু খাবারের পাট চুকল না। বিকেলে প্রতি দিন লুচি, আলুর দম, সুজি হবেই। রাতে খাওয়ার দলে হাতে গোনা কিছু মানুষ। তাই রাঁধুনির তখন ছুটি। তার বদলে হোম ডেলিভারি আসে বিরিয়ানি, চাইনিজ, মোগলাই খানা। ডায়েট পুরো জলাঞ্জলি!

নিজের বুটিক ‘ইন্দ্রাণী-সর্বাণী’ হওয়ার পর থেকে আমার যেন পোয়া বারো।

নাচ আছে গান আছে...

শুধু গান নয়, নাচও হয়। একবার অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় গান করেছিলেন বাড়ির পুজোয়। স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, ক্যাকটাসের পটা, আমার নাচের দল অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন। বিল্ডিংয়ের যাঁরা ইচ্ছুক, তাঁরাও কিছু না কিছু করেন। মোট কথা রোজ সন্ধেয় জলসা বসবেই। আমার মেয়ে রাজনন্দিনী গান গায়। বাচ্চাদের নাচ থাকে। নাটক থাকে। পুজো মানেই চারটে দিন শুধুই আনন্দ।

আরও পড়ুন: এই পুজোয় আমি, অভিমন্যু আর আমাদের সদ্য পাতা সংসার

মুড বুঝে সাজগোজ...

সারা বছর যথেষ্টই সাজি। তা বলে পুজোর সময় সাজব না! তার উপর বাড়িতে পুজো। সকাল থেকে শাড়িই পরি। এমনি শাড়ি বা লহেঙ্গা শাড়ি। বিকেলে হয়ত অন্য কিছু। আসলে মুড বুঝে সাজগোজ। নিজের বুটিক ‘ইন্দ্রাণী-সর্বাণী’ হওয়ার পর থেকে আমার যেন পোয়া বারো। যা কিছু কেনার, উপহার দেওয়ার- সবটাই বুটিক থেকে। এমনকী আমার বরের পাঞ্জাবিও আমিই ডিজাইন করে বানিয়ে দিই। পাশাপাশি, ক্যাজুয়াল পোশাকও কিনি।

গত দু’বছর ধরে দেখছি, মেয়েও নবমীর রাতে শাড়ি পরতে চাইছে! তার আগে বুক করে আমায়। বলে, তোমায় শাড়ি বেছে পরিয়ে দিতে হবে। সরস্বতী পুজোতেও একই ঘটনা। প্রেম ট্রেম করছে নাকি রে বাবা!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement