পুজো মানেই আট থেকে আশির হইচই। সারা বছরের সমস্ত দুঃখ, যন্ত্রণা সরিয়ে আনন্দে মেতে ওঠা। যতই রুপোলি পর্দার মানুষ হই, পুজো আমার কাছেও উদযাপনের সেরা উপলক্ষ। ভোর ভোর ওঠা নেই। মেকআপ করে ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়া নেই। জাস্ট চিল চিল....চারটে দিন নিজের মতো করে কাটানোর স্বাধীনতা।
বল দুগ্গা মাঈ কি...!!
ইতিহাস বলে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কলকাতার একাধিক পুজোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমি কোনও পুজো কমিটির সঙ্গে জড়িত নই। কিন্তু পুজোর চারটে দিন প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে আমিও কিন্তু দেদার ঠাকুর দেখি। বিশেষ করে রাতের বেলা। গাড়ি নিয়ে, বন্ধুদের নিয়ে চলে যাই সল্টলেকে। ওখানে দারুণ দারুণ পুজো হয়। অথচ রাস্তা, মণ্ডপ বেশ ফাঁকা ফাঁকা। খুব ভাল লাগে ওই পরিবেশ। তার পর রাস্তার ধারের ধাবা থেকে বিরিয়ানি। এর একটা আলাদা আকর্ষণ আছে। ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু শৌর্য ভট্টাচার্য, ওঁর ভাই আর দলবল মিলে একদিন বেরোই। আরেক দিন থাকে কলেজ গ্রুপ। আর একটা দিন আমি আর আমার ১৬ বছরের পুরনো বন্ধু।
এ বার মনে হচ্ছে, সেই আনন্দে জল ঢালবে করোনা। সংক্রমণ ক্রমশই বাড়ছে। এই অবস্থায় বাইরে বেরনোটাই বিপজ্জনক। ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা সম্ভবত হবে না। বিশেষ করে দূরের মণ্ডপ। নিশ্চয়ই দেবীমুখ দেখব। কাছাকাছি যে পুজো হয়, সেগুলো দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। বেশির ভাগ সময় হয়ত বাড়িতেই কাটবে। বন্ধুদের ডেকে নেব। কোয়ালিটি টাইম কাটাব মা-বাবা-দিয়ার সঙ্গে। ভিডিয়ো কনফারেন্সে আড্ডা চলবে কাছের দূরের, সকলের সঙ্গে। উৎসবে বাঙালি আড্ডাবিমুখ! ভাবাই যায় না।
আরও পড়ুন: পুজোর আগেই বন্ধ হয়ে যাবে 'কাদম্বিনী' ধারাবাহিক ভাবিনি!
আরও একটা জিনিস হবে না। ছোট থেকে আমার পুজো মানে খড়গপুর। বড় হওয়ার পরে কলকাতার সঙ্গে তাকে ভাগ করে নিয়েছি। ষষ্ঠী থেকে অষ্টমীর রাত পর্যন্ত তিলোত্তমার সঙ্গে। নবমীর ভোরে পৌঁছে যাই খড়গপুরের ডেভলপমেন্ট পাড়া। ওটা আবার মা-বাবা দু’জনেরই পাড়া। সেখানে একাদশী পর্যন্ত বাকি আনন্দ লুটে নেওয়ার পর্ব।
জানেন, ছোটবেলায় বিসর্জনের দিন টুক করে বসে পড়তাম লরি বা ট্রাকের মাথায়। বড় হওয়ার পর দেখলাম, ওই জায়গা দখলে চলে গিয়েছে আমার পরের ব্যাচের! কী আর করি। নেমে এলাম রাস্তায়। শোভাযাত্রায় জমিয়ে নাচতাম সবার সঙ্গে। অষ্টমীর ধুনুচি নাচে ফার্স্ট প্রাইজ বাঁধা ছিল।
পুজোর চারটে দিন প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে আমিও দেদার ঠাকুর দেখি।
অভিনয়কে পেশা বাছার পর ধীরে ধীরে নাচানাচির পর্বে ইতি। হঠাৎই একদিন আবিষ্কার করলাম, আমি নাচ শুরু করলে সবাই ভিড় জমিয়ে ফেলছেন আমার চারপাশে। বাকি বন্ধুরা সঙ্গে থাকলেও। সেদিন থেকেই ঠিক করলাম, নো নাচানাচি।
অনলাইনের রমরমা...
অতিমারির আগে থেকেই বেড়েছিল অনলাইন কেনাকাটা। কোভিড এসে সেই হিড়িকটাকে যেন আরও একটু উস্কে দিল। সারা বছর এ ভাবে ই-মার্কেটিং হয়ে যায়। তবু, পুজোর সময় একেবারেই কিছু কিনব না, সেটা হয়ত হবে না। তবে নিজের জন্য কিনব না এটা শিওর। অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন, অষ্টমীতে পরনে নিশ্চয়ই ধুতি-পাঞ্জাবি? উত্তর দিতে গিয়ে সত্যিই দ্বিধায় ভুগি। ‘নেতাজি’ হওয়ার দৌলতে প্রচুর ধুতি পরতে হয়েছে। তবু বিষয়টিকে হাতের মুঠোয় পুরতে পারলাম না! যত দিন না ঠিকমতো সামলাতে পারছি, তত দিন পাঞ্জাবির সঙ্গে জিন্স বা কুর্তি সঙ্গত করবে। ধুতি নয়। অবশ্যই উপহার দেব মা-বাবা আর দিয়া মুখোপাধ্যায়কে। যে সারাক্ষণ ভালবেসে আমায় সামলে চলেছে। কী দিই বলুন তো দিয়াকে? শাড়ি, না কি অন্য কিছু? শাড়িই মনে হয় বেটার চয়েস, তাই না? দেখা যাক, কতটা কী করে উঠতে পারি।
আরও পড়ুন: দশমীতে মাকে বরণ করে সিঁদুর খেলি, লোকে দেখে বলে শ্বেতা বিবাহিত!
জিরা রাইস...বিরিয়ানি মায়ের হাতে
ও হো! আমার এ বছরের পুজো স্পেশ্যাল তো জানানোই হয়নি এখনও। অতিমারিতে এখনও আমি বাইরের খাওয়ায় স্বচ্ছন্দ নই। সকলে যদিও অল্পবিস্তর শুরু করে দিয়েছেন। তবে আমি যেতে পারিনি। সেটা আমার বোকামি হতে পারে। কিংবা অতি সাবধানতা। কিন্তু তাই বলে ভাল-মন্দ খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে কোনও কম্প্রোমাইজ নেই। মা একদিন জিরা রাইস রাঁধছেন। তো আর একদিন বিরিয়ানি। রাঁধতে রাঁধতে ভালই হাত খুলেছে ! ফলে, আমি আশায় আশায় আছি, রেস্তরাঁয় না গিয়েও পুজোর ক’টা দিন ডান হাতের কাজটা জমেই যাবে।