Sohini Sengupta's Puja Plans

‘এ বার পুজোয় পালিয়ে যাব’, বললেন সোহিনী সেনগুপ্ত

কোথায়? কেন? কী জন্য?

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৩
Share:

মা চলে যাওয়ার পর থেকে দুর্গাপুজো বলে কিছু নেই আমার জীবনে। আমার মা, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-ই আমার কাছে আস্ত একটা দুর্গাপুজো।

Advertisement

ঠিক কী বলতে চাইছি আমি?

এই যেমন অষ্টমীর অঞ্জলি। মা না খেয়ে, সব নিয়ম মেনে সেদিন পুজো দিত। মা তো আর নেই। চলে গিয়েছে। এখন অঞ্জলি শুনলে আমার ভাল লাগে না।

Advertisement

দুর্গাপুজো মানেই সকালবেলা মায়ের সঙ্গে পায়ে হেঁটে ঠাকুর দেখা। মায়ের অসম্ভব সময় জ্ঞান। আমি ঠিক উল্টো। দেরি করলে রেগে যেত। উত্তরের সিমলা ব্যায়াম সমিতি আর মহম্মদ আলি পার্কের ঠাকুর দেখতে আমার সবচেয়ে ভাল লাগত। বিশেষ করে মহম্মদ আলি পার্কের ঠাকুর।

একদিন ঠাকুর দেখা হল তো পুজোর শেষদিন রান্না। বিজয়ার দিন ভোরবেলা উঠে নারকেল কুরতে বসত মা। আমার দিদিমা মীরা মুখোপাধ্যায় যখন ছিলেন, উনিও মায়ের সঙ্গে কাজে লেগে পড়তেন।

মা-বাবার ততটা রোজগার ছিল না তখন। নতুন জামা তেমন হবে কোত্থেকে! জামার কাপড় কিনে সেলাই মেশিনে বুকের কাছে ফ্রিল দেওয়া জামা বানিয়ে দিত। ওটাই পুজোর জামা। তবে অনেকটা কাপড় কেনা হত। আমাদের বাড়িতে আমার সঙ্গে যে মেয়েটি থাকত, মা তাকে আর আমাকে একই কাপড়ের একরকম জামা বানিয়ে দিত। আজও পুজোর জন্য আমার যে ক'টা শাড়ি হয়, আমার বাড়ির কাজে রূপালি বলে যে মেয়ে আমায় সাহায্য করে, তারও ততগুলো শাড়ি হয়।

বিজয়া পড়লেই আমার বাবা (রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত) আর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চলে আসত গৌতমদা (হালদার), দেবুদা (দেবশঙ্কর হালদার), দলের আরও অনেক লোকজন।

২০২১-এ মা চলে যাওয়ার পরে আর নিমকি বা নাড়ু খাই না। চাইও না আমি। এমনকি মহালয়াও শুনি না। মা শুনত। আমার দিদিমাও। দু'জনকেই হাউহাউ করে কাঁদছে দেখেছি ওই সময়। মা চলে যাওয়ার পর আমি আর সপ্তর্ষি মহালয়া শুনতে চেষ্টা করেছিলাম। অসম্ভব! খুব কষ্ট হয়। যেমন নবমীর দিন আমি আর নাটক করতে পারি না। মা করত যে!

লিখতে গিয়েও খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। মনে পড়ছে, অ্যাকাডেমি নবমীর দিন নাটক শেষ হলেই আমরা দলের গাড়ি চেপে ক্লান্ত অবস্থাতেও পুজোর আলো দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরতাম। মা মাঝে রাস্তার কোনও একটা দোকান থেকে চা খেত। তারপর বাড়ি। মধ্য রাত। আমি, মা আর আমার দিদিমা আমাদের বিবেকানন্দ রোডের বাড়ির বারান্দায় বসে পুজোর আলো দেখতাম। লোক দেখতাম। মা বলত, ‘ওই দেখ, মেয়েটা কেমন খুঁড়িয়ে হাঁটছে। নিশ্চয়ই নতুন জুতো।’

রাত ভোরের দিকে এগিয়ে গেলে আমরা তিনজনে খোলা গলায় গান ধরতাম। রবীন্দ্রসংগীত। বাবাও এসে যোগ দিত। আমার দিদিমার প্রাণ ছিল রবীন্দ্রনাথের গান। আমি মজা করে কানের কাছে পিঙ্ক ফ্লয়েড গাইলে মুখ ব্যাঁকাতো!

দুর্গাপুজোর আলো দেখব না বলেই এবার আমি আর সপ্তর্ষি উত্তরবঙ্গে পালাব। পাহাড় দেখব। পাহাড়ের কাছে একা বসে কথা বলা যায়।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement