সাত-আট বছর ধরে আমি পুজোয় কলকাতা থাকছি না। পুজোয় সাধারণত দেশের বাইরেই সময় কাটাই। এই বছরও তাই করব।
আমি এবং আমার সব থেকে কাছের বন্ধু আমার মা, ঘুরতে যাচ্ছি। মা’কে বাদ দিলে আমার খুব কাছের বলতে দু’জন বন্ধু আছেন — নারায়ণ সিংহ এবং সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তারা অবশ্য কোথাও যাচ্ছে না।
আমার বাড়িতে অনেক গুলি পোষ্য আছে। আমি যখন বাইরে থাকব, সেই সময়টা ওরা ন্যানির সঙ্গে থাকবে। বিগত সাত-আট বছর ওরা পুজোর সময়টা ন্যানির সঙ্গে থাকে। ন্যানি আমাদের বাড়ির সবটা সামলায়। আামাদের সঙ্গে বেশ অনেক দিন হল আছে। এখন ও বলতে গেলে আমাদের বাড়িই একজন সদস্য।
পুজোয় আমার কলকাতায় না থাকার আর একটা কারণ হল, এখনকার কলকাতার পুজো আমার ঠিক ভাল লাগে না। বলা ভাল, আমায় ঠিক টানে না। মনে হয়, সবটা কেমন যেন ব্যবসা-ব্যবসা হয়ে গিয়েছে।
পুজোকে আমার ঠিক সিনেমা বা সিরিয়ালের মতো করে দেখতে ভাল লাগে না। তাও, ষষ্ঠী অবধি আমি কলকাতায় থাকি। ওই সময়ের মধ্যে পুজো উদ্বোধনে যাই, এ বছরেও যেমন কিছু প্ল্যান আছে। তখনই কিছু ঠাকুর দেখা হয়ে যাবে।
এমনিতেই ১০-১২ বছর আগে থেকেই আমার প্যান্ডেল ঘুরে ঠাকুর দেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একটা সময় বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এদের সঙ্গেই পুজো কাটাতাম। যাদের সঙ্গে সাধারণত সারা বছর দেখা হয় না, তাদের নিয়ে সময় কাটাতাম। প্রচুর খাওয়া দাওয়া, আড্ডা এইসব চলত। পুজোর সময় খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা মানি না। আগে পুজোর সময় ছুটি থাকত। এখন কলকাতায় থাকলে সেই ছুটিটাও পাই না। সেই কারণেও আরওই বাইরে চলে যাওয়া।
এই সাত-আট বছর আগে পর্যন্ত কিন্তু আমি পুজোয় কলকাতাতেই থাকতাম। আমার ছোটবেলায় পুজো আর এখনকার পুজোর মধ্যে অনেক ফারাক। ছোটবেলায় সারা দিন সারা রাত জেগে পাড়ার পুজোয় থাকতাম। কিন্তু যবে থেকে পুজোর চরিত্রে একটা বাঁক এল, আমি নিজেকে পুজো থেকে সরিয়ে নিয়েছি। যে পুজোগুলি হারিয়ে ফেলেছি, আমার মন বরং তাকে খুঁজে বেড়ায়।
আমি কলকাতার পুজোয় আর কোনও উৎসাহ পাই না। তাই প্রতিবারের মতো এবারও পালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কোথায় যাচ্ছি, জানতে চাইলে কিছুতেই বলব না। ওটা গোপন থাক। চমক থাক।
অনুলিখন: মেঘদূত
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।