এই বছর 'অর্ধাঙ্গিনী' ও ' রকি আউর রানি কি প্রেম কহানি' ছবিতে আমার অভিনয় প্রশংসা পেয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু আসল কথা হল কাজ। কাজটা চালিয়ে যাওয়া। এ বছর খুবই ব্যস্ত ছিলাম নানা কাজে।
তারই মধ্যে পুজো এসে গেল। পুজোকে আমি একটা ব্রেক হিসেবে নিতে চাই, যাতে আবার নতুন করে কাজ শুরু করার উদ্দীপনা পাই। বন্ধুবান্ধব আর পরিবারকে নিয়ে পুজো কাটাব।
পুজোয় একবার আমরা পুণে- মহাবালেশ্বর গোয়া গিয়েছিলাম। অষ্টমীর দিন মহাবালেশ্বরে এক প্রতিমা দেখেছিলাম, যা কলকাতার যে কোনও আর্টওয়ার্কের চেয়ে অন্য রকম। আশ্চর্য দৃশ্য। মেঘের কোলে, পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে রয়েছেন প্রতিমা।
ছোটবেলায় কার্শিয়াংয়ের ডাওহিলের নির্জন জায়গায় যখন থাকতাম তখন পুজো কাটত একদম নিজেদের মতো করে। বাবা-মা চাকরি করতেন ভিক্টোরিয়া বয়েজ স্কুলে। সেখানে কোয়াটারে থাকতাম আমরা। স্কুলের কম্পাউন্ডে বিরাট হলে পুজো হত। বড়রা সব মিলিয়ে একশো জন মতো। আর আমরা ছোটরা দশ-বারো জন।
কার্শিয়াঙে বর্ষাকাল চলত এক টানা বহুদিন। সেই বর্ষা পেরিয়ে যখন শরৎকাল আসত ঝলমলে রোদ্দুর নিয়ে, তখন চারপাশে যেন আনন্দের পরিবেশ। তার মধ্যে পুজো। তখন নতুন জামাকাপড়ের দিকে কোনও মন ছিল না। আনন্দটাই মুখ্য ছিল।
এর পর পনেরো-ষোলো বছর বয়সে যখন কলকাতা এলাম পুজোর ভিড় দেখে চমকে গিয়েছিলাম। প্রথম প্রথম ভিড়ের জন্য বেরোতাম না। তার পর যখন কলেজে উঠলাম বেরোতাম। বন্ধুদের সঙ্গে। সে মাইলের পর মাইল হাঁটা।
উজানকে (ছেলে) নিয়ে ও যখন ছোট ছিল ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি। অনেক সময় সারা রাতও ঠাকুর দেখেছি। এখন উজান ওর বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরোয়। কলকাতায় এখন যে কমপ্লেক্সে থাকি, সেখানে বেশ বড় পুজো হয়। কখনও কখনও মাঝ রাতে গিয়ে ঠাকুর দেখে আসি। পুজোর ক’টা দিন খাবার কখনও বাড়িতে রান্না হয়, কখনও বাইরে থেকে আসে। প্রত্যেক দিন স্পেশাল রান্না। রান্না নিয়ে সব থেকে মাথা ঘামায় কৌশিক (গঙ্গোপাধ্যায়)। রান্না কী হবে, সেটা ও-ই বলে দেয়। পুজো বলে নয়। সারা বছরই। পুজোর আগে উজানের জন্মদিন পড়ে। সেই সময় ওকে জামা কিনে দিতে গিয়ে একটু কেনাকাটা হয়।
সমস্ত লোকাচারের মধ্যে ধুনুচি নাচ আমার সব চেয়ে ভাল লাগে। ছোটবেলায় কার্শিয়াংয়ে আমরা ছোটরা একটু আধটু ধুনুচি নাচ করতাম। আর বড়রা তো কথাই নেই। কেউ কেউ খুব ঝুঁকি নিয়ে ধুনুচি নাচতেন। আগুনের জ্বলন্ত টুকরো পায়ে এসে পড়ত, তাও নাচ থামত না।
একবার চালতা বাগানের পুজোয় সিঁদুর খেলতে গিয়ে ভালই লেগেছিল। সমাজের সর্বশ্রেণীর নারীরা যোগ দিয়েছিলেন সেই খেলায়।
একটা ব্যাপার, আমি সিঁদুর খেলা-য় থাকি না, বিশেষ কারণে। কেবল ভাবি, সিঁদুর খেলায় কেন শুধু সধবারাই অংশ নেবেন? সব মেয়েরাই তো যোগ দিতে পারেন।
এই বিভাজন কেন থাকবে উৎসবের দিনে? আর শুধু মেয়েরাই বা কেন? পুরুষেরা তো যোগ দিতে পারেন।
অনুলিখন: সংযুক্তা বসু
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।