অঙ্গনা রায়ের ভৌতিক অভিজ্ঞতা
কার্শিয়াং-এর ডাওহিল সম্পর্কে ভূতুড়ে আখ্যান শোনেননি, এমন খুব কম মানুষই রয়েছেন। আমিও শুনেছিলাম এই জায়গাটি সম্পর্কে এমন অনেক কিছুই। কিন্তু ওই যে, কৌতূহল মানুষের সহজাত প্রবণতা! আর তাতেই হল কাল! খোলসা করেই লিখছি, ভয় পাবেন না তো?
ঘটনাটি প্রায় ৩ বছর আগের। পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিকের ‘লুকোচুরি’ ছবির শুটিং করতে আমরা পুরো টিম গিয়ে উঠেছিলাম সিটং-এ। ওই দিন ছিল গান্ধী জয়ন্তী। আমাদের শুটিং শেষ হওয়ার পর খুব ইচ্ছে করছিল অন্যান্য জায়গা ঘুরে দেখতে। এখানে বলে রাখি, যখন ছবির রেইকি সারা হয়েছিল, তখনই শুনেছিলাম, সেখানে এমন একটা জায়গা আছে যাকে ঘিরে অনেক অলৌকিক কথাই প্রচলিত আছে। আমাদের আগ্রহ তখন তুঙ্গে। ঠিক হল সেখানেই যাব ঘুরতে। জায়গাটা আর অন্য কিছুই নয়, সেই ডাওহিলের রাস্তা। অনেক কিছু শুনেছি এই জায়গাটার সম্পর্কে। কিন্তু সেই দিন আমাদের মধ্যে ভূত খোঁজার ভূত চেপে বসেছিল।
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত সাড়ে ১০টা। আমার এখনও মনে আছে, আমাদের গাড়ির সামনের সিটে বসে আছেন সাহেব চট্টোপাধ্যায়, আমার দুই পাশে পরিচালক এবং ডিওপি। আর একদম পিছনে আমাদের হোমস্টের মালিক এবং ওই ছবির আরও দুই অভিনেতা।
আমরা অনেকক্ষণ ধরে শুধু যাচ্ছি আর যাচ্ছি। একটা সময়ের পর সামনে আর কোনও বসতি নেই। একটা কালী মন্দির পেরিয়ে শুধুই ঘন জঙ্গল। এতটাই ঘন যে আমি আমার পাশের সিটে বসা কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। গাড়ির হেডলাইট বন্ধ করার পর তো সবটাই কালো! গাড়িচালক আমাদের বার বারই বলছিলেন যে একটা নির্দিষ্ট সীমানার পর আর গাড়ি এগোবে না। আমরাও ভাবলাম পরের দিন ভোর বেলা শুটিং-এর কল টাইম। কাজেই ফিরে যাওয়া যাক।
এমন সময়ে যেই হেডলাইটটা আবার জ্বালানো হল আমার কানে স্পষ্ট ঘুঙুরের আওয়াজ এল। ছন ছন ছন ছন! কোনও পোকা নয়, বা অন্য কিছু নয়। আমি ভয়ে কাঠ হয়ে যাই খানিক ক্ষণ। কোনও কথা বলিনি কারও সঙ্গে। মাথায় এক বার যুক্তি খেলল, আমার মনের ভুল বোধ হয়। কিন্তু কী মনে হল, ফেরার পথে আমি জিজ্ঞাসা করলাম সবাইকে আর কেউ শুনেছে কিনা। বিশ্বাস করুন, কেবল সামনের সিটে বসা সাহেবদা এবং আমাদের গাড়িচালক বাদ দিয়ে সকলের কানেই ওই আওয়াজ এসেছে। সবাই প্রথমে ভেবেছিল ভুল শুনছে। কিন্তু আমি শেষমেশ জিজ্ঞেস করায় বোঝা গেল, ওই শব্দটা সত্যিই হয়েছে। অত রাতে ওই ঘন জঙ্গলে ঘুঙুর পরে কে ঘোরাফেরা করবে? বুঝতে পেরেছিলাম, সে দিনের সেই আওয়াজটা নিছকই আমার মনের ভুল ছিল না।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।