Ananda Utsav 2024

পুরুষ হিসেবে এত লজ্জা কখনও পাইনি, এ বারের পুজোও তাই একেবারে আলাদা, লিখলেন ঋতব্রত

এ বছরের দুর্গাপুজো তাই আর আগের মতো উল্লাসের নয়। এতটা খারাপ লাগা, এতটা ভেঙে পড়া আগে বোধ করিনি। মানুষ হিসেবে, পুরুষ হিসেবে, পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক হিসেবে এত লজ্জা আগে কখনও পাইনি।

Advertisement

ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:০৯
Share:

অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়

পুজো মানে কেবলই আনন্দ, মুক্তি। সারা বছর মানুষ একটা কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকে। রোজের গ্লানি, না-পাওয়া, সব ধুয়ে মুছে যায় পুজোর সময়ে। মানুষ মন থেকে ভাল থাকতে চায় এই সময়টায়। সব বিরক্তি, রাগ, দুঃখ ভুলে। পুজোর সময়ে নানা ধরনের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়। বিশেষত, আমাদের মতো একটি রাজ্যে বা দেশে, যেখানে সংগঠিত সেক্টর এতটাই কম। পুজোর মতো একটা অসংগঠিত সেক্টরেও কিন্তু কাজ তৈরি হয় অনেক বেশি। আমাদের মতো অভিনেতা, শ্রমজীবী মানুষ সকলেই এই সময়ে রোজগারের স্বপ্ন দেখেন। যে সময়ে মানুষ সুন্দর স্বপ্ন দেখে, সেই সময়টা যে সুন্দরই হবে। আমার কাছে দুর্গাপুজোর অর্থ এটাই। সুন্দর, আনন্দের।

Advertisement

এত দিন অন্তত তা-ই ছিল। কিন্তু এ বার?

যখন আমি বলছি, ‘উৎসবে ফিরছি না’, তার মানে কিন্তু এটা নয় যে আমি পুজোয় কোথাও বেরোব না। এটার অর্থ এ-ও নয় যে, অভিনেতারা ছবিমুক্তি বন্ধ করে দেবেন বা গানমুক্তি বন্ধ করে দেবেন। উৎসবে না ফেরার যে শব্দবন্ধ লোকের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে, তার অর্থ খানিক ভিন্ন। উপর মহল থেকে বলা হচ্ছিল, আন্দোলন ভুলে গিয়ে সম্পূর্ণ রূপে আনন্দে মেতে উঠতে। মানুষ সেই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছিল।

Advertisement

প্রকৃত অর্থে ‘উৎসব’ যাকে বলি, তা শুরু হয়ে গিয়েছে গত ৯ অগস্টের পর থেকেই। সেই ‘উৎসব’ মানে সুন্দর আলো লাগিয়ে, জমকালো পোশাক পরে আনন্দ করা নয়। এই ‘উৎসব’ সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের এক রূপ। সমস্ত ধর্ম আমাদের শেখায় অন্যায়ের দমন করা এবং ঘৃণাকে অতিক্রম করা। আমার দেশের মানুষ, রাজ্যের মানুষ, সারা বিশ্বের সচেতন, সহমর্মী মানুষ প্রমাণ করে দিয়েছেন, উৎসবের জন্য সব সময়ে প্যান্ডেল খাটানোর প্রয়োজন পড়ে না।

এ বছরের দুর্গাপুজো তাই আর আগের মতো উল্লাসের নয়। এতটা খারাপ লাগা, এতটা ভেঙে পড়া আগে বোধ করিনি। মানুষ হিসেবে, পুরুষ হিসেবে, পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক হিসেবে এত লজ্জা আগে কখনও পাইনি। একইসঙ্গে বাঙালি হিসেবে, অভিনেতা হিসেবে, নাট্যকর্মী হিসেবে, ছাত্র হিসেবে। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এত গর্বও আগে কখনও হয়নি। দশভুজার ১০টি হাতে ১০ অস্ত্র, সাধারণ মানুষ এখন সেই অস্ত্রের জায়গা নিয়ে নিয়েছেন।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement