‘অন্ধকার ঘরের কোণটায় কীসের যেন ছায়া।’
আমি কিন্তু মোটেই ভূতে বিশ্বাস করি না। যাকে বলে, ভী-ষ-ণ সাহসী মানুষ! তাই বোধহয় সে আমায় নিজেই দেখা দিয়ে গিয়েছিল। তাতে আবার যে সে ভূত নয়, বাচ্চা ভূত। মজা করছি বটে। তবে সত্যিই আজও জানি না, সেই রাতে যাকে দেখেছিলাম সে কি মানুষ, নাকি অন্য কিছু। নাকি পুরোটাই নিছক মনের ভুল!
তখন ‘কোজাগরী’র শ্যুটিং চলছে। এক রাতে আমাদের বারুইপুর রাজবাড়িতে শ্যুট। ফটক পেরিয়ে রাজবাড়ির পিছন দিকটায় পর পর কয়েকটা ঘর। আমাদের সাজগোজ-বিশ্রামের অস্থায়ী ঠিকানা। সেখানে রাজবাড়ি চত্বরের মধ্যেই একটা আলাদা মতো ফাঁকা বাড়ি ছিল। পোড়ো বাড়ির মতো। লোকে বলে, সেটাই নাকি ভূতের ঠিকানা! তখন শট শুরু হতে বেশ খানিকটা দেরি। ব্যস! ভূত দেখার ইচ্ছেটা পেয়ে বসল সঙ্গে সঙ্গে।
যেমন ভাবা, তেমনি কাজ! বাইরে এক জনকে দাঁড় করিয়ে ঢুকে পড়লাম ভিতরে। সিঁড়ি দিয়ে উঠছি। এক-একটা ল্যান্ডিংয়ে ছোট ছোট জানলা। প্রথম জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে কথা বললাম। নীচে দাঁড়ানো বন্ধু বলল— ‘সিঁড়িটা ভাল করে দেখেশুনে উঠিস, ভেঙেটেঙে না পড়ে’! আমিও আশ্বস্ত করে দিলাম, দিব্যি পরিষ্কার, শক্তপোক্ত সিঁড়ি। দোতলা পেরিয়ে উঠছি। এ বার ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না।
অন্ধকারেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে একটা করিডরে পৌঁছলাম। অন্ধকারে চোখ পড়ল একটা আধখোলা দরজায়। উল্টো দিকে একটা ছোট্ট জানলা দিয়ে সামান্য আলো আসছে। আধো আলোয় দেখি দরজার ফাঁক দিয়ে একটা পালঙ্ক দেখা যাচ্ছে। সেকেলে চেহারা, পুরনো আমলের নকশা। কই, কোথাও কিচ্ছু নেই! কে বলে ভূত আছে! সাতপাঁচ ভেবে সবে নীচের দিকে পা বাড়াব। ঠিক তখনই ফের চোখ পড়ল খোলা দরজার ফাঁকে।
অন্ধকারে ঘরের কোণটায় কীসের যেন ছায়া! ভাল করে নজর করে দেখি, একটা বাচ্চা। ওই অন্ধকারে স্পষ্ট মনে হল, সে যেন আমার দিকেই তাকিয়ে। অন্তত ছায়ার কান দুটো তো তা-ই বলছে! কিন্তু এই অন্ধকারে, এমন জনমানবহীন বাড়িতে বাচ্চা আসবে কোথা থেকে! তবে কি...! গা টা ছমছম করে উঠল!
নাঃ আর সাহস করে কাজ নেই, সোজা নীচে যেতে হবে। মনে পড়ল, ছোটবেলায় মা-ঠাকুমারা বলত, ভূতেদের দিকে নাকি পিছন ফিরতে নেই! অগত্যা ঘরের দিকে মুখ করেই এক পা, এক পা করে পিছু হটে সোজা নীচে!
নীচে এসে কিন্তু কাউকে কিচ্ছুটি বলিনি। কে জানে কী দেখেছি! লোকে শুনলে তো হাসতেও পারে! যেন কিছুই হয়নি, এমন মুখ করে শ্যুটিংয়ের দলে ভিড়ে গেলাম আবার। ওই ধারাবাহিকে আমার সঙ্গে ছিল অপাদি, মানে অপরাজিতা ঘোষ দাস। শটের ফাঁকে গল্পগুজব চলছে, অপাদি হঠাত্ বলল— এখানেই ওর আগের এক ধারাবাহিকের শ্যুটিংয়ে কারা যেন বলেছিল, এ বাড়িতে এক বাচ্চা ভূত আছে। শুনেই চমকে উঠেছি! আমিও কি তবে তাকেই দেখলাম? মুখ খুলিনি অবশ্য।
পরে শুনলাম, আমাদের শ্যুটিংয়ের দলেও কারা যেন ভূত নিয়ে আলোচনা করছিল। ওরাও কি তবে কিছু দেখেছিল? কে জানে!