‘আমি কিন্তু ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা পাইনি আজও।’
ভূতেরা কি কাউকে দেখা দেন? জানি না বাবা! আমি অন্তত দেখিনি। তবে অতীতে কিছু গা ছমছমে অভিজ্ঞতায় বুঝেছি, এ সব ‘তাঁদেরই’ কাজ। ওই, রাতে কিংবা বারবেলায় যাঁদের নাম নেওয়া বারণ! লোকে বলবে— দূর! মনের ভুল! আমি কিন্তু ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা পাইনি আজও।
সময়টা ২০০০ কিংবা ২০০১ সাল। তমাল রায়চৌধুরীর পরিচালনায়, এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে জোট বেঁধে নাটক করছিলাম আমরা। পুরনো এক চার তলা বাড়িতে দলবেঁধে প্রথমে কর্মশালা, তার পরে মহড়া। সে দিনও তা-ই চলছিল। আমরা কয়েক জন গিয়েছিলাম চার তলার ছাদে, চিত্রনাট্য জেরক্স করাতে। সে কাজে সময় লাগবে বহু ক্ষণ। এ দিকে, নীচে কর্মশালা চলছে। অগত্যা আমি একাই নেমে আসছিলাম সিঁড়ি বেয়ে।
‘বন্ধুদের বলেছিলাম, এ বাড়িটায় নির্ঘাত ভূত আছে!’
তখন সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে। একেবারে একতলায় নাটকের দলের হইচই। আর ছাদে জেরক্সের দোকান। মাঝের তিনটে তলা সুনসান হয়ে গিয়েছে। পুরনো দিনের বাড়ি। সিঁড়িটাও বেশ অন্য রকম। এক একটা তলা থেকে বেশ কয়েক ধাপ সিঁড়ি নেমে একটা করে বারান্দা মতো। তারপর কয়েক ধাপ সিঁড়ি নেমে ল্যান্ডিং। ফের কয়েকটা সিঁড়ি পেরিয়ে নীচের তলা। অন্ধকারে সেই সিঁড়ি দিয়ে ছাদ থেকে নামছি। প্রথম বারান্দা মতো জায়গাটায় পৌঁছতেই পায়ে একটা অদ্ভুত টান ধরল। তখন আমি নিয়মিত খেলাধুলো করি, তরতরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে সর্বক্ষণ নামাওঠাই অভ্যাস। এ জিনিস আমার হওয়ার কথা নয়। পায়ে হাত ঘষতে ঘষতেই সিঁড়ি দিয়ে নামছি। ফের পরের বারান্দাটার কাছে পৌঁছতেই নতুন করে টান ধরল। এবং তিন নম্বর বারান্দাটার কাছে পৌঁছে আরও এক বার। যন্ত্রণায় তত ক্ষণে সিঁড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে নামার অবস্থা চলে গিয়েছে। অগত্যা বসে বসে সিঁড়ি দিয়ে নামছি। এ দিকে, লজ্জাও করছে। কেউ দেখলে কী ভাববে! শেষ ল্যান্ডিংটায় পৌঁছে ভাবলাম, যা হয় হোক, পায়ে হেঁটেই নামব। এক তলায় আলো জ্বলছে। বাকি সবাই ওখানেই। কোনও মতে পা টেনে টেনে একতলায় নামলাম।
এবং তার পরেই ঘটে গেল সেই অদ্ভুত ঘটনাটা। যে আমি যন্ত্রণায় কুঁচকে গিয়েছিলাম, সেই আমিই আলোয় প্রথম পা রাখা মাত্র পায়ের টান উধাও। ব্যথা দূরে থাক, কোনও রকম সমস্যার এতটুকু অনুভূতিই নেই। যেন মাঝখানে কিছু হয়ইনি! এটাকে কি পুরোটাই মনের ভুল বলা চলে? আমি তো বাবা অনেক ভেবেও কুলকিনারা পাইনি!
এ রকমই আর একটা ঘটনা আছে। তারও কোনও ব্যাখ্যা পাইনি। তখন একটা গানের দলে ছিলাম। একটা বাড়িতে আমরা মহড়া দিতাম। এক সন্ধেয় মহড়া শেষ হয়েছে সবে। বেরনোর আগে জুতো পরছি। চোখ পড়ল ঘরের ওপাশের অন্ধকার প্যাসেজটার দিকে। আর কেন জানি না গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল কারণ ছাড়াই। বেরিয়ে হাসতে হাসতেই বন্ধুদের বললাম, এ বাড়িটায় নির্ঘাত ভূত আছে! অকারণে গায়ে কাঁটা দেওয়ার কথা বলতেই দুই বন্ধু দেখি হতবাক। ওদেরও ঠিক একই সময়ে একই ভাবে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে! তিনটে আলাদা মানুষের একই সময়ে একই জিনিস হল কী করে? তা-ও আবার কোনও কারণ ছাড়াই?
নির্ঘাত ভুতুড়ে কাণ্ড!