চিত্রনাট্য লেখা কমিয়ে দিলেন কেন?
আজকাল সব কাজ করতে গেলেই বড্ড বেশি তাড়া দেওয়া হয়। তিন বছর আগেও এমনটা ছিল না। আমি একটা সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনের গল্প লিখি বা একটা অন্য ভাল কোনও গল্প লিখি না কেন, সব ক্ষেত্রেই হয়তো দেখা যায় ১২ দিনে কাজ শেষ করার চাপ থাকে। এখন বাংলা সিনেমার অবস্থা খুব খারাপ। মাল্টিপ্লেক্স কালচার আসার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় সব সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল। তাই প্রযোজকদেরও হাত পা বাধা। তারাও বেশি টাকা রোজগারের জন্য আগে থেকেই বিভিন্ন চ্যানেলের সঙ্গে চুক্তি করে নেন। বেশির ভাগ প্রযোজক আজ সিনেমার থেকে সিরিয়াল নির্মাণে বেশি আগ্রহী। তাই আজকাল মনের মতো কাজ না হলে করি না।
কোথাও কি সিনেমার মানের সঙ্গে আপোস করা হচ্ছে?
মানের সঙ্গে আপোশ করার অনেক আগেই গল্পের সঙ্গে আপোস করা হয়। এখন চিত্রনাট্যকারকে বলে দেওয়া হয় এই তারকাকে নিয়ে আমি ছবি করব এবং এত দিনের ছবি করব, সেই অনুযায়ী চিত্রনাট্য লিখতে হবে। বাজেট এখানে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেখা গেল হয়তো গল্প কেরালার কিন্তু শ্যুট হচ্ছে পুরীতে এবং সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ভাবে।
আচ্ছা!
দেখুন, অন্য ধারার ছবি বাঁচাতে গেলে কিন্তু লাগাতার জিৎ আর দেবের ছবি হিট হওয়া প্রয়োজন। সত্যজিৎ রায় বা ঋত্বিক ঘটক ছবি বানাতেন, কারণ তাঁরা জানতেন একটা বড় সংখ্যার দর্শক বাংলা ছবি দেখেন, তা’ও উত্তমকুমারের জন্য। আজ হল থেকে আয় এত কমে গিয়েছে যে, প্রযোজকদেরও হাত পা বাধা। আমাকে অনেকেই বলেছেন, একেনবাবু হিট করার পর, এই রকম গোয়েন্দা কি আর আছে? বাজার বনাম শিল্পের একটা সংঘাত তৈরি হচ্ছে। তবে ওটিটিতে সেই সমস্যা এখনও অনেকটা কম। আর থিয়েটারে আমি অনেক বেশি স্বাধীন।
বলিউডে যাচ্ছেন না কেন?
আমি কোনও দিনই বলিউডে যাওয়া নিয়ে বেশি আগ্রহী নই। ‘প্যান ইন্ডিয়া’ সংস্কৃতিটা আমি ঠিক বুঝি না। আমাকে এখন ‘জওয়ান’ -এর চিত্রনাট্য লিখতে বললে আমি পারব না। তবে আগামীতে সুজয় ঘোষের সঙ্গে একটা কাজের কথা আছে।
টলিউড নিয়ে এবার বোধহয় আপনার মতো মানুষদের মুখ খোলার সময় হয়েছে!
সেই জন্যই তো বলছি আপনার সঙ্গে কথা। অনেক বলেছি। কিচ্ছু হয়নি। ব্যাপারটা একটা সর্বনাশা বৃত্তের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে টলিউডে। দর্শক নেই, তাই বাজেট কম কম। বাজেট কম, তাই শ্যুটিং-এর দিন কম। ইত্যাদি। এত শত পরেও বলছি, আমি কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির ভাল চাই। বুকে হাত রেখে বলছি। চাই, চাই, চাই। কিন্তু লোকজন যে কেন বুঝছে না, আমি অন্তত ধরতে পারছি না।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।