আলাবামার দুর্গাপুজো
মহিলা পুরোহিত শব্দটার মধ্যে একটা বেশ আধুনিকতা জড়িয়েছে এখন| মিডিয়ার দৌলতে এবং সাহিত্য সিনেমায় জায়গা পেয়ে পুজোর সাহায্যকারী থেকে মেয়েদের খোদ পুজোর মালকিন হয়ে ওঠা বাজারে বিকোচ্ছে খুব| কিন্তু সেই সময়ে সে রকম ছিল না | ২০১০ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া নিউ ইয়র্ক এসবের মত নামজাদা জায়গা থেকে অনেক দূরে একটা নিশ্চিন্ত রাজ্যে একজন পদার্থবিদ নিজের হাতে তুলে নিচ্ছিলেন ইতিহাস বদলে দেওয়ার ভার | যে কথা কেউ জানুক বা নাই জানুক তার পরোয়া কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখনদারি কোনওটাই করেননি তিনি|
আলাবামা রাজ্যের বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অফ গ্রেটার বার্মিংহ্যাম পুজো কমিটির সতী নাথ এমনি একজন প্রধান মহিলা পুরোহিত | পাশে পেয়েছিলেন ডাক্তার স্বামীকে এবং একজন জ্ঞানী মানুষকে যাঁকে তিনি বলতেন 'মেসোমশাই'| আরও তিন চারজন সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে পুজো করে আসছেন সতী| শুরুর কিছু বছর পেয়েছেন প্রতিরোধ| নিজে ব্রাহ্মণ নন | সেই নিয়ে রেষারেষি কম হয়নি| সরে গিয়েছিলেন মঞ্চ থেকে| কিন্তু কালের অমোঘ নিয়মে যোগ্যতার ঢেউ বানভাসি হয়ে ফিরে এসেছে| সতী পেয়েছেন নিজের জায়গা| শুধু মহিলা পুরোহিত নন, এখন তিনি বিধবাও বটে| কিন্তু আর কোনও প্রতিরোধ মাথা তুলে দাঁড়ায়নি তাঁর সাহসের সামনে|
পুজোর আয়োজন বেঙ্গলি এসোসিয়েশন অফ গ্রেটার বার্মিংহ্যাম পুজো কমিটির
পুজো তাঁর পেশা নয়, নেশা বটে| পদার্থবিদ্যার গবেষক সতী রীতিমতো চর্চা করেছেন আধুনিক পুরোহিত দর্পণ নিয়ে| করেছেন নানান গঠনমূলক কাজ| সঙ্গে যাদের পেয়েছেন তাদেরকেও শিখিয়ে পড়িয়ে তৈরি করেছেন পুজোর জন্য| এই প্রগতিশীল পুজোয় লোকের সংখ্যা প্রায় দু'শো আড়াইশ|
শুধু বাঙালি নয়, আলাবামা রাজ্যের এটি একমাত্র বারোয়ারী পুজো যেখানে নানা সম্প্রদায়ের লোকের ভিড় দেখা যায়| ভোগের পাঁপড় বানান একজন গুজরাতি মহিলা| বিদেশী বাবা এবং সাউথ ইন্ডিয়ান মায়ের ছোট্ট ছেলে বাঙালি বর সেজে মঞ্চ কাঁপায়| মনোরম সান্ধ্য অনুষ্ঠান জুড়ে থাকেন নানা শিল্পীরা| ভোগের দায়িত্ব নেন নিজেরাই| দেশ থেকে মা বাবা এলে তাঁরাও মেতে ওঠেন পুজোয়| রয়েছে পুজোর ম্যাগাজিনও| সমাজসেবার অংশ হিসেবে থাকে হলিডে গিফট বক্স, স্থানীয় হোমলেস মানুষদের খাওয়ানোর নানা কর্মকান্ড|
কোভিডকালেও মুখে মাস্ক বেঁধে পুজোর আয়োজন করেছেন সবাই, সতীর গ্যারাজেই| পুরোহিত হয়ে উঠেছেন পুজোর কান্ডারি| তাঁর দেখানো পথেই হয়ত একদিন হাঁটবে আমেরিকা ও বিশ্বের আরও অন্যান্য পুজো| আড়ালে রয়ে যাবেন সতী, কিংবা ভাস্বর হয়ে উঠবেন নিবিড় হয়ে, একাকী| আগামী প্রজন্ম তাঁকে চিনে নেবে ঠিক।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের অংশ।