আমাদের ন্যাশভিলের পুজোয় এ বার দুই ‘বেণীমাধব’! এক ‘বেণী’ তো আরতিবৌদির হাতে, বেণীমাধব শীলের ফুলপঞ্জিকা, পুজোর নির্ঘণ্ট বিচার চলছে। আর এক বেণীমাধব তো জয় গোস্বামীর কবিতা, গলায় করে বয়ে আনবেন তিনি। লোপামুদ্রা মিত্র আসছেন ন্যাশভিলে, অক্টোবরের প্রথম শুক্কুরবারে। সে দিনই আমাদের এই শহরে ‘মা-ও আসছেন’। প্রবাসের হপ্তান্তের পুজো। শুক্র থেকে রবি, পুজো আড্ডা খানা নাচা গানা... কিছু খুচরো ঝগড়া, চাট্টি প্রেম... সব ওই গণেশ মন্দিরে। পুজোমণ্ডপেই এক দিকে অঞ্জলি তো অন্য দিকে ফ্যাশন প্যারেড! শাড়ি কুর্তি গয়না ধুতি পাঞ্জাবি, এ বলে আমায় দেখ ও বলে আমায় দেখ! শুধু দেখলে হবে, খরচা আছে!
পুজোর বেদিতে তো সাজসজ্জার অন্ত নেই। এ সবের দায়িত্বে অনিন্দ্য। সে হল থ্রি-ইন-ওয়ান! আমাদের সংগঠন বৃহত্তর ন্যাশভিল বাঙালি সঙ্ঘ (বিএজিএন)-এর সম্পাদক, প্যান্ডেল-সাজিয়ে এবং সহকারী পুরোহিত। মুখ্য পুরোহিত অচিন্ত্য। আমরা বলি, ‘দুর্গা তোমায় কে চিনত, যদি না চেনাত অচিন্ত্য’! আমাদের প্রতি বারের বিশেষ আকর্ষণ কুমোরটুলির সোলার প্রতিমা। সঙ্গে ‘মেড ইন কলকাতা’ ঢাক! এই ঢাক পেটানোর বন্দোবস্তটা করেছে আমাদের সভাপতি অশোকদা! দুই হাতে ‘স্পন্সর’ যোগাড় করতে তার জুড়ি নেই।
খরচ তো কম নয়, তিন দিনের পুজোয় নয় নয় করে সহস্রাধিক পুণ্যার্থীর পাত পড়ে পুজোমণ্ডপে। আমাদের শারদীয়া উৎসবের ইউএসপি হল, ‘পূজার সঙ্গে মজা ফ্রি’! এ বার অবশ্য আমাদের দুই রকম ‘পূজা’! একটা তো দুর্গাপূজা, তার আচার অনুষ্ঠানের দায়িত্বে নিলয়। আর এক ‘পূজা’ হল নিলয়ের সদ্য বিয়ে করা বউ! কাজেই ধুমধামের অভাব নেই। লাগে টাকা, দেবে ইন্দ্রাণীদি, আমাদের কোষাধ্যক্ষা, সাক্ষাৎ ‘মা লক্ষ্মী’! আর সবার অলক্ষ্যে আপনমনে নাকের ডগায় চশমা ঝুলিয়ে কাজ করে চলেছে চয়ন, আমাদের শারদীয়া মুখপত্র ‘আগমনী’-র সম্পাদক। পাশাপাশি, তার আবার পাড়ার মাস্তানদের মতো ‘চাঁদাটা দিন’ ভাবভঙ্গি। ‘আগমনী’-তে বিজ্ঞাপন চাই। কাজেই ন্যাশভিলে এখন চয়নকে দেখলেই পলায়ন!
আরও পড়ুন: এডিনবরার পুজোয় এ বার বাংলার গ্রাম
তবে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সুস্মিতা আর শুভজিত। সুস্মিতার হল চয়নের বিপরীত দশা। চয়নকে দেখলে লোক ভাগছে, আর সুস্মিতাকে দেখলে লোক জুটছে! সুস্মিতার নাম দিয়েছি ‘সরস্বতী মহাভাগে’! সামনে কোনও জটলা দেখলেই সে পালাচ্ছে! সে যে সংস্কৃতি মন্ত্রী, তাকে বাগে পেলেই সুধীজনে নাচগান করার আবদার জুড়ছে। কিন্তু ‘ভাগবো’ বললেই তো আর ভাগা যায় না এ যুগে! সুস্মিতা বেচারি নিজের দুই কানে এক জোড়া দুলের মতো দু’টি সেলফোন ঝুলিয়ে রেখেছে। আর তারা বেজেই চলেছে। হ্যালো বললেই কেলো। দেখা যাবে, দর্শকের চেয়ে শিল্পী বেশি। সংস্কৃতি বড় বিষম বস্তু। আর আরও বিপজ্জনক হল হ্যাংলাবাংলা। ‘রান্নাঘরে কান্না’ যাত্রাপালার নায়ক হল শুভজিত। সে হল আমাদের ‘ভজহরি মান্না’! তার অমোঘ নির্দেশে তিন দিন ধরে চুলো জ্বলবে। খিচুড়ি, বেগুনভাজা, আলুভাজা, পাপড়ভাজা, লুচি, পায়েস, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাবড়া, মণ্ডা, মিঠাই, নাড়ু। তার ‘কিচেন ক্যাবিনেট’ হল স্ত্রীভূমিকা বর্জিত নাটক। কিছু পার্শ্বচরিত্র বাদে। পরিবেশনে ডাক পড়ে বামাবাহিনীর। ‘গোডাউন’ যেমনই হোক না কেন, ‘শোকেস’ সুন্দরীশোভিত হওয়া তো ভালই!
আরও পড়ুন: কানাডার বঙ্গ পরিবারের পুজো মানে মহোৎসব
শুক্রবারটা কাজের দিন, একটু ধুঁকতে ধুঁকতে পুজো শুরু হয় আমাদের। শনিবার পুরো হোলটাইমার দশা। রবিবার বিজয়ার বেলা। হোলির ঢঙে সিঁদুরখেলা, ‘মিক্সড ডাবলস’ কোলাকুলি। ‘শুভ বিজয়া’ বললেই নারকেল বা তিলের নাড়ু কিংবা খইয়ের মোয়া। শারদীয়া লীলা শেষ খেলা দিয়ে। ধুনুচি নৃত্য, হুলুধ্বনি ও শঙ্খবাদন প্রতিযোগিতা। সামিল আবালবৃদ্ধবনিতা। অবশেষে বিসর্জন। জলে নয়, ডাঙায়! ‘মুক্তিরূপেন সংস্থিতা দুর্গা’ নিজেই সপরিবার বাক্সবন্দিনী। আসছে বছর আবার হবে।
সে তো হবে, কিন্তু পরের দিন তো ‘সারাদিন’ সোমবার। কাজের দিন। সবার মন খারাপ। বিজয়ার বিষাদ বটে!