দুর্গাপুজো আসছে। আমাদের মতো প্রবাসী পরিবারও তাই উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে।
১৯৮০ থেকে মধ্যপ্রদেশে রয়েছি। এই শহরে অন্তত ২৫-৩০ হাজার বাঙালি বাস করেন। অন্তত দশটি বড় মাপের পুজো হয় এই শহরে।তার মধ্যে টিটিনগর কালীবাড়ি, ভেল কালীবাড়ি, ‘ওল্ডসিটি’র মতো দুর্গাপুজোগুলো অতি প্রাচীন। তা ছাড়া, এখানে বেশ কয়েকটি ‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’ রয়েছে। তারাও কয়েকটি পুজো করে।
এখানে তো সে রকম ভাবে পুজোর ছুটি থাকে না। দসেরা, অর্থাৎ বিজয়া দশমীতে শুধু একটি দিনই ছুটি। তবু এখানকার বাঙালিরা চেষ্টা করেন, যথা সম্ভব বেশি সময় যাতে পুজো প্যান্ডেলে কাটানো যায়। শুধু বাঙালিরাই নন, এখানকার অবাঙালিরাও দুর্গাপুজোয় যথেষ্ট সক্রিয় ভাবে অংশ নেন।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে মৃৎশিল্পীরা এখানে এসে প্রতিমা তৈরি করেন। সঙ্গে থাকে গঙ্গামাটি।কিছু বাঙালি মৃৎশিল্পী অবশ্য বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে এখানেই বসবাস করছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মতোই পুজোয় নতুন জামা-কাপড় পরা, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখা, খিচুড়ি ভোগ খাওয়া, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা, এ সব চলতে থাকে। তা ছাড়া, ইলিশ সর্ষে, মোগলাই পরোটা, এগরোল, ঘুগনি আর রকমারি বাঙালি মিষ্টির হাতছানিও রয়েছে।কারণ দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন তো বাড়ির রান্নাঘর তালা বন্ধ! বিভিন্ন পুজো অ্যাসোসিয়েশন কচি-কাঁচাদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য কলকাতা থেকেও শিল্পীরা আসেন। আজকাল আয়োজকেরা বড়দের জন্যও নানা রকম প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেন।থাকে সঙ্গীত প্রতিযোগিতা, রান্নার প্রতিযোগিতা এমন কি আলপনা দেওয়ার প্রতিযোগিতাও। তা ছাড়া, প্রথা মাফিক মহাষ্টমীর অঞ্জলি, প্রতিদিন সন্ধ্যারতি, নবমীতে ধুনুচি নাচ— আনন্দ উদ্যাপনে কিছুই বাদ পড়েনা।
নবমী নিশি পেরোলেই মা-কে বিদায় জানানোর সময় উপস্থিত হয়। এখানের বিভিন্ন বাঙালি সংগঠনগুলিও বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করে থাকে।কলকাতার মতোই শোভাযাত্রা করে এক একটা দল ঠাকুর বিসর্জনে যায়। ভোপালে অনেক বড় বড় জলাশয় রয়েছে।সেখানেই সাধারণত প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। তার পর মণ্ডপে ফিরে এসে শান্তি জল, শুভেচ্ছা বিনিময়ও মিষ্টি বিতরণ। আর পরের বছরের মিলনোৎসবের জন্য অপেক্ষা করা।