বেজিংয়ের বাঙালিদের দুর্গাপুজো পড়ল দ্বিতীয় বছরে। গতবারের অতি অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে যে পুজো হয়েছিল তাতে ব্যবস্থা করা গিয়েছিল একটা ছোট শোলার মূর্তির। কিন্তু এ বার সকলের ইচ্ছে অনুযায়ী কলকাতার কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা এসেছে। কুমোরটুলির মাটির স্পর্শের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে বেজিংবাসী বাঙালি।
কমিউনিস্ট চিনে দুর্গাপুজো হয় দু’টি। একটি সাংহাইয়ে আর একটি বেজিংয়ে। বড় রেস্তরাঁ ভাড়া করে পুজো হয় চিনে। প্যান্ডেল করে পুজো করার নানা অসুবিধা রয়েছে। তার উপর সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে ঠান্ডা পড়তে শুরু করে। অক্টোবরে যা কনকনে শীতে রূপান্তরিত হয়। বেজিংকে ড্রাই ক্যাপিটাল বলা হয়, প্রবল শীত আর শুষ্কতার জন্য। শীতের কনকনে হাওয়ায় মাইনাসে নেমে যায় তাপমাত্রা। তাই রেস্তরাঁর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশই পুজোর জন্য উপযোগী। আমাদের পুজো অবশ্য বেশ কিছু দিন পরে হবে, ১৯-২০ অক্টোবরের সপ্তাহান্তে, ‘ইন-কিচেন’ নামে একটি রেস্তরাঁয়।
বেজিংয়ের দূতাবাস পাড়ায় লিয়ানমা চিয়াও-এর ভারতীয় দূতাবাসের খুব কাছে এই ইন-কিচেন, যেখানে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। বেশ ভাল ভারতীয় রান্না করেন এখানকার ‘শেফ’রা। তাঁরাই বাঙালি রান্না করবেন। বিভিন্ন অনলাইন কুকিং ভিডিয়ো দেখিয়ে তাঁদের শেখানো হবে বাঙালি রান্না। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, পুরোপুরি বাঙালি ভোজ না-হলেও কাছাকাছি পৌঁছনো যায়। এ বার খিচুড়ি, পোলাও, মাংস ও মাছের বিভিন্ন পদ রান্না করানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ বার পুজোর একটা বিশেষত্ব হল শুধু মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত কমিটি, যাঁরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন সমস্ত পুজোর প্রস্তুতির জন্য। বিভিন্ন জন বিভিন্ন সময়ে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসছেন পুজোর নানা সামগ্রী। এমনকি নারকেলের নাড়ু এবং পুজোর অন্যান্য মিষ্টিও আসবে কলকাতা থেকে।
শুধুমাত্র বাঙালিরাই নন, বেজিংয়ের ভারতীয়দের সংগঠন ‘আইসিবি’, দূতাবাসের আধিকারিক এবং চেনাজানা অবাঙালি ভারতীয়দের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। স্থানীয় চিনা বাসিন্দারা, যাঁরা এই পুজো সম্বন্ধে জানেন, তাঁদেরও উৎসাহ রয়েছে এবং তাঁরা খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। ভারতীয় সংস্কৃতির ব্যাপারে চিনা লোকজনের উৎসাহ প্রচুর। বেজিংয়ে বিভিন্ন রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে স্থানীয় চিনাদের ভিড় হয় দেখার মতো। ফলে দুর্গাপুজোতেও তাঁরা যে ভিড় জমাবেন, সে নিয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই।