সুস্মিতা কর
যতই দামি আসবাব ও অনুষঙ্গ দিয়ে ঘর সাজানো হোক না কেন, কিছু দিন পরে তা খানিক একঘেয়েমি তৈরি করে বটে! প্রতিদিন সেই একই আসবাব, একই ওয়াল হ্যাঙ্গিং আর গাছগাছালি একই ভাবে ঝেড়েমুছে রাখতে কারই বা ভাল লাগে বলুন? আবার ঘন ঘন নতুন ঘর সাজানোর জিনিস কেনাটাও তো সম্ভব নয়। অথচ একটু পরিকল্পনামাফিক কিছু পদক্ষেপ করলেই অনায়াসে খুব কম খরচে বাড়ির সাজসজ্জায় আনা যায় নতুনত্ব। সেই ভাবনাকেই বাস্তবায়িত করতেই সুস্মিতা কর শুরু করেছিলেন ‘আকৃতি ইন্টেরিয়রস’।
সুস্মিতা পেশায় ইন্টেরিয়র ডিজ়াইনার। ছোট থেকে সৃজনশীল ভাবনায় দিন কাটত তাঁর। বড় হয়ে সেই পথেই হাঁটা। কলকাতা শহরের বহু অন্দরমহল সেজে উঠেছে তাঁর হাত ধরেই। সবটা ঠিকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎই সুস্মিতা সিদ্ধান্ত নেন, পরিবেশ বান্ধব পণ্য নিয়ে যদি কাজ করা যায়! সেই শুরু। জুট থেকে ম্যাকরেম, সুতি থেকে বাঁশ– এমন বিভিন্ন জিনিস দিয়ে ঘর সাজানোর পণ্য তৈরি করেন সুস্মিতা। বর্তমানে যার চাহিদা ও জনপ্রিয়তা সমান তালে বেড়ে চলেছে।
সুস্মিতা বলেন, ঘর সাজাতে আহামরি কোনও দামি জিনিসের প্রয়োজন নেই। বরং চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন পণ্যকে একটু সৃজনশীলতার সঙ্গে ব্যবহার করলেও ঘরের রোজকার একঘেয়েমি কাটানো সম্ভব। সেই কারণেই প্রতিদিন নতুন সামগ্রী তৈরি করেন সুস্মিতা। এর মধ্যে রয়েছে জুটের তৈরি বিভিন্ন ধরনের গৃহসজ্জার সামগ্রী, যেমন জুটের ম্যাট, প্লান্টার ব্যাগ, জুট বাস্কেট, স্টোরেজ ব্যাগ, টেবিল ম্যাট, কুশন কভার, রানার, ফ্লোর রানার, জুট অটোমান, জুট ব্যাগ ইত্যাদি। রয়েছে ম্যাকরেম প্লান্টার, ম্যাকরেম ওয়াল হ্যাঙ্গিং, ম্যাকরেম কুশন কভার, ব্যাম্বু প্ল্যানটার, কাঠের তৈরি বিভিন্ন জিনিস, কটন ম্যাটের মতো সামগ্রীও। নতুনত্ব এবং সৃজনশীলতা— এই দু’য়ের মিশেলে ইতিমধ্যেই আমজনতার মন জয় করে নিয়েছে এই পণ্যগুলি।
শুরুটা যদিও তত সহজ ছিল না। আসলে বাজারে নতুন কোনও পণ্য এলে সাধারণত যে সমস্যাগুলির সম্মুখীন হতে হয়, সুস্মিতার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। অথচ সেই সব সমস্যাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে, সব প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজের মতো ব্যবসা সাজিয়েছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে সুস্মিতাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “যেহেতু আমার প্রোডাক্টগুলো একটু আলাদা ছিল, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকেই সেগুলির বিষয়ে ততটা বুঝতে পারেননি। যেমন ধরুন, জুটের প্লান্টার্স ব্যাগ। অর্থাৎ একটি টবকে জুটের ব্যাগে রাখা। যার মধ্যে গাছ রাখা যায়। দেখতেও সুন্দর লাগে। আবার যেমন ম্যাকরেমের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী যার বোহো ভাবনাকে প্রতিফলিত করে। এমন জিনিসগুলির বিষয়ে প্রথমে অনেকেই জানতেন না। ধীরে ধীরে সেই জায়গাটা আমি তৈরি করেছি। বর্তমানে এই ধরনের ব্যাগের চাহিদা প্রচুর। এখন এই ধরনের প্রোডাক্ট বানালেই তা সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়।”
সময় বদলেছে। ঘর সাজানোর ধারণাও বদলেছে। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়ছে এই ধরনের সামগ্রীর। সুস্মিতার এই সৃজনশীল ভাবনা সাদরে গ্রহণ করেছে আধুনিক প্রজন্ম। ফলে ব্যবসাও চলছে রমরমিয়ে।
আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩