জুহি পোদ্দার আর প্রিয়াঙ্কা পাল
মেয়েরা নাকি ব্যবসা করতে পারে না! এমন অপবাদ বিস্তর রয়েছে। সেই প্রচলিত ধারণা ভেঙে মাথা উঁচু করে সাম্রাজ্য বিস্তারের একাধিক গল্পও রয়েছে বাংলায়। ‘সখিয়া’র পথ চলার গল্পটা অনেকটা এমনই। দুই বন্ধু, থুড়ি বান্ধবীর পথ চলার গল্প। হাজার প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেদের ব্যবসা দাঁড় করানোর গল্প। এই প্রজন্মের নারীদের কাছে অনুপ্রেরণার গল্প। সেই সঙ্গে প্রাণের বন্ধুত্ব তো রয়েছেই।
বন্ধুত্ব নিয়ে বহু মানুষের বহু ধারণা এবং বিশ্বাস রয়েছে। আর তার থেকেও বেশি রয়েছে আবেগ। সহজ কথায়, সহজ ভাষায় এর সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। এই গল্প দুই বন্ধুর— জুহি পোদ্দার আর প্রিয়াঙ্কা পাল। বন্ধুত্বের সেই ভালবাসা ও আবেগ থেকেই জন্ম ‘সখিয়া’র। কলকাতার অন্যতম সেরা ডিজ়াইনার ব্লাউজ়ের কালেকশন রয়েছে এদের কাছেই।
সংস্থার নামের মধ্যেই লুকিয়ে বন্ধুপ্রীতির গল্প। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই প্রিয়াঙ্কার মন মজে ফ্যাশনে। স্বপ্ন ছিল বড় ফ্যাশন ডিজ়াইনার হওয়ার। সৃজনশীল কিছু করার। সেই স্বপ্ন নিয়েই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজিতে ভর্তি হন প্রিয়াঙ্কা। ভাল ব়্যাঙ্কে পাশও করেন। পড়াশোনা শেষ করে শহরের চাকরিতে যোগ দেন প্রিয়াঙ্কা। দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন তিনি। কাজ করেন নামকরা ফ্যাশন ডিজ়াইনারদের সঙ্গেও। তবে নিজের উদ্যোগে নিজে কিছু করার ইচ্ছে কোনও মতেই পিছু ছাড়ছিল না প্রিয়াঙ্কার। সেই ইচ্ছেকে সঙ্গী করেই ভাল চাকরি ছেড়ে নিজস্ব একটি টেলর ইউনিট নিয়ে শুরু করেন যাত্রা।
অন্য দিকে, জুহি তখন পেশায় শিক্ষিকা। তিনি কলকাতায় আসেন শিক্ষকতা ছেড়ে। প্রায় সাত বছর কাজ করেন মাল্টি ডিজাইনার হাউজ় ‘৮৫ ল্যান্সডাউন’-এ। এর পরে সব্যসাচী, দেব আর নীলদের মতো বেশ কিছু নামকরা ডিজ়াইনারের কাছেও কাজ শেখেন জুহি।
এক দিকে প্রিয়াঙ্কার পোশাক তৈরির জ্ঞান, অন্য দিকে জুহির জামাকাপড়ের স্টাইল ও আধুনিক ফ্যাশনের প্রতি অপরিসীম ভালবাসা— এই দু’য়ের মিশেলেই জন্ম নেয় ‘সখিয়া’। আধুনিক প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে তাঁদের স্বতন্ত্র স্বাদের পোশাক উপহার দেওয়াই এই সংস্থার মূল মন্ত্র। দু’জনেই বুঝতে পারেন কলকাতাতে এমন কাজের ভাল বাজার রয়েছে। যে কারণে ব্র্যান্ড তৈরির আগে কলকাতায় এসে শহরের বেশ কয়েক জন নামকরা ফ্যাশন ডিজ়াইনারের সঙ্গে কাজ করেন দু’জনেই।
খুব কম সময়েই নতুন প্রজন্মের পছন্দের কথা বুঝতে পেরেছিলেন প্রিয়াঙ্কা ও জুহি। টেলারিং, ফ্যাব্রিক এবং কাটিং— খুব কম সময়েই এই বিষয়গুলি শিখে নেন দু’জনে। শুরু হয় 'সখিয়া'র যাত্রা। মূলত বিভিন্ন ধরনের নকশা করা ব্লাউজ়ে নজরকাড়া সম্ভারের জন্য বিখ্যাত সংস্থা। তবে ব্লাউজ় ছাড়া অন্যান্য পোশাকও পেয়ে যাবেন এখানে। প্রাথমিক পর্বে অনলাইন সেলিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু। ডিজ়াইনার ব্লাউজ়ের অল্টারেশন এবং কাস্টমাইজেশন দিয়ে কাজ শুরু করেন তাঁরা। দু'জনের অক্লান্ত পরিশ্রম, একনিষ্ঠ মনোযোগ, স্বতন্ত্রতার কারণে খুব কম সময়েই তরুণ প্রজন্মের কাছে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছে এই ব্র্যান্ড। তাঁদের কাজের নৈপুণ্যই আজ তাঁদের পরিচয়।
ইতিমধ্যেই 'সখিয়া'র ঝুলিতে রয়েছে দু’টি পুরস্কার। ‘বঙ্গপ্রেনিওর’ অনুষ্ঠানে ‘এথনিক অ্যান্ড ইন্ডিয়ান’ বিভাগে ‘দ্য বেস্ট অন্তপ্রনিওর অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে 'সখিয়া'। পুরস্কার তুলে দিয়েছিল কলকাতার একটি বিখ্যাত সংবাদ সংস্থা। এ ছাড়াও ‘অপরাজিতা সম্মান’ অনুষ্ঠানে ‘বাডিং ডিজাইনার অফ দ্য ইয়ার ২০২১’ পুরস্কার পায় 'সখিয়া'।
প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন কাজ করছেন 'সখিয়া'র সঙ্গে। তাঁদের সুবিধা অসুবিধার দিকে সব সময়ে খেয়াল রেখেছেন জুহি ও প্রিয়াঙ্কা। সংস্থার নিজস্ব কারখানা রয়েছে। নিউ আলিপুরে রয়েছে অফিস ও ফ্ল্যাগশিপ স্টোরও। রয়েছে 'সখিয়া'র নিজস্ব ডিজ়াইনার স্টুডিয়োও। পুজোর আগে সব মিলিয়ে ব্যবসা চলছে রমরমিয়ে।
'সখিয়া'র শুরুর সময় থেকেই জুহি ও প্রিয়াঙ্কার উদ্দেশ্য ছিল যে, তাঁদের প্রতিটি প্রোডাক্ট যেন মানুষের মন জিতে নিতে পারে। সেই আত্মবিশ্বাসের জোরেই আজ তাঁরা সফল। এই প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, “ক্রেতাদের কথা ভেবে আমরা সব সময়েই চেষ্টা করি পোশাকে কী ভাবে নতুনত্ব আনা যায়। আসলে গ্রাহকেরা খুশি হলেই আমরা খুশি। তবে শুধু ব্লাউজ়ই নয়, আমাদের সব ধরনের পোশাকই খুব জনপ্রিয় মহিলাদের কাছে। আমরাও অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আগামী দিনে যাতে আরও ভাল পোশাক গ্রাহকদের উপহার দিতে পারি।”
আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩