পাইপলাইন শুকনো, কেনা জলই ভরসা গ্রামবাসীদের

ইন্ট্রো, ক্যাচলাইন, লোগো যাবে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৩ ০৯:১৬
Share:

পানীয় জল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এক যুবক। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP

Advertisement

বাড়ি বাড়ি পাইপলাইন আছে। কলও বসেছে। কিন্তু তাতে জল পড়ে না।

এ দিকে নলকূপেও জল তেমন মেলে না। তীব্র গরমে শুকিয়ে গিয়েছে পুকুর। জলকষ্টের এই চিত্র মগরাহাট ২ ব্লকের প্রায় সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায়। গ্রামগুলিতে কার্যত পানীয় জলের হাহাকার চলছে। বাধ্য হয়ে জল কিনে খাচ্ছেন বাসিন্দারা।

Advertisement

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ২০০৩ সালে বজবজের ডোঙাড়িয়ায় গঙ্গার জল পরিস্রুত করে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। মগরাহাট ২ ব্লকের ১৪টি পঞ্চায়েতে ১১টি রিজার্ভার থেকে পাইপ লাইনের সাহায্যে এলাকায় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। বেশ কয়েক বছর মানুষ বাড়ি বসেই জল পেয়েছেন। কিন্তু এত বছরে নতুন রাস্তাঘাট, রাস্তা সংস্কার ও অন্যান্য কাজের ফলে বিভিন্ন এলাকায় পাইপলাইন কেটে বা ফেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

এ দিকে, ডোঙাড়িয়া জল প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সংস্থার তরফে প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালে। ওই সময়ের আগে পর্যন্ত পাইপলাইনের কিছু কিছু সংস্কারও হলেও তারপর থেকে আর কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। বর্তমানে অধিকাংশই গ্রামের পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকায় রিজার্ভার থেকে জল পৌঁছচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন গ্রামের মানুষ।

ডোঙানিয়া প্রকল্পটির সংস্কার নিয়ে এখনই কোনও চিন্তাভাবনা নেই বলে জানাচ্ছে প্রশাসনিক মহল। কারণ, এই এলাকায় মাস সাতেক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের জল জীবন মিশন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের জন্য প্রায় ১২ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পে বলা হয়েছে, রিজার্ভার বসানোর জন্য এক বিঘা জমি দরকার। পাশাপাশি, ওই রিজার্ভার থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে আরও দু’টি সাব রিজার্ভার বসানোর জন্য ৪ শতক জমির প্রয়োজন। ওই জমি কিছুটা জোগাড় করা গিয়েছে। তবে তা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে এখনও সে ভাবে পরিদর্শন করা হয়নি। শুধুমাত্র হোটর মর্যাদা পঞ্চায়েতের রত্না গ্রামে ওই প্রকল্পের কাজ কিছুটা শুরু হয়েছে। বাকি কাজ এখনও বিশ বাঁও জলে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মগরাহাটে ২ ব্লকের মগরাহাট পশ্চিম পঞ্চায়েতে মাহিতালাব গ্রামে দোকানে জল কিনতে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদি হাসান ফকির। বললেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে পাইপ লাইনে জল নেই। নলকূপের জল সরু হয়ে পড়ে। ফলে ৩৫ টাকায় ২০ লিটার জল কিনে খেতে হচ্ছে।’’ ওই গ্রামের মহিলা তাজিনা বিবি আক্ষেপ, ‘‘পাইপ লাইনের জল শেষ কবে এসেছে মনে পড়ে না। পুকুরের জল তলানিতে পড়ে রয়েছে। ঘোলা জল ব্যবহার করা যায় না। পানীয় জল ছাড়াও রান্নাবান্না,জামা কাপড় কাচার জল জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’’ দোকানি আলি আজগর ফকির জানালেন, মাহিতালাব ছাড়াও আশপাশের সর্বানন্দপুর, বিলন্দপুর-সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা নিয়মিত জল কিনে নিয়ে যান।

এ দিকে, জল জীবন মিশন প্রকল্প নিয়েও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, আগে নদীর জল শোধন করে বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হত। জল জীবন মিশন প্রকল্পে ভূগর্ভস্থ জল তুলে সরবরাহ করা হবে। এতে ভূগর্ভস্থ জলস্তর আরও নেমে গিয়ে গ্রামের নলকূপগুলি অকেজো হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা অনেকের। গ্রামবাসদের দাবি, পুরনো পাইপলাইনগুলি সংস্কার করে আগের পদ্ধতিতে জল সরবরাহ হলেই ভাল হত। মগরাহাটের সিপিএম নেতা চন্দন সাহা বলেন, ‘‘জল জীবন মিশন প্রকল্পে এখনও কাজ শুরু হয়নি। এ দিকে পুকুর, খাল, বিল শুকিয়ে গিয়েছে। কার্যত জলের হাহাকার চলছে গ্রামে।’’

মগরাহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ হালদার বলেন, ‘‘জল জীবন মিশন প্রকল্পের জন্য বেশ কিছু জমি পাওয়া গিয়েছে। কিছু এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। তবে গ্রামে জলের সমস্যা রয়েছে। পঞ্চায়েত থেকে কিছু নলকূপ সারিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে যাবে।’’ মগরাহাট ২ বিডিও শেখ আব্দুল্লাহের কথায়, ‘‘জল জীবন মিশন প্রকল্পের জন্য কিছু জমি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিছুটা জমি পরিদর্শন হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ এপ্রিলের মধ্যে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement