সিউড়ির এসপি মোড়ে বিক্রি হচ্ছে ধানের শীষ। দুবরাজপুরে ভিড় দশকর্মার দোকানে। নিজস্ব চিত্র।
আজ, শনিবার লক্ষ্মীপুজো। দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না-কাটতেই ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতির জন্য ধরা ছিল ত্রয়োদশীর দিনটা। শুক্রবার ত্রয়োদশীর দিন বাজারের আঁচ অবশ্য খুব স্বস্তি দেয়নি সাধারণ মানুষকে। বরং পুজোর আয়োজন করতে গিয়ে বেশ নাজেহাল হতে হয়েছে গৃহিণীদের। ১০০ দিনের কাজ না-থাকা সহ নানা কারণে, গ্রামের মানুষের হাতে নগদ টাকাও কম। তবু যে যাঁর সাধ্যমতো আয়োজন করেছেন কোজাগরীর আরাধনায়।
ফল, ফুল, আনাজ—লক্ষ্মীপজোর আগের দিনের বাজারে হাত ছোঁয়ালেই ছেঁকা! যদিও ব্যবসায়ীদের একটা অংশ বলছেন, আনাজের দাম দুর্গাপুজোর সময় আরও বেশি ছিল। মরসুমি ফলের বাইরে কয়েকটি ফল বা ছাঁচের লক্ষ্মীমূর্তির দাম হয়তো কিছুটা চড়া। তবে, অন্যান্য বছর থেকে এ বার খুব একটা আলাদা নয় বাজারদর। তবে, এ দিন জেলার বিভিন্ন বাজারে যাঁরা লক্ষ্মী পুজোর বাজার সেরেছেন, তাঁদের বড় অংশেরই মত, লক্ষ্মী বা সরস্বতী পুজো যেহেতু ঘরে ঘরে হয়, তাই বাজারদর নিয়ে সাধারণের মাথা ঘামানো বেশি থাকে। এ দিন জেলার বিভিন্ন বাজারে জিনিসপত্রের দামে তাঁরা ভালই ছেঁকা খেয়েছেন।
শুক্রবার সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট, দুবরাজপুর সহ জেলার বড় বাজারগুলিতে ফল ও আনাজের দর মোটামুটি উনিশ-বিশ ছিল। মান অনুযায়ী আপেল বিক্রি হয়েছে কিলোপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা, কলা ডজন প্রতি ৪০-৫০টাকা, ভাল কলা ডজনে আরও ১০ টাকা বেশি। নাশপাতি ১৫০-১৮০ টাকা কিলো, কমলালেবু, মুসাম্বি ও বাতাবি লেবু প্রতি পিস ২০ থেকে ৪০ টাকায় বিকিয়েছে। শসা ৪০ টাকা কিলো, আখ প্রতি পিস আকার অনুযায়ী ১৫ থেকে ২৫ টাকা, শীষযুক্ত ডাব বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। নারকেল আকার অনুযায়ী প্রতিটির দাম ২৫ থেকে ৫০ টাকা। বেদানা ২০০- ২৫০ টাকা কিলো। তরমুজ ৪০-৬০ টাকা কিলো, পাকা আতা ঘোরাফেরা করেছে কিলো প্রতি ১৫০-২৫ ০টাকা। আঙুর এবং আমের মতো ফল বাজারে খুব কম ছিল। থাকলেও দাম খুব বেশি।
দুবরাজপুরের ফল ব্যবসায়ী সন্দীপ গরাই, সিউড়ির ফল বিক্রেতা পঙ্কজ সাউ, মুরারই বাজারের সুজয় মাল অবশ্য বলছেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর সময় বাজার একটু চড়াই থাকে। সেদিক থেকে দেখলে এ বারের বাজারদর ঠিকই আছে। আসলে এই সময় চাহিদা জোগানের ফারাক হয় যায়।’’
দশকর্মা ভান্ডারের বাজেটও অন্তত ২৫ শতাংশ বাড়াতে হবে, এমনটাই জানাচ্ছেন দুবরাজপুরের দশকর্মা ব্যবসায়ী গৌতম মালাকার, সিউড়ির অভিনব চৌধুরীরা। তাঁরা জানান, গতবারের তুলনায় কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে। তবে, মালা বা চাঁদমালা, শাখা, সিঁদুর, লক্ষ্মীর ঝাঁপি, কড়ি, অন্যান্য উপাদান খুব একটা বাড়েনি। ছাঁচের মূর্তির দাম অবশ্য এ বার বেশ খানিকটা বেশি। দাম বেড়েছে লক্ষ্মী আঁকা সরারও। দুবরাজপুরের বাজারে এ দিন ছাঁচের ঠাকুরের দর ছিল ৬৫ থেকে ৮৫০ টাকা।
সিউড়ির বাসিন্দা অপরাজিতা দাস, বোলপুরের কঙ্কনা মিত্র, দুবরাজপুরের ঝিলিক চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘বাজারদর চড়া থাকলে অসুবিধা হয় ঠিকই। কিন্তু, করার কিছু থাকে না। পুজো তো করতেই হবে।’’ তবে, লক্ষ্মীপুজোয় শুধু ফল-ফুল-মিষ্টিতেই সীমিত থাকে না বাজার। কারণ, অনেকের বাড়িতেই অন্নভোগ রান্না ও লোকজনের খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকে। তাঁদেরই এক জন, রামপুহাটের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুকান্ত সরকার। বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোয় খিচুড়ি ভোগ রান্না হয়। তাঁর কথায়, ‘‘ফল থেকে আনাজ সব কিছুর দরই আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু, উপায় নেই। লক্ষ্মীপুজো বলে কথা!’’