—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের মধ্যে সরাসরি যোগসূত্রের তথ্য সে ভাবে হাতে পায়নি সিবিআই। কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়ারের ঘনিষ্ঠ, পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির কয়েক জন পদাধিকারীর সঙ্গে আর জি করের অধ্যক্ষের নিবিড় যোগাযোগের বিষয়ে সন্দেহের জোরালো কারণ আছে বলেই তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি করা হচ্ছে।
সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ৯ অগস্ট সকালে সন্দীপের সঙ্গে রাজ্যের শাসকদলের অনুগামী পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির একাধিক পদাধিকারীর কথা হয়েছিল। ওই সদস্যদের সঙ্গে সন্দীপের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে নানা সূত্রে জানা যাচ্ছে। তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘৮ অগস্ট সন্ধ্যার পর থেকে ৯ অগস্ট রাত পর্যন্ত ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের মোবাইলের ‘কল ডিটেলস’ এবং ‘টাওয়ার লোকেশন’ পরীক্ষা করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও ৮ অগস্ট গভীর রাতে অভিযুক্তকে আর জি করের চেস্ট মেডিসিন বিভাগ-সহ নানা জায়গায় দেখা যাচ্ছে। দেখা গিয়েছে, একই লোকেদের সঙ্গে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার ও সন্দীপ— দু’জনেরই একাধিক বার কথা হয়েছিল।’’
তদন্তকারীদের সূত্রে আরও দাবি, সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ ওয়েলফেয়ার কমিটির কয়েক জন সদস্য ৯ অগস্ট সকাল থেকে প্রায় রাত পর্যন্ত হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। ওই দিন সন্দীপের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের নানা আভাস, ইঙ্গিত মিলেছে বলেও তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, সিবিআই হেফাজতে অভিযুক্ত বার বার দাবি করেছে, খুনের ঘটনায় সে জড়িত নয়। সিবিআই সূত্রে দাবি, অভিযুক্ত জেরার মুখে বার বার বলেছে, তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। যদিও কে বা কাদের নির্দেশে এবং কেন সে চেস্ট মেডিসিনের ওই ঘরে ঢুকেছিল, তার স্পষ্ট জবাব মেলেনি বলেই তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। তাঁদের কথায়, ‘‘পরবর্তী পর্যায়ে অভিযুক্তের পলিগ্রাফ পরীক্ষার বয়ানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি, অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার-ঘনিষ্ঠ আর এক সিভিক ভলান্টিয়ারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এবং তাঁরও পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের কাছ থেকেও ৮ অগস্ট সন্ধ্যার পর থেকে ৯ অগস্ট রাত পর্যন্ত অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের গতিবিধি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তাতে বেশ কিছু পরস্পরবিরোধী বয়ান উঠে এসেছে, যা ধন্দের সৃষ্টি করছে।’’ পুলিশ মহলে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের ‘গুরুদেব’ বলে পরিচিত পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্য তথা কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর অনুপ দত্তকে প্রায় আট দফায় ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, এমন নয় যে, অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে সন্দীপ চিনতেন না। হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও চিকিৎসার বিষয়ে তাঁদের কথা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল না। তবে, অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার-ঘনিষ্ঠ ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সন্দীপের ভালই মাখামাখি ছিল বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘সন্দীপকে এখন বার বার কমিটির কয়েক জন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে।’’ চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন, ধর্ষণের অভিযোগের নেপথ্যে কোনও বৃহত্তর ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা তদন্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে। আজ, শুক্রবার সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে শিয়ালদহের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের আদালতে পেশ করা হবে।