—প্রতীকী ছবি।
ভিডিয়ো কলে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদছেন তরুণী। মা রয়েছেন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে, মেয়ে কলকাতায়। বেলেঘাটার একটি হোমে বসে মেয়ে কাতর স্বরে মাকে জানাচ্ছেন, তিনি দেশের বাড়িতে ফিরতে চান। জানাচ্ছেন, দিল্লিতে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল। কোনও মতে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন।
পুজোর রাতে বেলেঘাটা এলাকা থেকে কলকাতা পুলিশ উদ্ধার করেছিল এক তরুণীকে। জানা যায়, বাংলাদেশের বাসিন্দা ওই তরুণী সেখান থেকে পাচার হয়ে দিল্লি পৌঁছে গিয়েছিলেন। আপাতত ওই তরুণীকে তাঁর দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছে হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের এক সংগঠন। বাংলাদেশ হাই কমিশনকে তাঁরা এ নিয়ে চিঠি লিখেছেন বলে জানিয়েছেন ওই সংগঠনের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ। তিনি জানান, তরুণীর কথা মতো এখনও দিল্লির গুরুগ্রামে বেশ কয়েক জন তরুণীকে আটকে রাখা হয়েছে।
সেই তথ্য জানানো হয়েছে দিল্লি পুলিশকে।
ওই হ্যাম রেডিয়ো সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, পুজোর রাতে ওই তরুণীকে বেলেঘাটা অঞ্চল থেকে উদ্ধার করে একটি হোমে রেখেছিল কলকাতা পুলিশ। তার পরে
তাঁর ঠিকানার খোঁজ পেতে তারা তাঁদের সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই সংগঠনের তরফে দাবি, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, তরুণী এখনও যথেষ্ট ভয়ে রয়েছেন। গুরুগ্রাম থেকে তিনি পালিয়ে এসেছেন কলকাতায়। এর পরে শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ধরে বনগাঁ সীমান্ত ধরে তিনি বাংলাদেশ ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনও কারণে তা পারেননি।
অম্বরীশ আরও জানান,পুলিশের থেকে ঘটনাটি জানার পরে তাঁরা বাংলাদেশের হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানকার সদস্যেরা নারায়ণগঞ্জ থেকে তরুণীর মাকে খুঁজে বের করেন। প্রায় তিন বছর পরে কলকাতায় বসে সংগঠনের তরফে মা-মেয়েকে ভিডিয়ো কলে কথা বলানো হলে দু’জনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আপাতত ওই তরুণীকে বাংলাদেশে ফেরানোর আইনি ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
হ্যাম রেডিও সংগঠনের দাবি, তরুণী তাঁর মাকে জানিয়েছেন, প্রেমের সম্পর্কের ফাঁদে পড়ে তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হয়ে যান। তার পরে তাঁকে অপহরণ করে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে একটি জায়গায় আটকে রাখা হয়। তাঁকে গুরুগ্রাম এলাকার একটি পার্লারে কাজ করানো হত। সেখানে গোপনে দেহ ব্যবসা চলত বলেও তরুণীর দাবি। হ্যামের তরফে জানানো হয়েছে, ওই তরুণীর ফোন থেকে কয়েকটি নম্বরে ফোন করা হলে হ্যামের কাছে সন্দেহজনক কিছু মেসেজ আসে। সেগুলিও তারা দিল্লি পুলিশের কাছে পাঠিয়েছে। তরুণী জানিয়েছেন, এক যুবক তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ভারতে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু পাচারকারীরা সেই যুবককে খুন করে দেয়। গত তিন বছরে ওই তরুণীকে একাধিক নামে বিভিন্ন কাজে নামানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। বাংলাদেশে তাঁর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানকার হ্যাম রেডিও অপারেটরদের সংগঠন জেনেছে, ওই তরুণী দিল্লি থেকে পালানোর পরে বাংলাদেশে তাঁর মায়ের কাছে ফোন গিয়েছিল। তাতে তরুণী সেখানে রয়েছেন কি না, সেই খোঁজ নেওয়া হয়। কিন্তু তরুণীর মা পরে সেই সব নম্বরে মেয়ের খোঁজ করতে ফোন করলেও যোগাযোগ করতে পারেননি। আপাতত কবে দেখা হবে, সেই অপেক্ষায় দুই দেশে পথ চেয়ে বস রয়েছেনে মা-মেয়ে।