‘ডিআইওয়াই কিট’
টুনটুনির গল্প। শুনলেই শিশুকালের একরাশ স্মৃতি হুড়মুড়িয়ে চলে আসে মনে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘টুনটুনির গল্প’ বাঙালি বাল্যকালের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু এমন কথা এই ২০২১-এ দাঁড়িয়ে হলপ করে কখনওই বলা যাবে না। যদি একটু খতিয়ে দেখা যায়, তা হলে এর কিছুটা তল পাওয়া যায়। ছোট শিশুদের বর্ণমালা শেখাতে বসে দেখা যায় ‘অ-অজগর আসছে তেড়ে, আ-এ আমটি খাব পেড়ে’ ছাড়া কিছুই প্রায় নেই। ছাপার অক্ষরে তো নয়ই, অনলাইনেও নয়। অথচ ইংরেজি-র অ্যালফাবেটের বেলায় কত কী? শুধু ছবি বা বই নয়, কত রকমের কারুকর্ম (ক্রাফট), কত ধরনের খেলার সামগ্রী (ডিআইওয়াই কিট), নার্সারি রাইমস সবই রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সে সবের প্রতি শিশুরা আকৃষ্ট হয় বেশি। এমন কিছু যদি পাওয়া যায় যা দিয়ে শিশুকে বাংলা ভাষাটাও শেখানো গেল, আবার তাদের নিজেদের মতো করে কিছু করতেও দেওয়া গেল, ঠিক যেমন ‘ডিআইওয়াই কিট’ গুলোতে হয়, কেমন হয় ব্যাপারটা?
এমনই কিছু ভাবনা নিয়ে হিউমার ইঙ্ক বানিয়েছে ‘নিজ আঁকো নিজে শেখো’— উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর টুনটুনির গল্প অবলম্বনে একটি ‘ডিআইওয়াই কিট’।
বিড়ালের কথার গল্পটি ছাপা হয়েছে সঙ্গে রয়েছে আঁকা ছবি বা ইলাস্ট্রেশন। আরেকটি বইও রয়েছে যেখানে গল্পটি আছে কিন্তু ছবি আঁকা বা ইলাস্ট্রেশনের দায়িত্ব পড়ুয়ার। এর পরই আসল চমক। টুনটুনি পাখিও তার ছানাপোনা এবং দুষ্টু বিড়াল সবার নামে কাঠের পুতুল। তাদের বাসাও রয়েছে একটি। আকৃতি রয়েছে কিন্তু রং, তুলি দিয়ে তাদের বানিয়ে তুলবে কচিকাঁচার দল তাদের মনের মতো করে। এখানেই শেষ নয়, রং, তুলি, পেনসিল, রং মোছার কাপড়, প্যালেট, ছোট বাটি সব রয়েছে। এই প্যালেট আর জলের বাটি দেখে মনে পড়ল আমাদের জল রং করার কথা। একে তো জলরং, তুলি অনেক অনুনয় বিনয়ের পরে হাতে এসেছে। এরপর গোলার জন্য থালা আর বাটি আসত রান্নাঘর থেকে। একটু পুরনো, একটু ফাটা কাচের প্লেট আর তোবড়ানো বাটি। প্যালেট ব্যাপারটি তাই আমার কাছে খুবই প্যালেটেবল। এই ‘ডিআইওয়াই কিট’-টি যে বাচ্চাদের ভাল লাগবেই তা তো বলা বাহুল্য।
পুরো পরিকল্পনার অন্যতম স্রষ্টা মৃন্ময়ী দেব বললেন, ‘‘বাচ্চাদেরকে বাংলা সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট করতে তাদের হাতে এমন কিছু তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল, যাতে ওরা মজা করে পড়তেও পারে। আবার নিজেদের কল্পনা দিয়ে তা রং-তুলি দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে পারে। ইংরেজিতে বহু ডিআইওয়াই কিট পাওয়া যায়। বাংলাতে বিরল। তাই এমন একটা কিছু তৈরি করার পরিকল্পনা চলছিল। উপেন্দ্রকিশোরের টুনটুনির গল্প সব বাচ্চারই প্রিয়। আর তাই তাঁরই একটি গল্প বেছে নিয়ে এই ‘ডিআইওয়াই কিট’-টি তৈরি হয় হিউমার ইঙ্ক-এর প্রযোজনায়।’