কিটোজেনিক ডায়েট প্ল্যানে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার প্রায় একেবারেই ‘নৈব নৈব চ’।
বাড়িতে বানানো রোজকার একঘেয়ে রুটি-তরকারি আর মাছ-ভাত মুখে রচে না আপনার। অফিসে কাজের কাজের ফাঁকে সময় পেলেই অর্ডার করছেন সুইগি অথবা জোম্যাটোয়। তা ছাড়া কলকাতার নামিদামী রেস্তরাঁগুলি প্রায়শই হয়ে ওঠে আপনার ডিনারের ঠেক। মিত্রক্যাফের ফিশ ফ্রাই, নিজামের রোল, নিরঞ্জনাগারের ডেভিল কলকাতাকে স্ট্রিট ফুডের স্বর্গ বলা যেতেই পারে।
এমন খাদ্য সাজিয়ে রাখা কলকাতায় থেকে ডায়েট করে ওজন কমাবেন? তা আবার হয় নাকি! অথচ অনলাইনে হালফ্যাশনের পোশাক দেখেই হাত নিশপিশ! বাধা দিচ্ছে আপনারবাড়তি ওজন। কেবল পেটই নয়, মেদ জমেছে উরু, কোমরেও। তবে এখন উপায়?
গত কয়েক বছরে কিটো ডায়েটের জনপ্রিয়তা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। চটজলদি ওজন কমাতে এই ডায়েটের কোনও তুলনা নেই। দ্রুত মেদ ঝরাতে কার্যকরী এই ডায়েট চালিয়ে যেতে কিছু নিয়ম মানতেই হবে। এই ডায়েটে কেবল শর্করাযুক্ত খাদ্যই মানা। নো কার্বস এটাই এই ডায়েটের মূল কথা।
চিকেন, মাটন, মাছ, পনির,বাদাম এমনকি চিজও খেতে পারেন কিটো ডায়েটে।
কিটো ডায়েট আসলে কী?
কিটোজেনিক ডায়েট প্ল্যানে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার প্রায় একেবারেই ‘নৈব নৈব চ’। পরিবর্তে খেতে পারেন পরিমাণ মতো প্রোটিন এবং বেশি করে ফ্যাট জাতীয় খাবার।মস্তিষ্কের দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাতে যে যে উপাদানের প্রয়োজন পড়বে, শরীর তা সংগ্রহ করবে প্রোটিন এবং ফ্যাটি খাবার থেকেই।
শর্করার অভাবের কারণে মূলত ফ্যাট বার্ন করেই শরীরের এনার্জির ঘাটতি মিটবে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া একে বারে বন্ধ করে দিলে শরীর যে বিশেষ মেটাবলিক পর্যায়ে চলে যায় তাকেই চিকিত্সার ভাষায় ‘কিটোসিস’ বলে। আর সেই থেকেই এই ডায়েটের নাম হয় ‘কিটো ডায়েট’।আদর্শ কিটোজেনিক ডায়েটের ক্ষেত্রে ৫% কার্বোহাইড্রেট, ২৫% প্রোটিন এবং ৭০% ফ্যাট জাতীয় খাবার রাখতে হবে আপনার ডায়েটে।
শরীর যখন কিটোসিস স্টেটে থাকে, তখন প্রচুর মাত্রায় ফ্যাট বার্ন হয়। তাই ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগে না। আদর্শ কিটোজেনিক ডায়েটের ক্ষেত্রে ৫% কার্বোহাইড্রেট, ২৫% প্রোটিন এবং ৭০% ফ্যাট জাতীয় খাবার রাখতে হবে আপনার ডায়েটে।তবে দীর্ঘমেয়াদে এই ডায়েট মেনে চললে শরীরে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি।
কী কী খাবারকে কিটো ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়?
চিকেন, মাটন, মাছ, পনির,বাদাম এমনকি চিজও খেতে পারেন এই ডায়েটে। মাখন, অলিভ অয়েল কিংবা নারকেল তেলেই করতে হবে রান্না। শসা, ব্রকোলি এবং পালংশাকের মতো সবুজ শাকসব্জি এই ডায়েটে বেশ উপকারী। দুধ, চিনি ছাড়া লিকার চা, বুলেট কফি কিংবা ব্ল্যাক কফিতেইমেটাতে হবে আপনার তৃষ্ণা।
কোন খাবারগুলি এড়িয়ে চলবেন কিটো ডায়েটে?
সন্দেশ, রসগোল্লা, আইসক্রিম, চকোলেট, সফট ড্রিঙ্ক, যে কোনও ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার এই ডায়েটে একেবারেই মানা। ভাত, রুটি, নুডলস, কর্নফ্লেক্স ইত্যাদিওখাওয়া যাবে না এই ডায়েটে। ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি ভাল পরিমাণে কার্ব থাকে। তাই সব ধরনের ডালও নিষেধ এই ডায়েটে।মাটির নীচে হয় এমন ধরনের সব্জি, যেমন আলু, মুলো, কচু, গাজর না খাওয়াই ভাল কিটোতে।পনেরো দিনে এক দিন নিতেই পারেন একটা ‘চিট মিল’।
এই ডায়েট মেনে চললে কী কী উপকার পেতে পারেন?
শরীরের ওজন কমাতে এই ডায়েট খুব দ্রুত কাজ করে। ডায়াবিটিস রোগীদের ব্লাড সুগার কমাতে কিটো ডায়েট বিশেষ উপকারী। এই ডায়েট পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের প্রকোপ কমাতে কার্যকরী। কিটোজেনিক ডায়েট শরীরে ফ্যাট জমতে দেয় না, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে সুস্থ থাকে আপনার হার্ট।
কিটো ডায়েটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ও খাবারের মাপ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে না নিলে এই ডায়েটে একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত, মাথা যন্ত্রণা, ক্লান্তি, খিদে বেড়ে যাওয়া, ঘুম কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা এবং শরীরিক ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বেরনো, মাসল ক্র্যাম্প, নানা ধরনের পেটের রোগ এবং কিডনিতে স্টোন হওয়ার মতো রোগও লেজুড় হতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় এই কিটো ডায়েট মেনে চললে পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে পড়ে।তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই শুরু এই ডায়েট।