১। বাবু সংস্কৃতি হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কলকাতার বুকে রয়ে গিয়েছে বাবুঘাট। বিভিন্ন পারিবারিক রীতি রেওয়াজ থেকে প্রেমের দখিনা বায়ুসেবন। বাবুঘাটের অস্তিত্ব বঙ্গজীবনের পরতে পরতে। এ ঘাটের নাম ‘বাবু রাজচন্দ্র দাসের ঘাট’। লোকের মুখে মুখে হয়ে গিয়েছে ‘বাবুঘাট’।
২। রাজচন্দ্রের জন্ম ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ছিলেন প্রীতিরাম দাসের মেজো ছেলে। তবে কাজের মাপকাঠিতে রাজচন্দ্রকে ছাপিয়ে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী, রানি রাসমণি। কার্যত স্ত্রীর পরিচয়েই এখন পরিচিত হন অষ্টাদশ শতকের এই গণ্যমান্য বঙ্গসন্তান।
৩। রাজচন্দ্রের জন্ম ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে। অত্যন্ত সাধারণ পরিবার থেকে তাঁদের উত্তরণ হয়েছিল জমিদারির স্তরে। রাজচন্দ্রের ঠাকুরদা কৃষ্ণরাম ছিলেন বাঁশের ব্যবসায়ী। তাঁর উপাধি হয়েছিল ‘মাড়’। তাঁর ছেলে প্রীতিরাম কাস্টমস হাউসে চাকরি করতেন। পাশাপাশি চালের ব্যবসাও শুরু করেছিলেন।
৪। দাস পরিবার কিন্তু প্রথম থেকেই কলকাতার বাসিন্দা নন। তাঁদের আদি বাস ছিল হাওড়ার খোসালপুর গ্রামে। কৃষ্ণরাম দাসের বোন বিন্দুবালা দাসীর বিয়ে হয়েছিল কলকাতার জানবাজারের জমিদার মান্না পরিবারে। পিসির বিয়ের পরে সম্পর্কের সূত্রে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে দুই ভাইকে নিয়ে থাকতে আসেন প্রীতিরাম।
৫। ক্রমে জমিদার মান্না পরিবারের সঙ্গে আরও দৃঢ় হয় দাস পরিবারের সম্পর্ক। যুগল মান্নার মেয়েকে বিয়ে করেন প্রীতিরাম। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে সেই বিয়েতে তিনি যৌতুক পান জানবাজারের কয়েকটি বাড়ি এবং ১৬ বিঘে জমি। তাঁর বড় ছেলে হরচন্দ্র মারা যান নিঃসন্তান অবস্থায়।
৬। প্রথম দুই স্ত্রীর অকালমৃত্যুর পরে রাসমণিকে বিয়ে করেন রাজচন্দ্র, ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে। রাসমণিকে তাঁর মা আদর করে ‘রানি’ সম্বোধন করতেন। পরে কাজের সূত্রেও তাঁর নামের পাশে ‘রানি’ উপাধি থেকে যায় চিরকালীন ভাবেই। স্বামীর মৃত্যুর পরে জমিদারির রাশ চলে যায় রাসমণির হাতে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘জমিদারগিন্নি’ থেকে তাঁর উত্তরণ হয় আক্ষরিক অর্থেই ‘রানি’-র উচ্চতায়।
৭। পরবর্তীতে সেই জমিদারি চলে যায় রানি রাসমণির তৃতীয় এবং পরে ছোট মেয়ের স্বামী মথুরামোহন বিশ্বাসের হাতে। তবে এ সবের অনেক আগে বাবু রাজচন্দ্র দাসও কলকাতাকে সাজিয়েছেন অনেক দিক দিয়ে।
৮। ‘বাবু রাজচন্দ্র দাসের ঘাট’ বা ‘বাবুঘাট’ ছাড়াও তিনি তৈরি করিয়েছিলেন হাটখোলার ঘাট। স্নানার্থী এবং পুণ্যার্থীদের বাবুঘাটে পৌঁছনর জন্য তিনি চৌরঙ্গি থেকে চওড়া রাজপথ তৈরি করান। পরে সে পথের নাম হয় অকল্যান্ড রোড। এখন সে পথকে আমরা চিনি রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ নামে।
৯। মৃত্যুর আগে রাজচন্দ্র বিশাল জমিদারি ছাড়াও রেখে যান নগদ ৬৮ লক্ষ টাকা। তাঁর নামে বেঙ্গল ব্যাঙ্কের শেয়ার ছিল ৮ লক্ষ টাকার। এ ছাড়াও লোকের কাছে ধার দেওয়া ছিল ৩ লক্ষ টাকা।
১০। রানি রাসমমির নাম কলকাতার অন্যতম রাজপথের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেও রাজচন্দ্রের নাম মিলিয়ে গিয়েছে ঘাটের কথা থেকে।