বাজেট আপনার কুড়ি হোক বা একশো কুড়ি, আপনাকে সুলুকসন্ধান দিতে পারে পছন্দসই খাবারের।
শত ব্যস্ততার মাঝে রোজ সকালে অফিস বেরনোর আগে টিফিন কিংবা লাঞ্চটা তৈরি করে হয়ে ওঠে না অনেকেরই। কোনও রকমে সন্তানের টিফিনের ব্যবস্থা করে দিতে পারলেই কেল্লাফতে! অফিস পাড়ার দোকানগুলির ভরসা করে প্রতি দিনই একটা বড় অংশের অফিসযাত্রীর দিন গুজরান হয়।
কলকাতার অফিস পাড়াগুলিতে প্রতিনিয়ত হরেক নামের স্ট্রিট ফুডের স্টলগুলিই খিদে মেটানোর ভরসা হয়ে ওঠে। বাজেট কুড়ি হোক অথবা একশো কুড়ি, আপনাকে আপনার পছন্দসই খাবারের সুলুকসন্ধান দিতে পারে এই স্ট্রিট ফুডের স্টলগুলি। ডিমসেদ্ধ-পাউরুটি থেকে শুরু করে ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন, তন্দুরি রুটি থেকে শুরু করে ইডলি, ধোসা মেনুতে বাদ নেই কিছুই! অর্ডার করার অপেক্ষা, মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আপনার খাবারটি নিয়ে সটান হাজির হবে দোকানী। গরম গরম ধোঁয়া ওঠা খাবারটির স্বাদও নেহাত মন্দ হয় না।
তা বলে ভাববেন না, এ সব স্টলে খুব বেশি হাইজিন আশা করা যাবে না। বরং অফিসপাড়ার নামকরা ফুড স্টলগুলি বারবারই পুরসভার পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হয়েছে। এখানে দিনের পর দিন খেয়েও শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকেন কয়েক হাজার মানুষ। রইল তেমন কিছু দোকানও এলাকার হদিশ।
এ ভাবেই রোজ ভিড় উপছে পড়ে অফিসপাড়ার দোকানগুলিতে
ডেকার্স লেন: কলকাতা চত্বরের এই এলাকাকে বলা হয় খাদ্যরসিকদের স্বর্গ! ব্রিটিশ সাহেব ফিলিপ মেলনার ডেকার্সের নামে এই এলাকা ডেকার্স লেন নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে এশিয়ার প্রথম সংবাদপত্রের মালিক ও সম্পাদক জেমস্ হিকির নামানুসারে এই ডেকার্স লেন, জেমস্ হিকি সরণি নামে পরিচিত হয়। চাউমিন, মোমো, কাটলেট, ফিশফ্রাই তো আছেই, এ ছাড়াও মিলবে দুপুরের ভরপেট লাঞ্চও। ‘আপনজন’-এর তেলেভাজা, চিত্তবাবুর দোকানের চিকেন স্টু কিংবা ফিশফ্রাই । পেটে হালকা খিদে থাকলে আপনার পছন্দের তালিকায় থাকতেই পারে ভেজ অথবা চিকেন স্যান্ডউইচ। শীতের দিনে এই চত্বরে পেয়ে যাবেন গরম দুধ আর গাজরের হালুয়াও। একটু বেশি মাত্রায় স্বাস্থ্য সচেতন হলেও নিরাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। ‘আহেলি এক্সপ্রেস’-এ আপনি পাবেন স্বাস্থ্যকর খাবার তাও আবার পকেটসই দামে। গরম গরম খিচুরি আর সঙ্গে বেগুন ভাজা ও পাপড় ভাজ। খাবার শেষে একটু ঠান্ডার আমেজ পেতে চাইলে ডেকার্স লেনে মিলবে লস্যি ও ফলের রসের সারি সারি দোকান।
ডালহৌসি: সারা দিন কোর্টকাছারি, মামলা চলার পর শয়ে শয়ে লোকের রসনাতৃপ্তির ঠিকানা এই ডালহৌসি চত্বর। চা-শিঙারা, নানপুরি থেকে শুরু করে রোল, চাউমিন কিংবা ভাত, ডাল, সব্জি— সব রকম খাবারই মিলবে এই অফিস পাড়ায়। এখন কলকাতাবাসীর চাইনিজ খাবারের সঙ্গে সখ্য দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তাই এই এলাকার ফুড স্টলগুলিতেও চাইনিজ খাবারের দাপটও বেশ রয়েছে। চাউমিন, ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেনের ছড়াছড়ি স্টলে স্টলে। আবার চিনা খাবারের সঙ্গে আবার ভারতীয় খাবারের যুগলবন্দিও দেখা যায় ভালই। থেকে থেকেই রাস্তার ধারে স্টলগুলি থেকে হাঁক শুনবেন, ‘‘চিলি চিকেন- তন্দুরি রুটি।!’’ সেই খাবারও জমিয়ে উপভোগ করছেন শয়ে শয়ে লোক।
বিবাদীবাগ: এই চত্বরে পুরনো মহাকরণের ঠিক পিছনেই রাস্তা জুড়ে দেখা মিলবে সারিবদ্ধ একাধিক ফুড স্টল। পঞ্চাশ টাকার চিকেন বিরিয়ানিই হোক অথবা মোগলাই পরোটা হোক না চিকেন কাটলেট অথবা ফিশ ফ্রাই— মহাকরণে কাজের ব্যস্ততা কমলেও এই চত্বরে ভোজন রসিক মানুষের ঘাটতি নেই এত টুকুও।
ডেকার্স লেনের দোকানগুলির ভরসায় থাকেন অফিসযাত্রীর একটা বড় অংশ
চাঁদনি চক: চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন এল আই সি বিল্ডিং-এর ঠিক পাশের গলিতেই রয়েছে অফিসযাত্রীদের আর একটি খাবারের আস্তানা। অন্যান্য জায়গার মতোই এখানেও মিলবে আপনার পছন্দের হরেক রকম খাবার। গরম গরম রুটি-তরকারি, ডিম টোস্ট, নানপুরি, ধোসা, ছাড়াও মিলবে চিনা খাবারের সম্ভার। আপনার বাজেট প়ঞ্চাশ হলেই আপনি পেট ভরতি লাঞ্চ করতে পারবেন একথা নিশ্চিত।
সেক্টর ফাইভ: সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ এলাকাটি প্রাইভেট সংস্থাগুলির একচেটিয়া ঠিকানা। কলেজ মোড়ের ‘ইনফোসিস বিল্ডিং’-এর গলি জুড়ে নিত্য দিন খুলছে ফাস্ট ফুডের নয়া স্টল। দামটা অন্যান্য অফিস পাড়াগুলির থেকে একটু বেশি হলেও খাবারের মান বেশ ভালই বলা চলে। স্ট্রিট ফুডের স্টলগুলি ছাড়াও এই এলাকায় মিলবে নামীদামি সব রেস্তোরাঁর সম্ভারও। ডাবের জল, শরবত, ঘুঘনি-পাউরুটি, সব্জি-রুটি— যা চাইবেন তাই মিলবে ফাস্ট ফুডের স্টলগুলিতে। উত্তর ভারতের তন্দুরি পাকোওয়ান থেকে দক্ষিণ ভারতের খানাপিনা সবই ওই একই ঠিকানায়। রোজ একই ভাত-ডাল-তরকারি মুখে না রুচলে স্বাদ বদল করতে ভরসা রাখতেই পারেন এ সব রকমারি স্ট্রিট ফুডের স্টলগুলির উপর।