প্রতিদিন চুলের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
শীতকাল মানেই পার্টি আর পিকনিকের মরসুম। আর পার্টি-পিকনিক মানেই তো ফ্যাশন। কিন্তু খোঁপা হোক কিংবা খোলা চুলের ফ্যাশন, কোনওটাই জমবে না চুলের সঠিক যত্ন না নিলে। এমনিতেই শীতকালে চুল পড়ার সমস্যায় কম বেশি সকলেই ভোগেন। এই সময় শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে হওয়া খুশকি থেকে চুলের গোড়া আলগা হয়। চুল পড়ার পরিমাণও বেড়ে যায়। এ সময় অনেকেই পার্লারে গিয়ে একটা স্পা করিয়ে আসেন বটে, তবে তার সঙ্গে ঘরেও প্রতিদিন চুলের যত্ন নেওয়াটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
শহর জুড়ে গাড়ির সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণের মাত্রাও। সেই দূষণ থেকেই চুলের বেশির ভাগ ক্ষতি হয়। এ দিকে ব্যস্ত জীবনে হাজারো কাজের মাঝে চুলের যত্নে অনেকটা সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না।
তবে একটু চেষ্টা করলে চুলের শুষ্ক ভাব কটিয়ে জেল্লা ফিরে পেতে এক সপ্তাহই যথেষ্ট। চুলের যত্ন নিতে মেনে চলুন কিছু ঘরোয়া উপায়। এই সব উপায়ে সামান্য ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে এবং অল্প খরচেই আপনি সুন্দর ঝলমলে চুল পেতে পারেন। তৈলাক্ত চুলের জন্য যে উপায়ে আস্থা রাখা যায়, শুষ্ক চুলের বেলায় কিন্তু বদলে যায় সমাধান। তাই আপনার চুলের ধরন বুঝে তবেই প্রয়োগ করুন এই উপায়গুলি।
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট চুলের যত্নের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এই ট্রিটমেন্ট সহজেইবাড়িতে করতে পারবেন। চুলে রং করা থাকলেওএকই ভাবে কার্যকর এই হট অয়েল মাসাজ। নারকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েল একটি পাত্রে মিশিয়ে গরম করে নিন।এবার সেই মিশ্রণদিয়ে চুলে ও মাথার ত্বকে আলতো মাসাজ করুন। সপ্তাহে তিন দিন মেনে চলুন এই ঘরোয়া উপায়। এ ছাড়াও চুলের যত্নে ভরসা করুন কিছু ঘরোয়া হেয়ার প্যাকে।
রুক্ষ ও তেলতেলে উভয় প্রকার চুলের জন্যই বিশেষ কার্যকরী ডিম-মধুর এই প্যাক
• চুলকে মোলায়েম ও ঝলমলে করতে বাড়িতে সহজেই বানিয়ে ফেলুন হেয়ার প্যাক। দু’চামচ টক দই ও তিন চামচ মধু মিশিয়ে একটা প্যাক বানিয়ে নিন। স্নানের আগে এই মিশ্রণ মেখে নিন চুলে। তার পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন চুল। শুষ্ক চুলের সমস্যা থাকলে এখনই ব্যবহার করুন এই হেয়ার প্যাক।
• শীতে চুলে খুব জট পড়ে। একটি পাত্রে দুটো ডিম ভেঙে তাতে তিন চামচ মধু যোগ করে ফেটিয়ে নিন। এই প্যাকটিও স্নানের আগে চুলে লাগিয়েএক থেকে দুই ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর চুল ধুয়ে ফেলুন খুব ভাল করে। শ্যাম্পুর পর ক্ষারবিহীন বা খুব অল্প ক্ষারযুক্ত কোনও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। রুক্ষ ও তেলতেলে উভয় প্রকার জন্যই বিশেষ কার্যকরী এই প্যাক।
• স্নানের সময় এক মগ জলে মিশিয়ে নিন আধ কাপের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণ মধু। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহারের পরিবর্তে এই মিশ্রণ ঢেলে দিন চুলে। আঙুল চালিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন চুল। উপকার পাবেন সব ধরনের চুলেই।
• অ্যালোভেরা পাতা চিরে তার শাঁসটা বার করে নিন। বাজারেও অনেক রকম অ্যালোভেরা জেল কিনতে পাওয়া যায়। তবে সেখানেও রাসায়নিকের উপস্থিতি থাকে। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে সে জেল হাতে এলে সেটাই ব্যবহার করা ভাল। চুল ও মাথার ত্বকে পিএইচ-এর ভারসাম্য রক্ষা করতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকর। তবে অনেকের এই শাঁস ত্বকে সহ্য হয় নাতাঁরা ফুটিয়ে নিয়ে তবেই ব্যবহার করুন। চুলের আগা থেকে গোড়া এই শাঁস লাগান ও মাথার ত্বকে আঙুলের সাহায্যে মাসাজ করুন। শ্যাম্পুর পর এটি ব্যবহার করুন।
চুলের পরিচর্যায় অ্যালোভেরা গুণাগুণ অতুলনীয়
• শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা, স্নানের পরে ভিজে চুল শুকনোর জন্য আমরা বেশির ভাগ সময়ই ব্যবহার করি ব্লো ড্রায়ার। কিন্তু এই ব্লো ড্রায়ারের মাধ্যমে চুল শোকানো যে আরও কত বড় ক্ষতি করতে পারে তার কোনও সীমা নেই। চুল রুক্ষ হওয়া তো রয়েইছে, এ ছাড়া হেয়ার ড্রায়ারের গরম হাওয়া মাথার ত্বকেরও ক্ষতি করে। ঘন ঘন হেয়ার ড্রায়ার চুলের গোড়াকেও নষ্ট করে। তাই হেয়ার ড্রায়ার ছাড়া প্রাকৃতিক রোদ, হাওয়া অথবা পাখার হাওয়ায় চুল শোকাতেই পরামর্শ দেন ত্বক বিশেষজ্ঞরা।
• শীতে খুশকির সমস্যা থেকে রেহাই পেতে চার থেকে পাঁচ চামচ নারকেল তেলের মধ্যে একটা গোটা লেবুর রস ভাল করে মিশিয়ে নিন। এর পর সেই মিশ্রণ চুলের গোড়ায় ভাল করে লাগিয়ে নিন। এক থেকে দেড় ঘন্টা রেখেই শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত এক বার করে এই টোটকা মেনে চললেই মিলবে খুশকির সমস্যার সহজ সমাধান।
• প্লাস্টিকের চিরুনি বাতিল করে এখন থেকে ব্যবহার করুন কাঠের দাঁড়া যুক্ত চিরুনি। এই উপায় আপনার চুল পড়ার সমস্যাকে বেশ জব্দ করা যাবে।