যদি কিছু লিখেই ফেলেন নরম বালির স্লেটে, তা মুছে যাবে বার বার নোনা জলের লোভী আগ্রাসনে। কালি ছাড়াই আঙুল দিয়ে লেখা, নিজে নিজেই ধুয়ে যাবে। তাই সমুদ্রের তীরে আঁকাজোঁকা নিরাপদ। আজব দুনিয়ায় এখন, কথা কমই বলি তো সবাই। কিছু টাইপ করি মাঝে মাঝে। লিখেই মনে হতে পারে, ইশ্, না লিখলেই হত। যদিও ভাবার আগেই কথা ফেনা হয়ে মিশে যাবে সৈকতে। সাক্ষী থাকবে আকাশ আর মেঘ। ক্লাউড লিকের সম্ভাবনা নেই। কোনও পিনকোড যদি বিখ্যাত হয়ে ওঠে, তার যদি থাকে কোনও নবীন বা প্রাচীন নাম, যেমন শঙ্করপুর, চাঁদিপুর বা কোণার্ক, তাহলে ওই স্পটেই হাজির হওয়া দস্তুর। এখন মুঠোর মধ্যে গুগলের ম্যাপ। পুরীতে মিষ্টি বা দিঘায় মাছভাজা খেতে খেতে ছবি তুলে ফেললে, ফোন তো জেনেই যায়, আপনি ঠিক কোনখানে। অকুস্থলের আশেপাশে, নিকটতম আকর্ষণের কথা মনেও করিয়ে দেয়। তখন মনে হয়, ঘুরে এলে হয়। এই মিনি ওয়ান্ডারলাস্ট থেকেই বোধ হয় পায়ে পায়ে আর একটু দূরে চলে যাওয়ার ইচ্ছে জাগে কারওর কারওর। চলে গেছেন অনেকেই, এখন যাচ্ছেন আরও অনেকে।
বাঙালির অভিযানের নতুন নাম কোস্টাল ট্রেক
মিনি ওয়ান্ডারলাস্ট থেকেই বোধ হয় পায়ে পায়ে আর একটু দূরে চলে যাওয়ার ইচ্ছে জাগে কারওর কারওর। চলে গেছেন অনেকেই, এখন যাচ্ছেন আরও অনেকে।
ছবিঃ শাটারস্টক
পাহাড়ে, পিচের রাস্তা ফুরোলে চড়াই উৎরাই হাঁটার পথ শুরু। সমুদ্রগঞ্জে অমন নয়। যেখানে জল ভাঙছে শেষ বারের মতো, তার আঁচল ছোঁয়া দূরত্বে বিছানো আছে গাড়ি হাঁকানো এক্সপ্রেসওয়ে। উল্টোদিকেই যে আসল রোমান্স, যাঁরা বোঝেন, তাঁরাই চলতে শুরু করেন সৈকত ধরে। কেউ ঘুরে আসেন জেলে বস্তি অবধি। কেউ আরও অনেকখানি। অস্থির জল ও স্থির ডাঙার ক্রম পরিবর্তনশীল নো ম্যানস ল্যান্ড হয়ে ওঠে ট্রেকারের স্বঘোষিত রাস্তা। একই মাটি জল, একই নীলাকাশ হলেও খোঁজ চলে পরের সমুদ্রের। প্রায়ই শুনি, দিঘা থেকে কারা যেন হাঁটা লাগিয়েছেন পারাদ্বীপের দিকে। নোনা অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় আজ কোস্টাল ট্রেকের মানচিত্রে দিব্বি দাগ কেটেছে অজস্র রুট। শুধুমাত্র বেলাভূমি নয়, এখানে মাঝে মাঝেই জেগে ওঠে আশ্চর্য দ্বীপ। কেউ আলাদা হয়ে যায় জোয়ারে। অন্ধ্র উপকূলে এমন এক দ্বীপের মন্দিরে আমি কাটিয়েছি সারারাত। ঢেউ গুনেছি শব্দ শুনে, নীলাভ চন্দ্রালোকে। ভোররাতে পায়ের কাছে জলভাঙার শব্দ কমে আসতে ফিরে গিয়েছিলাম মূল ভূমিতে, ঢেউয়ের মধ্যে ফের জেগে ওঠা পাথরের পথ দিয়ে। শ্রীলঙ্কায় নোনা জলের ঝিনুক ছোড়া দূরত্বে বালি খুঁড়তেই বেরিয়ে পড়েছিল টলটলে মিষ্টি জল। এখন যেখানে রোহিঙ্গারা সংবাদের শিরোনামে, বাংলাদেশের সেই টেকনাফে নৌকো করে নাফ নদী পেরিয়ে ছুঁয়ে এসেছিলাম মায়ানমার, গোপনে। প্যাগোডা দেখেছিলাম এক।
সাগরতট মাত্রেই জনবহুল। ক্রমাগত ছাউনি করা নৌকোর গ্যারাজ, জেলেদের আস্তানা, এলা রঙের ইস্কুল, বালিয়াড়ির আড়াল। ভাষা না বুঝলে অসুবিধে নেই। পিঠে ব্যাগ নিয়ে শহরের বাবুরা হেঁটে চলেছে দেখে কেউ না কেউ উপহার দেবেন এত্তো মাছ। বলবেন, ওইদিকে একটু গেলেই তো বাস পাবেন। সারাদিন যখন তখন জলে নেমে ননস্টপ হুপোহুপি তো আছেই। কপাল ভাল থাকলে অ্যাডভেঞ্চার। গোয়ায় এক বার হাঁটার মতো তীর পাই নি, স্থানীয় মানুষের পালতোলা ভেলায় চেপে বাইপাস করে চলে গিয়েছিলাম পাথুরে, জঙ্গুলে অনেকটা জায়গা। তাঁবু খাটানোর জায়গা পেয়েছিলাম সন্ধের মুখে। গভীর রাতে দূরের বাঁকে আলো জ্বলা ট্রেন চলে গিয়েছিল কোঙ্কন রেলপথ ধরে।