বাংলা ছাপাখানার আঁতুড়ঘর শ্রীরামপুর। গেলেই মনে হয়, যেন ইতিহাস সঙ্গে সঙ্গে চলেছে। একদা ড্যানিশ অধ্যুষিত এলাকা ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। আজও এখানকার রাস্তাঘাট-অলি-গলিতে যেন সেই আবেশ।
তেমনই এক টুকরো ইতিহাসের কোলাজ প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো ইউনিক লজ। এ বাড়িতে রয়েছে বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য মার্বেলের মূর্তি, পোর্সেলিনের শিল্প নিদর্শন, বর্মা টিকের আসবাবপত্র এবং প্রচুর ঘড়ি। ২১ নম্বর দে স্ট্রিটের এই বাড়িটি ‘সিংহ বাড়ি’ নামে পরিচিত। সেই সময়ের এক বিখ্যাত বিল্ডিং কনট্রাক্টর দুর্গাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের বাড়ি এটি। বর্ধমানের দেবীপুর এঁদের আদি বাসস্থান। সেখান থেকে ১৯ শতকের মাঝামাঝি শ্রীরামপুরে চলে আসা। দুর্গাপ্রসন্নের বাবা কালীনাথ ভট্টাচার্যকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তলব করেন শ্রীরামপুরে সংস্কৃত পড়ানোর উদ্দেশ্যে। সেই সময় থেকেই পরিবারের শ্রীরামপুর বাস। কালীনাথ খুব অল্প বয়সেই ইহলোক ত্যাগ করেন। এর পর তাঁর পুত্র দুর্গাপ্রসন্ন নির্মাণ শিল্পে নিযুক্ত হন। প্রচুর পরিশ্রম করে নিজের প্রতিপত্তি স্থাপন করেন। এমনই খ্যাতি ছিল যে, হাওড়া ব্রিজ তৈরির টেন্ডারও চাওয়া হয় তাঁর থেকে। নিউ মার্কেটের একটি অংশও তাঁর সংস্থার দ্বারা নির্মিত।
শ্রীরামপুরের এই বাড়িতে একদা একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা ছিল। যেখানে ভারতীয় ও বর্মার সাদা ময়ূর, কাকাতুয়া, ম্যাকাও, আফ্রিকান ও অস্ট্রেলীয় টিয়া, সাদা-কালো রাজহাঁস, সোনার হরিণ ছিল। এখনও বাড়ির একতলার বারান্দায় নানা ধরনের পাখির দেখা মেলে। দুর্গাপ্রসন্নের নানা ধরনের বিদেশি কুকুরও ছিল। গ্রেট ডেন থেকে শুরু করে, আইরিশ সেটার, ইংলিশ সেটার ছিল। এই সমস্ত কুকুর নিয়ে তিনি প্রচুর শো করতেন।