ভূগোল বইয়ের ম্যানগ্রোভ দেখে মালুম হবে আপনি এখন ‘হালুম দুনিয়া’য়। সূর্য সত্যিই ডুবে যাবে, জলে। রাতে সব চুপচাপ, অন্ধকারে কাদের যেন আলো, দূরে কোথাও টুকরো হাসাহাসি।
ভোরের কুয়াশার মধ্যে দিয়ে দেখা যাবে, নোঙর করে ভেসে রয়েছেন খাঁড়িতে। নরম সূর্যের আলো থমকে আছে দিগন্তে। কে যেন জাল টেনে হেঁটে হেঁটেই পেরিয়ে যাচ্ছে জল, আলতো ভাবে ছুঁয়ে থাকা রোদের ঝিলিমিলিকে ভেঙেচুরে। ভাঁটা যে, জল ফেরার অপেক্ষা। এ দিকে লুচি, আলুর হলুদ তরকারি রেডি। গতরাতে বনবিবির গল্প, সহযাত্রীর কাছে শোনা কপালকুণ্ডলার রেফারেন্স মাথায় ঘুরলেও মন বসবে না ওতে। খাঁড়ি খুব সরু, ঝুঁকে পড়া গাছের ডালে হাত বাড়ালেই নির্লিপ্ত কিংফিশার সরে যাবে। গাছপালার ভিতর বেদম কিচিরমিচির। হরিণ, না চাইতে কুমির দেখে ফেললে মনে পড়বে এ বনের বিগ বসের কথা। তখনই শুনবেন সেই অমোঘ বাক্য, “আপনি দেখতে পাচ্ছেন না স্যার, বাঘ কিন্তু আপনাকে দেখছে।” বাঘের ডেরা তার, জাল, বেড়া দিয়ে ঘেরা, কারওরই অনুমতি নেই পেরনোর। রয়েছেন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে, যার পরিবেশ সংরক্ষণে ট্যুর অপারেটার থেকে গেস্ট সবারই দায়িত্ব রয়েছে।
সজনেখালি, সুধন্যখালি, নেতিধোপানিতে জঙ্গল দেখবেন পাখির চোখে। ভিজে মাটিতে যে কোনও দাগের সারি উসকে দেবে ওয়াইল্ড সম্ভাবনা। হ্যাঁ, হাজার হাজার ফ্লোরা ফনার এক আধটি চোখে পড়বে বইকি। বাকিরা অধরা থেকে যাক, আছে কোথাও তারা, আলোতে ছায়াতে মোড়া নিজ নীড়ে। ভাল থাকুক তারা, এই সদিচ্ছায়, অযথা উতলা না হওয়ার রয়েল বেঙ্গল মেজাজে ভরে উঠবে আড়াই দিনের প্যাকেজ। হল্লা করার ইচ্ছেটাই হবে না। সঙ্গে আনা বইটার ফ্লাই পেজ পেরতে ভুলে যাবেন।
বেড়াতে এসে শপিং জরুরি, পাবেন ওয়ান এন্ড অনলি নির্ভেজাল সরকারি মধু, সঙ্গে আরও অনেক বনজ বিস্ময়। বঙ্গোপসাগর ঠিক কতদূরে আর, জানা হবে না। ইচ্ছে হবে না চেকবক্সের টিক না দেওয়া পয়েন্টগুলো দেখতে। ঢিমে লয়ে ফুরিয়ে আসা সময়ে শেষ বারের মতো আর একটি অভিজ্ঞতা হবে। মেনল্যান্ডে পা দিয়েই বুঝবেন এই ক’দিন বেশ স্টেবল ছিলেন। এখন দুনিয়াটা যেন একটু দুলছে।
কলকাতা থেকে কীভাবে যাবেন ঃ
সুন্দরবনের নিকতটম রেলস্টেশন হল ক্যানিং। এখান থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব ৪৮ কিমি। নিকটতম শহর গোসাবার দূরত্ব ৫০ কিমি। ট্রেনে ক্যানিং পৌঁছে বা সড়কপথে গোসাবা এসে আপনাকে জলপথে পৌঁছতে হবে দক্ষিণরায়ের ডেরায়। নামখানা, সোনাখালি, রায়দীঘির মতো জনপদ থেকেও জলপথে পৌঁছতে পারবেন সুন্দরী গাছের অরণ্যে।