ডাকবে তির চিহ্ন দেওয়া থাকার জায়গার নাম। পাঁচিলে ভেনেস্তার ফুলেল বিপ্লব জাগা বসতবাড়ি। বেড়া উপচোনো লতাপাতায় নধর ছাগলের দিনভর গভীর মনোনিবেশ। গুগলকে ফাঁকি দেওয়া মোরামের রাস্তা। পুকুরপাড়ে গা শুকোনো হাঁস। কে যেন সাইকেল নিয়ে চলেছে বিরাট মুড়ির বস্তা চাপিয়ে। কামারপাড়া সাইনবোর্ড দেখে বা ঢুকে পড়লে একটু বা আর একটু এগলে আগে থেকে বোঝা সম্ভবই নয় যে, এখানে দিব্যি কাটবে সময়।
প্রথম দুপুরে মৌরলা মাছের ঝালের রেশ কাটলে, দু’পা এগলে হঠাৎই দিগন্ত ব্লক করে মাটির বাঁধ। হাঁচড়ে-পাচঁড়ে তার ওপর উঠলেই সামনে মস্ত জলাধার, লক্ষ্মীসায়র। পরিত্যক্ত ঘাট, কাদের যেন আধ ডোবা নৌকো। আপনাকে নজরে রাখা একটি বক আর পানকৌড়ি। হু হু করছে মোবাইলের সিগন্যাল। ঘুরলেই পেল্লায় বাঁশঝাড়, মেঠো রাস্তার এ পার থেকে ও পারে সরসরে গল্পগুজব চলছে হাওয়ায় হাওয়ায়। শুনে প্রচুর ঝরাপাতা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে অকারণে, আবার শান্ত হয়ে জিরবে বলে।
কার যেন তালপাতার বেড়ার ও পারে উঁকি দিচ্ছে বিনুনি করা ধানের মরাই, সিজনে খুচ খুচ টানা শব্দ পাবেন মেশিনে ধান ঝাড়ার। কামারপাড়ায় শেষ পর্যন্ত সব রাস্তাই চলে গিয়েছে অজয়ের দিকে। আধ ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন হালসিডাঙায়, কিন্তু খুঁজে পাবেন না কাউকে। নদীটাও কিছুক্ষণ লুকিয়ে থাকবে শরবনের আড়ালে। ধুলো পায়ে আপত্তি থাকলে টোটো নিয়ে চলে যান বনভিলা মোড় পেরিয়ে ধল্লা পর্যন্ত। বাঁ-পাশে শালের জঙ্গলে ঢুকলে সব চুপ। আদিবাসীদের গ্রাম। দেখে অবাক হবেন, নিরাভরণ মাটির বাড়ির নিকোনো উঠোনে বেঁচে থাকার সব কিছু ছড়িয়ে আছে ছবির মতো, অকল্পনীয় পরিচ্ছন্নতায়। এর পরেই আমখই ফসিল পার্ক।
প্রকৃতির প্রাগৈতিহাসিক ভাস্কর্যের উন্মুক্ত প্রদর্শনী। আপনার স্বভাব যদি অল্প কথার, বই নিয়ে ঝিমোনোর হয়, নাগরিক হল্লা যদি আপনাকে ক্লান্ত করে, তা হলে এই জায়গার প্রকৃতি আপনার পোষাবে। সন্ধে নামলে কানে আসতে পারে কারওর ঘরের পরিমিত শঙ্খধ্বনি। আরও রাতে হাওয়ায় ভাসতে পারেআদিবাসী গ্রামের একঘেয়ে দিশি মিঠে সুর। টর্চ নিয়ে অন্ধকারে ঘুরঘুর করলে বিপদ নেই। দু’একটা কুকুর আপত্তি জানাবে দূর থেকে। আসলে, সবাই ওঠে কাক ভোরে। সন্ধের পরেই রাত নেমে যায় এদেশে, যাদের টিভি নেই তাদের ঘরে। ক্যালেন্ডার যাই বলুক, চাঁদ উঠতেও পারে। এমন নীল নিস্তব্ধ অন্ধকার শেষ দেখেছেন কবে?
কলকাতা থেকে কীভাবে যাবেন :
কলকাতা থেকে রেল অথবা সড়কপথে শান্তিনিকেতন। সেখানে পৌঁছে টোটো বা অন্য গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন।