Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

২২ নভেম্বর ২০২৪ ই-পেপার

Health Tips: শীতের কলকাতায় মেলে একাধিক ফল-সব্জি, কিন্তু কোনগুলি এ সময়ে খাওয়া স্বাস্থ্যকর

মরসুমের টাটকা শাক-সব্জি-ফলের বদলে যদি কোল্ডস্টোরে সঞ্চিত ফল-সব্জি খান, সেই স্বাদ তো পাবেনই না, পুষ্টিও পাবেন না৷

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:৪৬

প্রকৃতি এমন ভাবে তার ভাড়ার পূর্ণ করে যাতে ঋতু অনুযায়ী মানুষের শরীরের চাহিদা পূরণ হয়

ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং খেয়ে খেয়ে মুখ পচে গেছে! এ বার তাই পটল, ঢেরশ বা এচরের খোঁজ করছেন? বা আপেল, কমলালেবু তো অনেক খাওয়া হল, এ বার পানিফল খাওয়ার ইচ্ছে?

ভুল করছেন৷ মরসুমের টাটকা শাক-সব্জি-ফলের বদলে যদি কোল্ডস্টোরে সঞ্চিত মাল খান, সেই স্বাদ তো পাবেনই না, পুষ্টিও পাবেন না৷ ঋতু অনুযায়ী শরীরে পুষ্টি ও এনার্জির যে চাহিদা থাকে, তা-ও মিটবে না৷

কেন মরসুমি ফল খাওয়া জরুরি
ধরুন প্রবল ঠান্ডায় শরীর চাইছে উত্তাপ৷ বাঁধাকপি, ব্রকোলি, ফুলকপি, ওলকপি, মুলো, পালং, সর্ষে শাক, গাজর, বীট ছাড়া কে সেই উত্তাপ জোগাবে? নাছোড় সর্দি-কাশির প্রকোপ কমাতে টক ফল তথা ভিটামিন সি ছাড়া চলবে কি? কাজেই কমলা লেবু, আমলকি, কুল, ডালিম, সবেদা, ন্যাশপাতি, জলপাই, আপেল খেতেই হবে৷ বা ধরুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান, ভিটামিন সি-র সঙ্গে অন্যান্য ভিটামিন, খনিজ পেতে গেলে এই মরসুমের সব্জি-ফল ছাড়া কি কোনও গতি আছে?

Advertisement

খেতে হবে মরসুমি সব্জি ও ফল

প্রকৃতি এমন ভাবে তার ভাড়ার পূর্ণ করে যাতে ঋতু অনুযায়ী মানুষের শরীরের চাহিদা পূরণ হয়৷ সব ঋতুতেই এক ব্যাপার৷ সে জন্য গরমে সেই সব সব্জি-ফলের সমারোহ হয় যা খেলে শরীরের জলের চাহিদা পূরণ হয়, বেশি এনার্জি পান মানুষ ও সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব কম পড়ে শরীরে৷ আর শীতে শরীর গরম থাকে ও বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ কোল্ডস্টোরের দৌলতে বাজারে সব সময় সব কিছু পাওয়া যায় বলে যদি উল্টোটা করেন, কী হতে পারে বুঝতেই পারছেন৷

সে জন্য যে ঋতুতে যে অঞ্চলে যে ধরনের ফল ও আনাজ চাষ হয়, সেই সব ফল-আনাজই খেতে বলেন বিজ্ঞানীরা

সে জন্য যে ঋতুতে যে অঞ্চলে যে ধরনের ফল ও আনাজ চাষ হয়, সেই সব ফল-আনাজই খেতে বলেন বিজ্ঞানীরা


উল্টো বিপত্তি

ধরুন, শীতে আম, কাঠাল, লিচু খেতে শুরু করলেন৷ প্রচুর মিষ্টি এই সব ফল৷ মিষ্টি দেয় এনার্জি৷ কাজেই গরমে ঘেমে-নেয়ে ক্লান্ত অবস্থায় খেলে চনমনে হয়ে ওঠে শরীর৷ কিন্তু শীতে আম-কাঠাল খেয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে থাকলে ওই এনার্জির সবটুকুই ফ্যাটে পরিণত হয়৷ বা তীব্র গরমে যদি শীতের সব্জি খান, আরও বেশি গরম লাগে৷ আর শীতে গরমের সব্জি খেলে অতিরিক্ত জল পায় শরীর, যা সে সময় প্রয়োজন নেই৷ তা ছাড়া অসময়ের সব্জি-ফলে পুষ্টিগুণও অনেক কম থাকে৷

পুষ্টির ঘাটতি হয়

গাছ থেকে তোলার পর যত তাড়াতাড়ি সেই সব্জি ও ফল খাওয়া যায়, তত উপকার৷ কারণ সময়ের সঙ্গে পুষ্টিগুণ কমতে থাকে৷ সে জন্য যে ঋতুতে যে অঞ্চলে যে ধরনের ফল ও আনাজ চাষ হয়, সেই সব ফল-আনাজই খেতে বলেন বিজ্ঞানীরা৷ দূর থেকে আমদানি করলে বা কোল্ডস্টোরে জমিয়ে রাখলে যত সময় যায় তত পুষ্টি কমে, পচন ও পোকামাকড়ের আক্রমণ এড়াতে কিছু রাসায়নিক মেশানো হয়। সব্জি-ফল বড় করতে ও পাকাতেও রাসায়নিক মেশানো হয়, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর৷ তা ছাড়া সে সবের দামও মরসুমি সবজি-ফলের চেয়ে বেশি৷

সব্জি খান সব রকম৷

সব্জি খান সব রকম৷


অতএব শীতের সব্জি ও ফল

শীতকালে নানা ধরনের শাক পাওয়া যায়৷ যেমন, মেথি, পালং, সর্ষে, মুলো, ধনে৷ শাকের ক্যালোরি কম, ফাইবার প্রচুর৷ নিয়মিত খেলে ওজন কম থাকে৷ পেট ভাল থাকে৷ এ ছাড়া আরও গুণও আছে৷ যেমন, মেথি শাকে প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন এ-বি-সি-ই ও ফাইটোইস্টে্রাজেন আছে৷ নিয়মিত খেলে ঋতুস্রাবের ব্যথা কমে, স্তন্যদুগ্ধের পরিমাণ বাড়ে, সুগার ও কোলেস্টেরল কম থাকে৷ হৃদ্‌রোগ থেকে শুরু করে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, আথ্রাইটিস, গলা ব্যথার প্রকোপ কমে৷ সর্ষে শাক ভিটামিন ও মিনারেলে পরিপূর্ণ৷ অন্য উপকারের পাশাপাশি সে হার্ট ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখে, রক্তাল্পতা কমায়, এমনকি, ক্যানসার ঠেকাতেও তার কিছু ভূমিকা আছে৷ আর পালং শাক তো সুপার ফুড৷ হাড় ভাল রাখে, রক্তচাপ, সুগার, হাঁপানি, রক্তাল্পতা ইত্যাদিকে বশে রাখে৷ কাজেই রোজ কিছু না কিছু শাক খান৷

কমলা লেবু, আমলকি, কুল, ডালিম, সবেদা, ন্যাশপাতি, জলপাই, আপেল খেতেই হবে৷

কমলা লেবু, আমলকি, কুল, ডালিম, সবেদা, ন্যাশপাতি, জলপাই, আপেল খেতেই হবে৷


সব্জি খান সব রকম৷ বিশেষ করে রঙিন সব্জি৷ যেমন, বিট, গাজর, ব্রকোলি, মটরশুঁটি, মুলো, বেগুন, মিষ্টি আলু, বাঁধাকপি, বিনস৷ সঙ্গে ফুলকপি, ওলকপি, সব৷ সবেতেই ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইটোকেমিক্যাল আছে প্রচুর৷ ক্যালোরি মোটের উপর কম৷ ফলে কম তেল-ঘিয়ে রান্না করে নিয়মিত খেলে ওজন কম রাখা কোনও বড় ব্যাপার নয়৷ তার পাশাপাশি প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরল, রক্তাল্পতা কম রাখা, হার্ট ও হাড় সুস্থ রাখা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো হল উপরি পাওনা৷ ক্যান্সার ঠেকাতেও এই সব সব্জির কোনও কোনওটার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে বলে জানা গেছে৷

অতএব শীতে খান শীতের সব্জি ও ফল৷ শেষের দিকে যতই একঘেয়ে লাগুক না কেন৷

Advertisement