আগের বছর মার্চ মাসের শেষের দিকে যখন হঠাৎ পৃথিবীটা থমকে দাঁড়িয়ে গেল, প্রথম কয়েকটা দিন বেশ এক অন্য রকম ছুটি মনে ভেবে উল্লসিত হয়েছিলাম। বাড়িতে থাকতে হবে, কেউ বেরতে পারবে না, বাজার অবধি করতে যেতে হবে না। কিন্তু ক’দিন বাদেই স্ফূর্তির বেলুন ফুসসস করে চুপসে গেল একটা প্রশ্নে ধাক্কা খেয়ে— খাব কী? কী খাব? কাপড় কাচা, বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কারের মতো শ্রম বিভাজন করতে পারলেও রান্নাটা গিন্নিকেই করতে হয়, আর সেই রান্না যত্ন নিয়ে করলেও মেয়েরা ডিমের কষা মুখ কুঁচকে খায়, যেন কালমেঘ পাতা খাচ্ছে। ও দিকে গিন্নির মেজাজের তাপে লুচি ভাজা হয়ে যাবে।
এটা আমার গল্প নয়। আমাদের সব্বার গল্প। এই অতিমারি আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। সময়, পরিবেশ, পরিবার, বন্ধু, স্বজন, সুস্বাস্থ্য সব কিছু আমাদের নতুন করে শেখাল বেঁচে থাকা আর ভাল থাকার চেয়ে বড় কিচ্ছু হয় না। এক থমকে থাকা পৃথিবীতে যখন রাশি রাশি দুশ্চিন্তা ধেয়ে আসে আর আগামিকালটা অস্পষ্ট হতে হতে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়, তখন মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্যে সবাইকে চাঙ্গা রাখতে রান্নাঘরটা যে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, এটা কি কেউ জানত? শুভ্র ব্যবসায়ী মানুষ, বছরের নির্দিষ্ট কয়েক মাস ওর জন্যে খুব গুরুত্বের। লকডাউন পিরিয়ডে হতাশা আর ভয় থেকে দূরে থাকতে রান্নাঘরে ঢুকেছিলও। মেয়েদের মুখে হাসিটা ধরে রাখতে সে বাড়িতে ফুচকা, বোঁদে, মোমো সব কিছু বানিয়েছে। আর বানাতে গিয়ে দেখেছে, এগুলো রান্নাঘরের রোজকার বাসন দিয়েই বানানো যায়। সে আটা আর সুজি মিশিয়ে রুটির মতো বেলে চাটনি খাওয়ার ছোট বাটি দিয়ে গোল করে কেটেছে আর ছাঁকা তেলে ভেজে ফুচকা বানিয়েছে। মোমো বানানোর জন্যে ভেবেচিন্তে প্রেশার কুকারের স্ট্যান্ড ব্যবহার করেছে যার ছিদ্রগুলো দিয়ে অনায়াসে বাষ্প যেতে পারে। বোঁদে বানিয়েছে লুচি ভাজার ছান্তা দিয়ে বেসন গোলা তেলে ফেলে। এই সব বানিয়ে শুভ্র পেয়েছে তার মেয়েদের অনাবিল আনন্দ আর বিশ্বাস, ও পেয়েছে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জোর।