Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

২২ নভেম্বর ২০২৪ ই-পেপার

নকশাল আন্দোলন, বাংলাদেশের ভিটে ছাড়াদের দেখে আঁতকে উঠেছিলাম

ময়দান থেকে হাজরা ফেরার সময় কত লাশ যে রাস্তার ধারে পরে থাকতে দেখেছি গুনে বলা যাবে না। আজও সেই সব দৃশ্যের কথা ভেবে রাতের ঘুম উড়ে যায়।

শ্যাম থাপা
কলকাতা ০৩ মার্চ ২০২১ ১৩:০৩

শ্যাম থাপা, প্রাক্তন ফুটবলার।

আমার পরিবারের সবাই ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। ছোটবেলা দেহরাদূনে কেটেছে। তবে ১৯৬৬ সালে ইস্টবেঙ্গল একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে যায়। সেখানে গোর্খা দলের হয়ে লাল-হলুদের বিরুদ্ধে দারুণ খেলেছিলাম। তখন আমার বয়স মাত্র ১৭। ক্লাবের কর্তা জ্যোতিষ গুহ আমাকে কলকাতা নিয়ে আসেন। প্রথমবার কলকাতায় পা রাখার পর আমার এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। দমদম বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে একেবারে চমকে গিয়েছিলাম। কারণ বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা থেকে একেবারে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত রাস্তার ধারে শুধু বস্তি চোখে পড়ছিল। কোনও ঘরে বিদ্যুৎ ছিল না। বরং ওঁরা কেরাসিন তেল দেওয়া কুপি ব্যবহার করতেন। তবে পার্ক স্ট্রিটে গাড়ি ঢুকতেই যেন এক অন্য কলকাতা দেখলাম। চারিদিকে শুধু বড় বড় বাড়ি। একেবারে ঝাঁ চকচকে ব্যাপার স্যাপার দেখে কোনটা আসল কলকাতা বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

কলকাতায় আসার পর প্রথম হাজরার বসুশ্রী সিনেমা হলের সামনে একটা বাড়িতে থাকতাম। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে শুরুটা দারুণ হয়েছিল। প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেছিলাম। কিন্তু সে বার বেশি দিন কলকাতায় থাকতে পারিনি। কারণ ছিল দুটো। সেনা পরিবারে বড় হওয়ার জন্য বাড়ির সবাই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন। তা ছাড়া কলকাতা জুড়ে তখন নকশাল আন্দোলন জোরদার ছিল। মায়দান থেকে হাজরা ফেরার সময় কত লাশ যে রাস্তার ধারে পরে থাকতে দেখেছি গুনে বলা যাবে না। আজও সেই সব দৃশ্যের কথা ভেবে রাতের ঘুম উড়ে যায়। কলকাতার এমন অবস্থার কথা আমার বাবা জানতে পেরে গিয়েছিলেন। তিনি ক্লাবের সঙ্গে কথা বলে আমাকে ফের দেহরাদূন নিয়ে চলে যান। তবে আমার মন টেকেনি। কারণ তত দিনে ফুটবলকে ভালবেসে ফেলেছিলাম। কলকাতা ও এই শহরের খেলা পাগল মানুষদের ভালবেসে ফেলেছিলাম। তাই আবার ১৯৭০ সালে কলকাতায় ফিরলাম।

Advertisement

তবে সেই সময় আরও একটা ঘটনা আমার মনকে খুব নাড়িয়ে দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা পেলেও বাংলাদেশের অবস্থা মোটেও ভাল ছিল না। কাতারে কাতারে বাংলাদেশি এখানে শুরু করলেন। রাস্তার ধারে, অভুক্ত অবস্থায় ওঁরা দিন কাটাতেন। যাদবপুর, টালিগঞ্জ, গড়িয়া, বাঁশদ্রোণী, লেক গার্ডেন্স অঞ্চল সেই দেশের মানুষে ভরে উঠেছিল। ওঁদের হতদরিদ্র অবস্থা দেখে চোখে জল এসে যেত। তাঁদের সাহায্য করার জন্য আমরা বেশ কয়েকটা প্রদর্শনী ম্যাচও খেলেছিলাম। কিন্তু সেই সামান্য টাকায় কি ওঁদের আর দিন ফিরে আসে!

ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে মফতলালে সই করার জন্য সেখানে চাকরি পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই কলকাতা ছেড়ে ১৯৭২ সালে তৎকালীন বম্বে চলে গিয়েছিলাম। বেতন ভাল হলেও ওখানে মানিয়ে নিতে পারিনি। তাই প্রয়াত শান্ত মিত্রের হাত ধরে ১৯৭৪ সালে এই শহরে ফিরে আসি। সেটা না হলে শ্যাম থাপা ‘ব্যাক ভলি’র জন্য বিখ্যাত হত না। কারণ এই শহর খেলোয়াড়দের সম্মান দিতে জানে।

তা ছাড়া আরও একটা বিষয় নিয়ে কলকাতার প্রতি ভালবাসা রয়ে গিয়েছে। ফুটবলের সঙ্গে আমি খুব ভাল লন টেনিস খেলি। এই বুড়ো বয়সেও সকালে র‍্যাকেট হাতে কোর্টে নেমে পড়ি। সেটা সাউথ ক্লাব হোক কিংবা ডিকেএস (দক্ষিণ কলকাতা সংসদ)। অনেকের সঙ্গে টেনিস খেলেছি। তবে আমার সেরা পার্টনার রাজ্যের প্রাক্তন ও প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়।

Advertisement