আমার পরিবারের সবাই ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। ছোটবেলা দেহরাদূনে কেটেছে। তবে ১৯৬৬ সালে ইস্টবেঙ্গল একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে যায়। সেখানে গোর্খা দলের হয়ে লাল-হলুদের বিরুদ্ধে দারুণ খেলেছিলাম। তখন আমার বয়স মাত্র ১৭। ক্লাবের কর্তা জ্যোতিষ গুহ আমাকে কলকাতা নিয়ে আসেন। প্রথমবার কলকাতায় পা রাখার পর আমার এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। দমদম বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে একেবারে চমকে গিয়েছিলাম। কারণ বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা থেকে একেবারে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত রাস্তার ধারে শুধু বস্তি চোখে পড়ছিল। কোনও ঘরে বিদ্যুৎ ছিল না। বরং ওঁরা কেরাসিন তেল দেওয়া কুপি ব্যবহার করতেন। তবে পার্ক স্ট্রিটে গাড়ি ঢুকতেই যেন এক অন্য কলকাতা দেখলাম। চারিদিকে শুধু বড় বড় বাড়ি। একেবারে ঝাঁ চকচকে ব্যাপার স্যাপার দেখে কোনটা আসল কলকাতা বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
কলকাতায় আসার পর প্রথম হাজরার বসুশ্রী সিনেমা হলের সামনে একটা বাড়িতে থাকতাম। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে শুরুটা দারুণ হয়েছিল। প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেছিলাম। কিন্তু সে বার বেশি দিন কলকাতায় থাকতে পারিনি। কারণ ছিল দুটো। সেনা পরিবারে বড় হওয়ার জন্য বাড়ির সবাই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন। তা ছাড়া কলকাতা জুড়ে তখন নকশাল আন্দোলন জোরদার ছিল। মায়দান থেকে হাজরা ফেরার সময় কত লাশ যে রাস্তার ধারে পরে থাকতে দেখেছি গুনে বলা যাবে না। আজও সেই সব দৃশ্যের কথা ভেবে রাতের ঘুম উড়ে যায়। কলকাতার এমন অবস্থার কথা আমার বাবা জানতে পেরে গিয়েছিলেন। তিনি ক্লাবের সঙ্গে কথা বলে আমাকে ফের দেহরাদূন নিয়ে চলে যান। তবে আমার মন টেকেনি। কারণ তত দিনে ফুটবলকে ভালবেসে ফেলেছিলাম। কলকাতা ও এই শহরের খেলা পাগল মানুষদের ভালবেসে ফেলেছিলাম। তাই আবার ১৯৭০ সালে কলকাতায় ফিরলাম।