Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ই-পেপার

ফুটবলে সেই আগের আবেগ নেই, এটাও কলকাতার বদল

ভিন রাজ্যের মানুষরা এখানে যে ভাবে সমাদর পেয়ে থাকেন, আমরা কিন্তু অন্যত্র গেলে সেই সম্মান কিংবা আতিথেয়তা পাই না। কিন্তু সেটা এখন আর বদলে ফেলা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
কলকাতা ০৩ মার্চ ২০২১ ১৯:০৬

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, ফুটবলার

কলকাতার নগর জীবনের কথা বলতে গেলে দুটো বদল আমার বেশ চোখে পড়েছে। প্রথমটা বাঙালির আতিথেয়তা, যেটা আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া। এবং দ্বিতীয় ব্যাপার হল, এই অতিমাত্রায় আতিথেয়তা দেখাতে গিয়ে নিজেদের হেয় প্রতিপন্ন করা। আমাদের ছোটবেলায় ভিন্‌ রাজ্য থেকে প্রচুর মানুষকে এখানে আসতে দেখতাম। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, অসম, ওড়িশা এমনকি দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্য থেকেও সর্বস্তরের মানুষ এখানে এসেছেন। তাঁদের অতিমাত্রায় এখানে আসার ফলে আমরা কোথায় যেন নিজেদের সংস্কৃতিকে হারিয়ে ফেলেছি। ভিন রাজ্যের মানুষরা এখানে যে ভাবে সমাদর পেয়ে থাকেন, আমরা কিন্তু অন্যত্র গেলে সেই সম্মান কিংবা আতিথেয়তা পাই না। এটা একটা বিরাট বড় সমস্যা। কিন্তু সেটা এখন আর বদলে ফেলার উপায় নেই। বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে।

অন্যদের বড় করে দেখানো আমাদের বরাবরের স্বভাব। ব্যাপারটা ময়দানের উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। আমাদের সময় প্রচুর ভাল মানের বাঙালি ফুটবলার ছিলেন। কিন্তু সেই সময়ের কথা উঠলেই আমরা ভিন রাজ্যের ফুটবলারদের নিয়ে বেশি আলোচনা করি। স্ট্রাইকারদের নিয়ে আলোচনা হলেই প্রথমে মহম্মদ হাবিব, মহম্মদ আকবরকে নিয়ে কথা হয়। যদিও আমাদের কাছে কিন্তু পরিমল দে, সুভাষ ভৌমিক, প্রদীপ দত্ত, অশোক চট্টোপাধ্যায়ের মতো খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু তাঁদের নিয়ে বেশি লেখালেখি হয় না। মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, সুরজিৎ সেনগুপ্তের মতো উইঙ্গার থাকলেও ময়দানে উলগা নাথনকে নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। আমি কাউকে খাটো করছি না। কিন্তু বাঙালিদের প্রতি এই বৈষম্য মানতে আমার অসুবিধা হয়।

Advertisement

ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান বিপক্ষের কাছে ৬ গোল খেয়ে গেলে কিংবা চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ হেরে গেলে এখন ফেসবুকে বিপ্লব হয়। আমাদের সময় কিন্তু সেটা ছিল না। এই বিষয়ে একটা ঘটনা বেশ মনে পড়ছে। ১৯৮৪ সালে মোহনবাগান থেকে ইস্টবেঙ্গলে এসেছি। সে বার ইডেন গার্ডেন্সে ডার্বি হেরে যাই। সেই হারের জন্য আমরা ক্লাবের তাঁবু থেকে পুলিশ ব্যারাকিং ছাড়া বেরতে পারতাম না। শুধু তাই নয়, প্রায় এক মাস পর্যন্ত পুলিশের ভ্যান আমাদের এক এক করে বাড়ি পৌঁছে দিত। এমনকি অনুশীলন করতে আসার সময়ও সমর্থকরা ঝামেলা করতেন। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালির সঙ্গে গায়ে থুতু পর্যন্ত পড়েছে। তবে সেই ঘটনার প্রায় দেড় মাস পরে ফিরতি ডার্বি জেতার পরে সেই সমর্থকরাই আমাদের কোলে তুলে ক্লাবে পৌঁছে দিয়েছেন।

এমন ঘটনা এক বার নয়। বহু বার ঘটেছে। খারাপ ফল হলে পাড়ার মাসিমা, কাকিমারা বাড়ির নোংরা আমাদের গায়েও ফেলেছেন। পাড়ার গুরুজনদের কাছে বকুনিও খেয়েছি। তবে আধুনিক যুগের ফুটবলাররা সেই পরিস্থিতির সামনে পড়েননি। তাই ওঁদের মধ্যে আবেগ অনেক কম। এটাই কিন্তু আমার শহরের একটা বড় বদল।

Advertisement