কলকাতার নগর জীবনের কথা বলতে গেলে দুটো বদল আমার বেশ চোখে পড়েছে। প্রথমটা বাঙালির আতিথেয়তা, যেটা আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া। এবং দ্বিতীয় ব্যাপার হল, এই অতিমাত্রায় আতিথেয়তা দেখাতে গিয়ে নিজেদের হেয় প্রতিপন্ন করা। আমাদের ছোটবেলায় ভিন্ রাজ্য থেকে প্রচুর মানুষকে এখানে আসতে দেখতাম। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, অসম, ওড়িশা এমনকি দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্য থেকেও সর্বস্তরের মানুষ এখানে এসেছেন। তাঁদের অতিমাত্রায় এখানে আসার ফলে আমরা কোথায় যেন নিজেদের সংস্কৃতিকে হারিয়ে ফেলেছি। ভিন রাজ্যের মানুষরা এখানে যে ভাবে সমাদর পেয়ে থাকেন, আমরা কিন্তু অন্যত্র গেলে সেই সম্মান কিংবা আতিথেয়তা পাই না। এটা একটা বিরাট বড় সমস্যা। কিন্তু সেটা এখন আর বদলে ফেলার উপায় নেই। বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে।
অন্যদের বড় করে দেখানো আমাদের বরাবরের স্বভাব। ব্যাপারটা ময়দানের উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। আমাদের সময় প্রচুর ভাল মানের বাঙালি ফুটবলার ছিলেন। কিন্তু সেই সময়ের কথা উঠলেই আমরা ভিন রাজ্যের ফুটবলারদের নিয়ে বেশি আলোচনা করি। স্ট্রাইকারদের নিয়ে আলোচনা হলেই প্রথমে মহম্মদ হাবিব, মহম্মদ আকবরকে নিয়ে কথা হয়। যদিও আমাদের কাছে কিন্তু পরিমল দে, সুভাষ ভৌমিক, প্রদীপ দত্ত, অশোক চট্টোপাধ্যায়ের মতো খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু তাঁদের নিয়ে বেশি লেখালেখি হয় না। মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, সুরজিৎ সেনগুপ্তের মতো উইঙ্গার থাকলেও ময়দানে উলগা নাথনকে নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। আমি কাউকে খাটো করছি না। কিন্তু বাঙালিদের প্রতি এই বৈষম্য মানতে আমার অসুবিধা হয়।